Sunday, July 13, 2025

সুষমাজি ছিলেন সংস্কৃত ভাষার নব জাগরণেরও পথিকৃৎ

Date:

Share post:

আমার সংস্কৃত ভাষাজ্ঞান শূন্য। সুযোগ, পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং পরামর্শ, ছাত্রাবস্থায় এর একটিও না থাকার কারনেই এই ভাষার ত্রিসীমানায় ঢুকতে পারিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে বুঝেছি সংস্কৃত ভাষাচর্চা গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান এবং প্রয়োজনীয়। শুধুমাত্র সংস্কৃত ভাষায় লেখা গ্রন্থ পাঠের জন্য নয়, প্রাচীন ভারতের সাহিত্য,সংস্কৃতি, ইতিহাস জানার জন্যও নয়, বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্যও সংস্কৃত শিক্ষা মূল্যবান।এর সহজ কারণ, সংস্কৃত ভাষা বহু ভারতীয় ভাষার জননী। জননীকে ত্যাগ করার ফল কখনই শুভ হয় না, এক্ষেত্রেও হয়নি।

পেশার জগতে এসে বুঝেছি, সামগ্রিক ভাবে একমাত্র সংস্কৃত ভাষাজ্ঞানই বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে পারে। পাণিনি তাই আজও প্রাসঙ্গিক। অথচ বঙ্গভূমে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর-তম হয়েছে সংস্কৃত ভাষাচর্চা। এই ভাষাকে স্রেফ ধর্মশাস্ত্র এবং পূজাপাঠের ভাষা হিসাবে ধরে নেওয়ার মতো অবোধ, অশিক্ষিত ধারণা আমাদের গ্রাস করেছে। সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে আমাদের একমাত্র প্রচলিত যোগসূত্র, পুজো-অর্চনার সময় পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ। এই ভাষা সেভাবে না জানলেও কিছুটা হলেও বুঝতে পারি পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অশুদ্ধ, আছে শ্লোকগত বিভ্রান্তিও। রাজ্যের তথাকথিত প্রগতিবাদী বিদ্বৎসমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে নিরুৎসাহ। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একজন উৎসাহী মানুষ আছেন। কিন্তু একমাত্র সংস্কৃত ভাষাবিদ হওয়ার ‘অপরাধ’-এ তাঁরা সেভাবে আলোকিত হননি। সংস্কৃত ভাষার প্রতি বাঙালির এই বিরাগ আত্মঘাতী। এই বিরাগের জেরে এবং বাম আমলের পণ্ডিতদের শিক্ষানীতির ঠেলায় ইংরেজির পাশাপাশি সংস্কৃত চর্চার কফিনেও শক্তপোক্ত পেরেক পুঁতে দেওয়া হলো। আমার ধারনা, এর ফলে বাংলা শিক্ষাও অতলে তলিয়েছে।
কলকাতার এক বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের সংস্কৃত শিক্ষক তথা বাংলা পত্র-পত্রিকার নিয়মিত লেখক একবার আমাকে বলেছিলেন, “সংস্কৃত ভাষার অনুশীলন শুধুই ব্যাকরণ বা বানান শিক্ষায় নয়, পরিভাষার নির্মাণেও বাংলা ভাষাকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু সে ধারা প্রায় অবলুপ্ত”। তিনি বলেছিলেন,
“ভূগোল, রসায়ন, গণিত, দর্শন-ইত্যাদি বিষয়ে বাংলা পরিভাষা একান্তই আবশ্যিক। একসময়ে সংস্কৃত ভাষা এই পরিভাষা নির্মানে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছিলো। পরিভাষার জগতে বাংলা যে সমৃদ্ধি অর্জন করেছিলো, তার পিছনে সংস্কৃতের অবদান ছিল বিপুল। আসলে এটা মেনে নেওয়াই উচিত, সামগ্রিক ভাবে সংস্কৃতের জ্ঞান বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে পারে। কিন্তু প্রগতিবাদী বাঙালি বিদ্বৎসমাজের মরিয়া ‘চেষ্টা’য় সংস্কৃত ভাষা নিদ্রিত- ভাষা হয়ে গেলো। বাংলা ভাষাও এক জায়গায় এসে থমকে গেলো।

এততো কথা বলার কারন #অকালপ্রয়াতসুষমাস্বরাজের একটি ভিডিও-ক্লিপ। ওনার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। সুষমাজি একজন প্রকৃত সুবক্তা যাঁর কথা সকলের মনে প্রভাব ফেলতো। একজন মন্ত্রী, যাঁর সঙ্গে সহজেই সাক্ষাৎ করা যেতো। একজন রাজনীতিবিদ যিনি অনেক বিষয়ের পথিকৃৎ। এবং একজন ‘সুপারমম’, যিনি জগত জুড়ে থাকা ‘ছেলেমেয়ে’-দের জন্য যে কোনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে প্রস্তুত ছিলেন। ওনার বাগবৈদগ্ধ্য, বাগবিন্যাস জগতখ্যাত। কিন্তু সুষমাজি যে সংস্কৃত ভাষার নব জাগরণেরও পথিকৃৎ, এতখানি সত্যি জানতাম না।
কিছুক্ষণ আগে এক সহকর্মী পাঠিয়েছে এই ভিডিও-টি। বার বার শুনলাম। তারপর থেকেই ভাবছি, দয়া করে কেউ অন্য অর্থ করবেন না, সংস্কৃত ভাষার প্রতি এই অনুরাগ যার, তিনি রাজনীতির আঙ্গিনায় পা না রাখলেও গোটা দেশ আলোকিত করতে পারতেন শুধুই সংস্কৃত-র মতো ‘নিদ্রিত- ভাষা’-কে জাগ্রত-ভাষার সঙ্গে একাসনে বসানোর ব্রতকে সঙ্গী করে।

spot_img

Related articles

চলতি সপ্তাহে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ঘূর্ণাবর্ত তৈরির সম্ভাবনা! রাজ্যজুড়ে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা 

উত্তরে টানা বৃষ্টি আর দক্ষিণে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তির মাঝে এবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণাবর্তের (Cyclonic Formation) আশঙ্কা আবহবিদদের। হাওয়া অফিস...

তামিলনাড়ুর তিরুভাল্লুর স্টেশনের কাছে ট্রেনে ভয়াবহ আগুন, লাইনচ্যুত তিনটি বগি!

শনিবার সাতসকালে পণ্যবাহী ট্রেনে করে অপরিশোধিত তেল নিয়ে যাওয়ার সময় তামিলনাড়ুর তিরুভাল্লুর (Thiruvallur) স্টেশনের কাছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা (Massive...

যোগ্যতা পরীক্ষায় ফুলমার্কস গগনযানের ইঞ্জিনের, খুশি ISRO 

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার গগনযান মিশনের (Gaganyaan Mission) প্রস্তুতি আরও এক ধাপ এগোল। শনিবার ISRO-র তরফে জানানো হয়েছে...

মস্তিষ্কের শিরা ফেটে রক্তপাত! ৩ মুমূর্ষ রোগীকে বাঁচালো আরজি কর হাসপাতাল

কলকাতার সরকারি হাসপাতালে নিউরো বিভাগের ডাক্তারদের অসামান্য সাফল্য। 'হেমোরেজিক সিভিএ' (Hemorrhagic stroke) অর্থাৎ মস্তিষ্কের শিরা ফেটে গিয়ে রক্তপাত...