সিবিএসই-র সিলেবাসে এ বার ‘জল সঞ্চয়’

বাঁচাতে হবে জল। অন্তত  দিনে এক লিটার করে। সে বাড়িতেই হোক বা স্কুলে, জল বাঁচানোর নতুন উপায় পড়ুয়াদের বাতলে দিল সিবিএসই বোর্ড। দেশজুড়ে জলসঙ্কট তীব্র। পরে তা আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন পরিবেশবিদরা। ফলে জলের প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবহারের নানা মাপকাঠিই বেঁধে দেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফে। মিটিং, মিছিল, মাইকিং, পোস্টার পড়েছে রাজ্যে রাজ্যে, জেলায় জেলায়। জল বাঁচাও অভিযানে স্কুল পড়ুয়াদেরও সামিল করতে এ বার এগিয়ে এল সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)।
2020 সালের মধ্যে জলের অভাবে পড়তে চলেছেন অন্তত 40 কোটি ভারতীয়। দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ ভারতবাসীর। চেন্নাইয়ে যে অস্বাভাবিক জল সঙ্কট দেখা গিয়েছে, সেটাই বিপদসঙ্কেত আগামী দিনের। জল সংরক্ষণে তাই আসরে নেমেছে গোটা দেশই। হাতে হাত মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘জল শক্তি অভিযান’কে সার্থক করতে এগিয়ে এসেছে মুম্বই থেকে মুর্শিদাবাদ। উদ্যোগের খামতি নেই জেলা, ব্লক, এমনকি পঞ্চায়েত স্তরেও।
সিবিএসই বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ‘জল শক্তি অভিযান’-এর কর্মসূচীকেই বোর্ডের অধীনস্থ বিভিন্ন স্কুলে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সচেতনতার বীজ গেঁথে দেওয়া হবে প্রাইমারি থেকে সেকেন্ডারি স্তরে। কাজ খুব সামান্যই। দিনে মাত্র এক লিটার জল সঞ্চয়। সে স্কুলে হোক বাড়িতে, অথবা অন্য কোনও জায়গায়। অনাবশ্যক জলের ব্যবহার বন্ধ করার উপায় বলে দেবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
নৈনিতালের একটি স্কুলে জল শক্তি অভিযানের কর্মসূচী
সিবিএসই চেয়্যারপার্সন অনীতা কারওয়াল বলেছেন, “ছাত্রছাত্রীরা ঠিক মতো কর্মসূচী মেনে চলছে কি না সেটা দেখবে ইকো ক্লাব। তারাও পড়ুয়াদের উৎসাহ দেবে জল বাঁচানোর অভিযানে একজোট হয়ে কাজ করার। পড়াশোনার পাশাপাশি, একস্ট্রা কারিকুলামের একটা ভাগ হবে এই জল-সঞ্চয়।” তাঁর কথায়, “পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা ভাগ নেবে এই জল-সঞ্চয় কর্মসূচীতে। আমাদের আশা আগামী তিন বছরের মধ্যে সিবিএসই বোর্ডের সব স্কুলই জল-সংরক্ষণে নতুন নজির তৈরি করবে।”

উষ্ণায়ণকে হেলাফেলা করলে তার মূল্য চোকাতে হবে প্রাণ দিয়ে, সাবধানবাণী শুনিয়েছিলেন পরিবেশবিদরা। সেই দিনই আগত প্রায়। গবেষকেরা বলছেন, 2050 সালের মধ্যে পৃথিবীর 50 শতাংশ মানুষ এই সঙ্কটের সম্মুখীন হবে। তার মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবে এশিয়া আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলি। সমীক্ষা বলছে, এখনই ভারতে ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণ মাত্র চার শতাংশ।
মাস খানেক আগে তামিলনাড়ুর চেন্নাই শহরে শুরু হয়েছে পানীয় জলের হাহাকার।পাশের রাজ্য কেরল থেকে গ্যালন গ্যালন জল পাঠিয়েও সমাধান হচ্ছে না সেই দুর্যোগের। রাজস্থানে মাত্র কয়েক লিটার জলের জন্য রোদের বুক চিড়ে মাইলের পর মাইল পথ পার হতে রাজস্থানের মহিলাদের। চারটি প্রধান জলাধারই শুকিয়ে গেছে চেন্নাইয়ে। সরকারি জলের ট্যাঙ্ক থেকে একটু জল পাওয়ার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষ। জলের অভাবে বন্ধ হয়েছে স্কুল, কলেজ এবং রেস্তোরাঁগুলিও। মেট্রোতেও বন্ধ করা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র।  পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, দেশের অন্তত 21টি শহরের পানীয় জলের যোগান শূন্য হতে চলেছে। প্রত্যক্ষ ভাবে যার প্রভাব পড়বে প্রায় 10 কোটি মানুষের উপর। কৃষিপ্রধান ভারতে চাষের জন্যই ব্যবহৃত হয় প্রায় 80 শতাংশ জল। দেশ জুড়ে তীব্র জল সঙ্কটের প্রভাব ইতিমধ্যেই প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে চাষাবাদে। আগামী দিনে এর প্রভাব গুরুতর হবে, ঘাটতি দেখা দেবে খাদ্যের জোগানেও।

জল সংরক্ষণের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি এই ‘জল শক্তি অভিযান।’
প্রধানমন্ত্রীর এই জল-বাঁচাও অভিযানে এগিয়ে এসেছেন নানা রাজ্যের গবেষক, ভূতাত্ত্বিক, বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদরা। ভূগর্ভস্থ জলস্তর ধরে রাখার জন্য ইতিমধ্যেই জলের ভূ-তাত্ত্বিক ম্যাপিং এবং কমিউনিটি পার্টিসিপেশন বা পার্টিসিপেটরি গ্রাউন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণের কয়েকটি জায়গায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বসানো হয়েছে ‘ওয়াটার এটিএম’।  সেই এটিএমের থেকে পরিবার পিছু রোজ 20 লিটার জল দেওয়া হচ্ছে। তাতে উপকৃত হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার।
ছোট ছোট স্তরে জল সঞ্চয়ের চেষ্টা চালানো হচ্ছে নানা রাজ্যে। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে স্কুল, কলেজ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। তারই একটি অংশ হিসেবে এই নয়া উদ্যোগ চালু করেছে সিবিএসই বোর্ড।

Previous articleআনন্দসন্ধের আনন্দ সুন্দরবনের গ্রামে
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ