সমাজকে এক নতুন বার্তা দেওয়ার ছবি ‘গোত্র’

মুক্তিদেবী হঠাৎ একদিন তাঁর কেয়ারটেকার তারকের ঘরে ঢুকে দেখেন, সে নামাজ পড়ছেন। আদতে তিনি তারক নন, তাঁর আসল পরিচয় তারেক আলি সেটা তিনি সেদিন জানতে পারেন।

কিন্তু তিনি জানতেন তাঁর কেয়ারটেকার একজন বাঙালি যিনি বাড়ির সব কাজ জানার পাশাপাশি মুক্তিদেবীর বাড়ির রাধা কৃষ্ণকেও খুব সযত্নে পুজো করেছিলেন। এটাই নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘গোত্র’ ছবির ক্লাইম্যাক্স।

পরিচালকদ্বয় এই ছবিতে হিন্দু মা এবং মুসলমান ছেলের ভালোবাসার কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। যেই সময় দাঁড়িয়ে আমরা প্রায়শই দেখতে পাই হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা, জাতপাত, একে অপরের প্রতি হিংসা এই ছবি অনেকটাই ভুল প্রমান করবে। অন্যদিকে, আমরা প্রায়ই দেখে থাকি শহরে বৃদ্ধ মাকে বাড়িতে একা রেখে ছেলে বিদেশে থাকেন কর্মসূত্রে, এই ছবিতেও একই দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবিতে মুক্তিদেবী কলকাতা একা থাকেন, তাঁর ছেলে অনির্বাণ বিদেশে থাকেন কর্মসূত্রে। আর একটা কথা আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো, মুক্তিদেবী কলকাতার যে বিশাল বাড়িতে থাকেন তাঁর নাম গোবিন্দধাম। তিনি এই বিশাল বাড়িটি একা সামলানোর পাশাপাশি রাধা-গোবিন্দর দায়িত্বভারও খুব ভালো ভাবে সামলাচ্ছেন। তবে মুক্তিদেবীকে দেখাশোনার জন্য শুধু রয়েছেন ঝুমা ও অন্যান্য কাজের লোকেরা। কিন্তু মুক্তিদেবীকে দেখাশোনার জন্য ঝুমা থাকলেও অনির্বাণের চিন্তা না মেটায় তিনি 9 বছর জেল ফেরত তারেক আলিকে কেয়ারটেকার হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। যার কথা আপনাদের আগেই জানিয়েছি। তারেক মুসলমান হওয়ার পাশাপাশি মুক্তি দেবীরসাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও কীভাবে তাঁর ছেলে হয়ে উঠবে সেই মনুষ্যত্ব এবং মানবিকতাই বারবার এই ছবিতে ধরা পরবে। অন্যদিকে প্রোমোটার শকুন বাপির নিত্যদিনের উৎপাত এই সমস্ত কিছুই যত ‘গোত্র’ ছবি এগোবে ততোই সবার সামনে পরিষ্কার হবে।

এই ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে অবশ্যই নাড়া দেবে মুক্তি দেবীর ভূমিকায় অনুসূয়া মজুমদারের অভিনয়। অন্যদিকে প্রথমবার জুটি বেঁধে সফল মানালি – নাইজেল। এরা ছাড়াও যারা অভিনয় করেছেন এই ছবিতে সন্তু মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, বাদশা মৈত্র, খরাজ মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, সাহেব চট্টোপাধ্যায় প্রত্যেকেই সফল। অন্যদিকে এই ছবির মিউজিকও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রঙ্গবতী গানটা বেরোনোর পর থেকে সকলেই
খুবই ভালোবেসেছেন। আবার শ্রেয়া ঘোষালের গাওয়া ‘বৈষ্ণব জন তো’ গানটাও অনেকে আপন করে নিয়েছেন।

23 আগস্ট জন্মাষ্টমীতে মুক্তি পায় নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এবং উইন্ডোজ প্রোডাকশন প্রযোজিত ছবি ‘গোত্র’। পরিচালকদ্বয় এখনকার সমাজে যা পরিস্থিতি যেমন, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, একে অপরের বিরুদ্ধে হিংসা, কারো সাহায্যে এগিয়ে না আসা, প্রোমোটারদের জোর-জুলুম এই সব কিছুই তুলে ধরেছেন। শেষে বলতেই হয়, নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আবারও প্রমাণ করলেন তাদের ছবি কতটা প্রাসঙ্গিক। কারো কাছের মানুষ হতে গেলে কোন ধর্ম লাগে না, কোন ‘গোত্র’ লাগেনা সেটাই প্রমাণ করবে এই ছবি।

Previous articleহুগলীতে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
Next articleপলিটিক্যাল টুরিজিম: দিলীপ- দেবশ্রী যোগাযোগ নিয়ে কটাক্ষ শোভনের!