ভগবত-মাদানি বেনজির বৈঠকে আলোড়ন জাতীয় রাজনীতিতে কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

কট্টর মুসলিম বিরোধী তকমা RSS এবার গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। ঘুরপথে মুসলিমদের কাছাকাছি আসার চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে RSS দেশজুড়ে বার্তা দিতে চাইছে মুসলিমদের তারা হিন্দুদের থেকে আলাদা চোখে দেখে না। শুধু চাওয়াই নয়, এ ব্যাপারে কাজ শুরুও করে দিয়েছেন সরসংঘচালক বা RSS-প্রধান মোহন ভগবত। সঙ্ঘের এই পদক্ষেপ যথাসম্ভব গোপন রাখার চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। জাতীয়স্তরের এক ইংরাজি সংবাদমাধ্যমে ভাগবতের এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই প্রকাশ পাওয়ায় রীতিমতো শোরগোল পড়েছে চারধারে। এবং একইসঙ্গে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ সঙ্ঘপ্রধানের এই উদ্যোগকে ঠিকভাবে নিচ্ছে না বলেও RSS-এর অন্দরে খরব পৌঁছে গিয়েছে।

বৃহত্তম হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ’ বা RSS এবং দেশের প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন ‘জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ’ দিন কয়েক আগে মুখোমুখি বসেছিলো। বৈঠকের গুরুত্ব শতগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে একটাই কারনে, এই আলোচনায় বসেছিলেন RSS-প্রধান মোহন ভগবত এবং জমিয়তের প্রধান মৌলনা সঈদ আর্শাদ মাদানি। দুই শীর্ষ নেতার এই বেনজির বৈঠকের কথা জানাজানি হওয়ার পরই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। বৈঠকের উদ্যোগ RSS-এর নেওয়া হলেও এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য, পরস্পরের হাত ধরতে চায় তারা। সর্বস্তরে চমক তৈরি করে কেন এই বৈঠক? কারন হিসেবে বলা হয়েছে, পারস্পরিক সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতি স্থাপনের উদ্দেশ্যেই কাছাকাছি আসতে চাইছে দুই সংগঠন। ধর্ম নিয়ে দেশজুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। সেই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তা বজায় রাখার পদ্ধতি নিয়ে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন-কাশ্মীর ইস্যুতে লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভ পাকিস্তানিদের

এ ধরনের বৈঠক যে RSS-এর বিচ্ছিন্ন কোনও ভাবনার ফসল নয়, তা স্পষ্ট হয়েছে অন্য এক কারনে। দুই সংগঠনের মধ্যে সংযোগ এবং সমন্বয় স্থাপনের যাবতীয় সুপ্রিম দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে RSS-এর গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী তথা বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক রাম লালকে। রাম লালের ওপর RSS এই দায়িত্ব দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মন জয় করার কাজকে এই মুহূর্তে বিজেপি বা RSS কতখানি অগ্রাধিকার দিয়েছে। জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে মাদানিকে আশ্বস্ত করে ভাগবত বলেছেন, “এদেশে মুসলিমদের ভয়ের কোনও কারণই নেই। RSS মুসলিম সম্প্রদায়কে হিন্দুদের থেকে আলাদা চোখে দেখে না বলে জোরালো দাবি করেন ভাগবত।

ওদিকে মুসলিম সম্প্রদায় এই মুহূর্তে এ দেশে কেমন আছে, শাসক দল সম্পর্কে মুসলিমদের ধারনা, ইত্যাদি একে একে বৈঠকে তুলে ধরেন জমিয়তে-প্রধান আর্শাদ মাদানি। মূলত তিনটে বিষয়ে জোর দেন মাদানি। ভাগবতকে তিনি বলেন, গণপিটুনি, NRC থেকে মুসলিমদের বাদ পড়া এবং দেশজুড়ে অন্য সম্প্রদায়ের জীবনযাপনে একটা সাধারণ ভয়ের পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথাই একে একে তুলে ধরেন। তবে এই বৈঠকে অযোধ্যার রামমন্দির ইস্যু এবং জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দু’ জনের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। একইসঙ্গে মাদানি স্পষ্টভাবেই ভাগবতকে জানান, সাভারকর এবং গোলওয়ালকরের আদর্শের সঙ্গে মুসলিমরা কখনই সহমত পোষণ করেন না।

সূত্রের খবর,এর উত্তরে মাদানিকে ভগবত জানান, “পুরোনো ইতিহাস দূরে সরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে সামনের দিকে তাকানোর। RSS যে হিন্দুত্ববাদের তত্ত্ব মেনে চলে, তা হলো হিন্দু এবং মুসলিমদের একসঙ্গে পথ চলা”।
হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের দুই শীর্ষনেতার এই বৈঠক জনমানসে যথেষ্টই প্রবাব বিস্তার করবে বলে দুই শীর্ষ সংগঠনেরই ধারনা।
দেশজুড়ে মাথাচাড়া দেওয়া অস্থির পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দুই সংগঠনের কাছাকাছি আসার এই চেষ্টাকে দুই সম্প্রদায় কতখানি বিশ্বাসযোগ্য মনে করবে, সেটাও দেখার।
প্রসঙ্গত, এ রাজ্যের অন্যতম মন্ত্রী মৌলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের রাজ্য সভাপতি।

আরও পড়ুন-এবার হিন্দি ছবি পরিচালনা করতে চলেছেন পরিচালক অরিন্দম শীল

 

Previous article20 জনের সঙ্গে একাই মারপিট করতে গিয়ে মৃত্যু হতাশাগ্রস্ত যুবকের! কারণটা কী?
Next articleBREAKING: কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের হাত ধরলেন ওমপ্রকাশ