Friday, December 26, 2025

পতিতদার সঙ্গে আর দেখা হল না, কুণাল ঘোষের কলম

Date:

Share post:

কয়েকদিন আগেই ফোন করেছিলেন পতিতদা।

কুণাল ঘোষ

পতিতপাবন হালদার। একটা দরকার আছে। যাব। বললাম আসুন।
আজ সকালে শুনলাম পতিতদা মারা গেছেন।

পতিতপাবন হালদার। মাওবাদী মামলায় বন্দি। দীর্ঘ ক’বছর কারাবাসের পর এই সবে দুতিনমাস বেকসুর খালাস। মুক্তি। বাড়ি। এবং আজ চিরমুক্তি।

পতিতদা একসময় মাওবাদী সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন। ঠিক যেন মাস্টারমশাই। টাক। চশমা। মিশুকে। আন্তরিক। বয়স ষাটের বেশিই হবে।

পতিতদার সঙ্গে আমার আলাপ প্রেসিডেন্সি জেলে। পয়লা বাইশ সেল ওয়ার্ডে। পতিতদা ওয়ার্ডের রাইটার। অর্থাৎ ক্লাসের মনিটর টাইপ। মেট ছাড়াও রাইটার গুরুত্বপূর্ণ। “গুণতি” করার সময় কর্মীদের সঙ্গে থাকা থেকে শুরু। কবে কার কোর্ট। কে কোথায় গেল। হিসেবরক্ষক !!

আমার দুটো সেল পরে পতিতদা। প্রায় প্রথম থেকেই যাঁদের সঙ্গে বেশি ভাব, পতিততদা অন্যতম। ওঁদের রাজনীতি আলাদা; আমার মামলা আলাদা; তবু, অভিভাবকের মত। কাগজ পড়তে দেওয়া, অসুস্থ হলে খোঁজ, মাঝেমধ্যে জেলকর্তাদের দমনপীড়নমূলক নিষেধাজ্ঞায় আমার সঙ্গে বাক্যালাপে বারণ সত্ত্বেও অনায়াসে আড্ডা মারা, পতিতদা অনবদ্য। কত গল্প শুনতাম ওঁদের। আবার জেলের অনিয়মে দেখেছি এই আপাতনরম মানুষটার রাগ।

আমি যখন তুমুল জ্বর বা অন্য সমস্যায় জেল হাসপাতালে, তখন পতিতদা দেখতে যেতেন, কাগজ, বই দিতেন। মনে হত বাড়ির লোক এসেছে। সঙ্গে মাঝেমধ্যেই থাকত অর্ণব।

পতিতদার সঙ্গে সম্পর্কটা খুবই ভালো হয়ে গেছিল। জেলের মধ্যে এমন দুতিনজন অভিভাবক পাওয়া কম কথা নয় ! ঘুমের ওষুধ কেন্দ্রিক ঘটনার পর দেখেছি আমাকে নিয়ে পতিতদার উদ্বেগ।

জেল থেকে বেরোলেন পতিতদা। এই কমাস আগে। হুগলিতে ভায়ের বাড়ি গেলেন। আমি তো যোগাযোগের নম্বর জানতাম না। তবে, মন বলছিল, অপেক্ষা করতাম, পতিতদা ঠিক আমাকে ফোন করবেন।

এবং সেটা মিলল। ফোন এল। কথা হল। বললেন, ঠিকানা দিচ্ছি। তোমার লেখা ‘বন্দির ডায়েরি’ বইটা পাঠাও। সহকর্মী সোমনাথকে বললাম। ও বই পাঠালো।

তারপর কদিন আগে আবার ফোন। বললেন, দমদমে আছি। এক আত্মীয়ের ব্যাপারে দরকার। দেখা করব। বললাম আসুন।

আজ সকালের খবর, পতিতদা মারা গেছেন।

এই যে দীর্ঘকাল কারাবাস, হয়রানি, বন্দিজীবন, অনিয়ম, শরীর ও মন ধ্বংস; তারপর বেকসুর খালাসেও অর্থহীন মুক্তি, এর বিচার কে করবে?

spot_img

Related articles

জনসমুদ্র পার্ক স্ট্রিটে: বড়দিনের আলোয় শহর মাতোয়ারা, রাত বাড়তেই ভিড়ের ঢল

কনকনে ঠান্ডাকে সঙ্গী করে বড়দিনের আনন্দে মেতে উঠেছে গোটা বাংলা। জেলা থেকে শহর—সর্বত্রই উৎসবের আমেজ, তবে প্রতি বছরের...

স্পষ্টতা চেয়ে ফেডারেশনকে চিঠি ক্লাব জোটের, সূচি নিয়ে ক্ষোভ ইস্টবেঙ্গলের

সাফ ক্লাব কাপ জয়ী মহিলা দলের ফুটবলার, কোচ অ্যান্টনি আ্যন্ড্রিউজ এবং সাপোর্টিং স্টাফদের  সংবর্ধিত করল   ইস্টবেঙ্গল ক্লাব(East Bengal)...

বেঙ্গল সুপার লিগ: উত্তর ২৪ পরগনাকে হারিয়ে জয়ে ফিরল ব্যারেটোর দল

জমজমাট  শ্রাচি আয়োজিত বেঙ্গল সুপার লিগ(Bengal Super League)। বড়দিনের দুপুরেও ছিল লিগের ম্যাচ। কল্যাণী স্টেডিয়ামে হাওড়া হুগলি ওয়ারিওর্সের(Howrah-Hooghly...

কেন্দ্রের প্রকল্পকে তোয়াক্কা নয়: বাংলা জুড়ে সবুজ বিল্পব

বাংলায় বিজেপির নেতারা যখন কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাংলায় লাগু না করার জন্য প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন, তখন পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে...