চন্দ্রযান-2: একনজরে জেনে নিন কয়েকটি জরুরি তথ্য

ভারতের চন্দ্রযান-2 এর মোট তিনটি অংশ। অরবিটার বা কক্ষযান, ল্যান্ডার বিক্রম ( প্রয়াত মহাকাশবিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের নামে ) এবং রোভার বা যন্ত্রগাড়ি প্রজ্ঞান ( সংস্কৃতে জ্ঞান বোঝাতে নামকরণ )। গত 2 সেপ্টেম্বর অরবিটার বা কক্ষযান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিক্রম। ল্যান্ডার বিক্রমের পেটের মধ্যে রয়েছে রোভার প্রজ্ঞান। আজ রাত দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে বিক্রম। তার ঘণ্টা কয়েক পরে ল্যান্ডার বিক্রম থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান।

আজ রাত 1টা 10 মিনিটের পর থেকে চন্দ্রযান-2 এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ শুরু করবে। রাত 1 টা 40 মিনিট থেকে 1টা 55 মিনিটের মধ্যে চাঁদে নামার কথা ল্যান্ডার বিক্রমের । এই শেষ 15 মিনিটই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার গতিবেগ থেকে নামার সময় ধীরে ধীরে ল্যান্ডারের গতিবেগ প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। সেজন্য হিসাব করে সেকেন্ডে সেকেন্ডে ব্রেক কষে গতিবেগ কমাতে হবে বিক্রমকে। চাঁদের মাটিতে প্রবল গতিবেগ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়লেই সর্বনাশ। ভেঙে যাবে রোভার সমেত ল্যান্ডার। নামতে হবে পাখির পালকের মত, বিজ্ঞানীরা যাকে বলছেন ‘সফট ল্যান্ডিং’। আপাতত ল্যান্ডার বিক্রমের মসৃণ ল্যান্ডিং-এর অপেক্ষায় আছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। শেষ 15 মিনিটেই এখন পাখির চোখ সবার।

চাঁদের মাটিতে বিক্রমের সফট ল্যান্ডিং-এর কয়েক ঘণ্টা পর তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। পরবর্তী 14 দিন চাঁদ থেকে ছবি তোলা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ রোবোটিক সিস্টেমের মাধ্যমে করবে রোভার প্রজ্ঞান। আর পৃথিবীতে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করবেন ইসরোর মহাকাশবিজ্ঞানীরা।

পৃথিবীর চেয়ে চাঁদে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম। তা পরিমাপ করেই ল্যান্ডিং-এর শেষ 15 মিনিটের গতিবেগ নিয়ন্ত্রিত হবে।

চাঁদের পৃষ্ঠে ঠিক কোন জায়গাটিতে ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ করবে তাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এবড়ো খেবড়ো বা গর্তবহুল জায়গায় ল্যান্ডার নামলে যন্ত্রের ভারসাম্য ঠিক থাকবে না এবং যান্ত্রিক বিপত্তি হবে। অসমতল জায়গা হলে চন্দ্রযানের সোলার প্যানেলের সর্বত্র সূর্যালোক ঠিক মত না পড়ায় পাওয়ার জেনারেশনে সমস্যা হবে। তাই ল্যান্ডিং-এর জন্য সমতল জায়গা নিজেই বেছে নেবে বিক্রম। নিজের শরীরে বসানো ক্যামেরায় চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলতে তুলতে সে অবতরণের আদর্শ স্থান বেছে নেবে, যাতে তার ছটি চাকাই একই উচ্চতায় অবস্থান করে।

চাঁদে প্রবল ধুলোর ঝড়ের সমস্যা। তাই ল্যান্ডার বিক্রম চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তার ভিতর থেকে রোভার প্রজ্ঞান বেরিয়ে এলে ধূলিকণা যন্ত্রের ভিতরে ঢুকে সব নষ্ট করে দেবে। সেজন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করবে প্রজ্ঞান। ধুলোর ঝড় কমে এলে এবং অবতরণের পর চাঁদে সূর্যালোক পড়লে শনিবার ভোরে বিক্রমের পেট থেকে বেরোবে প্রজ্ঞান।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের পর চাঁদের মাটিতে খনিজ পদার্থ ও জলের সন্ধান করবে রোভার প্রজ্ঞান। ছবি পাঠাবে ইসরোয়। পৃথিবীর 14 দিন মানে চাঁদের একদিন। তখন চাঁদে সূর্যের আলো থাকবে। টানা 14 দিন কৃত্রিম মেধা চালিত রোভার প্রজ্ঞান ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তার মাধ্যমে চাঁদের ছবি ও তথ্য পৃথিবীতে পাঠাবে।

এপর্যন্ত পৃথিবীর কোনও দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান পাঠায়নি। সেদিক থেকে এই অভিযান সফল হলে ভারত ইতিহাস তৈরি করবে। ইসরোর মুকুটে জুড়বে সাফল্যের নতুন পালক।

রোভারের চাকা চন্দ্রপৃষ্ঠে গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকায় লাগানো ইসরো ও অশোকস্তম্ভের ছাপ বসে যাবে চাঁদের মাটিতে।

 

Previous articleসঙ্কটজনক বুদ্ধদেব হাসপাতালে, দেখতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী
Next articleভারতীয় পাসপোর্ট-সহ গ্রেফতার নেপালের  মহিলা