‘থাপ্পড়’ মলিন, শ্রীসন্থ-ভাজ্জি ‘বন্ধুত্ব’ আজ গাঢ়

কালো অতীত, ফেলে আসা অন্ধকার কে-ই বা মনে রাখে! কেনই বা মনে রাখতে হবে!

মাঝে তো এগারোটা বছর কেটেই গিয়েছে। আর অভিমান-অনুযোগ আঁকড়ে বেঁচে থেকে কি লাভ! একটা সময় ‘মেন ইন ব্লু’ জার্সি যাঁদের সম্মানে-অহঙ্কারে ভরিয়ে রেখেছিল, সেই টিম ইন্ডিয়া থেকে আলোকবর্ষ দূরে দু’জনেই। আন্তর্জাতিক বাইশ গজের অলঙ্কারে যাঁদের আর সেজে ওঠা হয় না, দুরন্ত পারফর্ম্যান্সের প্রেক্ষিতে লালমুখো সাংবাদিকরা আর যাঁদের সামনে ক্যামেরা-বুম ধরেন না, সংবাদমাধ্যমের ব্যানার হেডলাইনে আজ যাঁরা ব্রাত্য, তাঁদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব রেখে সত্যি কি আর লাভ!

‘অ্যারোগ্যান্ট’ ফাস্ট বোলিং, বিশ্বকাপজয়, ম্যাচ ফিক্সিং, জেলযাত্রা, ক্রিকেট থেকে নির্বাসন, আবার মুক্তি, বিসিসিআই-এর কড়া চোখ, অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন – সান্তাকুমারণ শ্রীসন্থের উত্থান-পতন সত্যি যে রূপকথার মতোই। অন্যদিকে হরভজন ? সাফল্যের ঝুলিতে প্রাপ্তি অনেক। বাইশ গজের দুনিয়ায় সাফল্য-কৃতিত্ব সোনার আলোয় সাজিয়ে রেখেছে পাঞ্জাব কি পুত্তরকে। কুড়ি-বিশের ক্রিকেটকে ‘আভিজাত্য’ হিসেবে কে-ই বা দেখে! তাই আইপিএল না হয় পাশেই থাক। ভারতীয় স্পিন বোলিং যখনই আলোচনার নিউক্লিয়াস, তখন বেদী-প্রসন্ন-চন্দ্রশেখর-কুম্বলেদের সঙ্গেই কখন যেন ভাজ্জির নাম ভেসে এসে ঋদ্ধ করে আসমুদ্র হিমাচলের ক্রিকেটীয় সত্তা। তবু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কখন কীভাবে যেন অবলীলায় বিদায় জানিয়ে ফেলল হরভজনকে! মুখে হাসি আর বুকে কান্না নিয়েই ভাজ্জি হয়তো মেনে নেন, এটাই তো জীবন।

২০০৮ আইপিএল। শ্রীসন্থের দু’চোখ থেকে গড়ানো জলে ভিজছে গাল। চোখের কোণ লালচে। ক্যাম ওয়ান, ক্যাম টু, ক্যাম থ্রি, ফোর, ফাইভ, সিক্স, সেভেন…… সব লেন্সই যেন ভিন্ন ভিন্ন ‘অ্যাঙ্গল’ থেকে বোঝার চেষ্টায় ব্রতী, কী এমন হল!

ভাজ্জি সপাটে চড় কষিয়েছিলেন শ্রীসন্থকে। তখন শ্রীসন্থ যুবরাজের সঙ্গে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব দলে। অন্যদিকে সচিনের অনুপস্থিতিতে সে ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কত্ব ভাজ্জির কাঁধে। থাপ্পড় মারার সে মুহূর্ত লেন্সবন্দি হয়নি। কিন্তু কেরল-পেসারের কান্না আর পরে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যার নিট রেজাল্ট – সেবার আইপিএল-এর বাকি ম্যাচগুলি আর খেলা হয়নি পাঞ্জাব তনয়ের। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও পাঁচটি ওয়ান ডে-তে হরভজনের পিঠে ‘ব্যানড’ স্টিকার সেঁটে দেয়। পরে ভাজ্জি স্বীকারও করেন, ভুল হয়েছিল তাঁর।

এরপর তো জীবনের কালস্রোতে অনেক অনেক কিছুরই সাক্ষী থেকেছেন দু’জনেই। ওয়াংখেড়েতে 2011 বিশ্বকাপ ফাইনাল নিশ্চয়ই সবার উপরে থাকে। সে বিশ্বকাপ কভারেজের সময়ও সাংবাদিকরা টের পান, শ্রীসন্থ-হরভজন সম্পর্ক মসৃণ হওয়া কোনওদিনই হয়তো সম্ভব নয়। বিশ্বকাপে টিম ম্যানেজমেন্টের রুলবুক মেনে তা যদিও একবারের জন্যও ‘অন ক্যামেরা’ হয়তো বুঝতে দেননি ওঁরা। কিন্তু…. ওই যে একটা ‘কিন্তু’ থেকেই যাচ্ছিল।

জীবনের কঠিনতম দিনগুলো আজ ধীরে ধীরে ভুলছেন শ্রীসন্থ। ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ – আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজ আর এই জেদ বুকে চেপে রাখেন না হরভজনও। চরমতম সত্যি – বয়স তো হচ্ছে। কী আর হবে অভিমান-আক্ষেপের রং মেখে বসে থেকে! ‘ওনাম’ – দক্ষিণ ভারতের অতি জনপ্রিয় উৎসব। মূলত কেরলেই ধুমধাম করে পালিত হয়। কৃষিজমির উর্বর ক্ষমতা বাড়িয়ে ভালো ফসল উৎপন্ন করার প্রার্থনা নিয়েই এই উৎসব। বাড়িঘর ফুলে-আলোয় সাজিয়ে তোলে মানুষ। প্রতি বছর পয়লা থেকে 13 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে ‘ওনাম’।

এই উৎসবের কথা কি শ্রীসন্থের মুখেই কোনওদিন শুনেছিলেন ভাজ্জি ? আজ নিশ্চয়ই কেরলে বসে শ্রীসন্থও বেশ খুশি। সুদূর পাঞ্জাব থেকে ভাজ্জির শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে।

সত্যি, ‘ওনাম’ ফের মিলিয়ে দিল দুই বন্ধুকে।

আরও পড়ুন-মিরাকেল ঘটালেন ফর্মুলা ওয়ানের সম্রাট শ্যুমাখার, ফিরলেন কোমা থেকে

 

Previous articleবামেদের নবান্ন-অভিযান ঘিরে হাওড়া রণক্ষেত্র, পুলিশের লাঠিচার্জের পাল্টা ইটবৃষ্টি
Next articleবিজেপির পুজোলোগো নিয়ে জোর বিতর্ক