উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধুনিক ‘গেছোদাদা’ রাজীব কুমার

সুকুমার রায়ের ‘হ য ব র ল’ মনে আছে। সেখানে সেই বেড়ালকে নিরামিষ একটা প্রশ্ন করা হয়েছিলো, “গেছোদাদা কে? তিনি থাকেন কোথায়? কোথায় গেলে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়?”
পরের অংশ এইরকম:
“বেড়াল খুব জোরে মাথা নেড়ে বলল, “সেটি হচ্ছে না, সে হবার জো নেই।”
আমি বললাম, “কিরকম?”
বেড়াল বলল, “সে কিরকম জানো? মনে কর, তুমি যখন যাবে উলুবেড়ে তার সঙ্গে দেখা করতে, তখন তিনি থাকবেন মতিহারি। যদি মতিহারি যাও, তা হলে শুনবে তিনি আছেন রামকিষ্টপুর। আবার সেখানে গেলে দেখবে তিনি গেছেন কাশিমবাজার। কিছুতেই দেখা হবার জো নেই।” আমি বললাম, “তা হলে তোমরা কি করে দেখা কর?” বেড়াল বলল, “সে অনেক হাঙ্গাম। আগে হিসেব করে দেখতে হবে, দাদা কোথায় কোথায় নেই , তার পর হিসেব করে দেখতে হবে, দাদা, কোথায় কোথায় থাকতে পারে, তার পর দেখতে হবে, দাদা এখন কোথায় আছে। তার পর দেখতে হবে, সেই হিসেব মতো যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছবে, তখন দাদা কোথায় থাকবে। তার পর দেখতে হবে—” আর এগোন নি, এখানেই ছেড়ে দিয়েছেন সুকুমার রায়।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই মুহূর্তে প্রায় আধুনিক ‘গেছোদাদা’ রাজীব কুমার। পরিস্থিতি এমনই, তিনি নিজে যদি ডেরা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের অবস্থান জানান না দেন, CBI-কে ঝোপের চারধারেই ছড়ি ঘোরাতে হবে, কাজের কাজ হওয়ার সম্ভাবনা বড়ই ক্ষীণ।

পুলিশ মহলে চালু কথা, কম্পিউটর বা তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে তিনি নাকি অসম্ভব দক্ষ। বিরোধী নেতা-নেত্রীদের ফোনে আড়িপাতার বিষয়টি সেই বাম আমল থেকেই শিল্পের পর্যায়ে তিনিই না’কি নিয়ে গিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারনা, এ কারনেই দফায় দফায় CBI-কে অবলীলায় পর পর 10 গোল মেরে চলেছেন রাজ্যের ADG-CID রাজীব কুমার। অথচ তাঁকে পেতে কম চেষ্টা CBI করছে না।

গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, CBI-কে বোকা বানাতে দু-দুটি উন্নততর টেকনোলজি ব্যবহার করছেন রাজীব কুমার। CBI যাতে তাঁর খোঁজ না পায় সেজন্য প্রথমত VOIP বা “ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল” প্রযুক্তি এবং একইসঙ্গে CBT বা “কল বাউন্স টেকনোলজি” ব্যবহার করেই চলেছেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিস কমিশনার। ফলে CBI কিছুতেই চূড়ান্তভাবে তাঁর নাগাল পাচ্ছেনা।

তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনেকটাই একমত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরাও। CBI অফিসারদের মতে, এই দুই অত্যাধনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই CBI-কে বার বার বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন রাজীব কুমার।
CBI সূত্রের খবর,রাজীব কুমার এখনও 3টি ফোন ব্যবহার করে চলেছেন। কিন্তু কোনওক্ষেত্রেই কোনও ‘সিম’ ব্যবহার করে ফোন করছেন না। এই 3টি নম্বর ব্যবহার করে ‘VOIP কল’ করছেন।কী এই VOIP ? VOIP-র পুরো কথাটি হলো “ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল”। এর অর্থ, রাজীব কুমার ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফোন করছেন। হোয়াটসঅ্যাপ-কল যেভাবে হয়, এটাও প্রায় তেমনই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফোন করার ক্ষেত্রে সিমের আইপি অ্যাডড্রেস ট্র্যাক করা যায় না। ফলে রাজীব কুমারের সঠিক অবস্থান কোথায়, তা নিশ্চিত করে জানতেই পারছেন না CBI গোয়েন্দারা।

দ্বিতীয়টি, অর্থাৎ CBT বা ‘কল বাউন্স টেকনোলজি’ হলো বাউন্স প্রযুক্তি। গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে বাউন্স টেকনোলজির জুড়ি নেই গোটা দুনিয়ায়। শীর্ষ স্তরের প্রযুক্তি এটি। এই টেকনোলজির মাধ্যমে 9 সেকেন্ড অন্তর অন্তর লোকেশন ‘বাউন্স’ করাচ্ছেন তিনি। অর্থাৎ এই প্রযুক্তি দেখাচ্ছে প্রতি 9 সেকেন্ড অন্তর অন্তর লোকেশন বদলাচ্ছেন রাজীব কুমার। এই মুহূর্তে এক জায়গায় রাজীব কুমারের অবস্থান দেখালেও, ঠিক 9 সেকেন্ড পরই তা বদলে যাচ্ছে। এর ফলে রাজীব কুমারের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে CBI ধোঁয়াশায়। কিছুতেই তাঁর খোঁজ পাচ্ছেন না।
এরপরেও যদি রাজীব কুমারকে ‘গেছোদাদা’ বলা না হয়, অন্যায় হবে।

আরও পড়ুন-‘সুইচড অফ’ ফোন এখন ‘কল ডাইভার্ট’ বলছে! রাজীবের আরও কাছে সিবিআই

Previous articleবিষয় চিন, এবার পুজোয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নতুন বই
Next articleদেবযানীর বাড়িময় পদ্ম ছাপ পতাকা, মেনেও মানছেন না বিজেপি নেতৃত্ব