প্রশ্ন এবং উত্তর

কণাদ দাশগুপ্ত

নোবেল পেতেই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নানা রকম প্রশ্নের সামনে দাঁড় করানোর পবিত্র কর্মযজ্ঞ চলছে। এবং একটি প্রশ্নও অর্থনীতি বা তাঁর গবেষণা সংক্রান্ত নয়। অর্থনীতিতে মেধাহীন বা অর্ধমেধার প্রশ্নকর্তাদের পক্ষে সেটা সম্ভবও নয়। তবুও তাঁদের প্রশ্ন আছে।
প্রশ্নকর্তাদের মধ্যে অনেক কিসিমের লোকজন আছেন। আছেন এক সময়ের বিজেপি নেতা এবং বর্তমানে রাজ্যপাল, তথাগত রায়। ইনি তাঁর ‘বিখ্যাত’ ট্যুইটের মাধ্যমে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দু’টি প্রশ্ন করেছেন অভিজিৎবাবুকে। প্রথম প্রশ্নে তিনি জানতে চেয়েছেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের মধ্যে ‘বিনায়ক’ এলো কীভাবে ? এবং জানতে চেয়েছেন, তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন, কলকাতায় না মহারাষ্ট্রের ধূলে-তে? একজন রাজ্যপাল, একজন নোবেল-প্রাপককে প্রশ্ন করতেই পারেন। তবে তার তো একটা লেভেল থাকবে? প্রশ্নের ধরন দেখে সন্দেহ হয়, ইনি রাজ্যপাল, না’কি পাড়ার পদ্ম সঙ্ঘের সম্পাদক?
আরও বহু বিচিত্র ধরনের প্রশ্ন করা হচ্ছে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এবং কোনওটার সঙ্গেই অভিজিৎবাবুর শিক্ষাগত যোগ্যতা বা বিশ্ব-স্বীকৃতির সম্পর্ক নেই। তবুও সোশ্যাল মিডিয়া আছে, হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন আছে, প্রশ্ন করতে অসুবিধা কোথায়? উদ্বিগ্ন বিশুদ্ধবাদী প্রশ্নকর্তাদের জন্য একটা গল্প…

সৈয়দ মুজতবা আলি। বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের পিএইচডি। সে আমলে সোশ্যাল মিডিয়া বলে কিছু না থাকায় সরাসরিই প্রশ্ন করতে হতো। সেভাবেই তাঁর এক পরিচিতজন একবার সরাসরি সৈয়দ সাহেবকে একটি প্রশ্ন করলেন, “এই যে আপনি সবসময় এতো মদ খান, সবাই তো ছি ছি করে। লোকে আপনাকে দেখে কী শিখবে ?”
আলি সাহেব গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন শুনলেন এবং উত্তরে বললেন, “যারা এসব প্রশ্ন করছে, তাদের বলে দিও, আমি 12টা ভাষাও জানি!”

উত্তর শুনে প্রশ্নকর্তা সেই যে চুপ করলেন, পরে আর কখনও এমন প্রশ্ন ভাবারও সাহস দেখাননি।

না, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে একবারও বলছি না এমন কিছু একটা উত্তর দিতে। প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার প্রশ্নকর্তারা কি আর IAS পরীক্ষার ‘পেপার-সেটার’ হয় না’কি ?

আরও পড়ুন – অভিজিৎ-অমর্ত্যকে প্রেসিডেন্সির তিন সম্মান

Previous articleফৌজি-তৎপরতায় INX-মামলায় চার্জশিট চিদম্বরমকে, রয়েছে আরও 13 নাম
Next articleরাজ্যপাল আচার্য নয়, RSS প্রতিনিধির মতো আচরণ করছেন: যাদবপুরে বিস্ফোরক SFI