IPS সুরজিৎ কেন গ্রেফতার হবেন না, বিস্ফোরক পোস্ট কুণালের

কুণাল ঘোষ

আই পি এস সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে সারদা মামলায় গ্রেফতারের দাবি করে বিস্ফোরক পোস্ট করলেন কুণাল ঘোষ। তাঁর পোস্ট দেখে অনুমান, এক অফিসারের কোনো মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়েই এই পোস্ট করেছেন তিনি। সেই অফিসার কি সুরজিৎবাবুই? স্পষ্ট করে বলেননি কুণাল।
তিনি লিখেছেন:

সারদা ও সুরজিৎ করপুরকায়স্থ
(একজন সাধু সেজে অকারণে একটি জায়গায় আমার প্রতি কটূ মন্তব্য করেছেন। তার জবাবেই এই পোস্ট)

– “আচ্ছা, ঐ অফিসারটি আপনার উপর এত চটে কেন?”
প্রশ্নটা শুনলাম। অফিসারের নাম জানলাম। তারপর খানিকটা হেসেই জবাব দিলাম,” উনি রেগে থাকবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক।”

একটু খুলে বলি।
যেটুকু জানলাম তা এরকম: ক’দিন আগে ইকো পার্কে সরকার আয়োজিত শিল্পপতিদের বিজয়া সম্মিলনীর ফাঁকে এক পুলিশ কর্তা কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে গল্প করছিলেন।
সেই সময় কোনো সূত্রে আমার নাম ওঠে এবং তারপর সেই অফিসার কিছু বিরূপ বিশেষণ প্রয়োগ করেন। তাতে বাকিরা অবাক হন।

সেই সূত্রেই আমার কাছে পরে প্রশ্নটা আসে যে, ঐ অফিসার আমার উপর চটে কেন?

আমি একটি উত্তর দিয়েছি।
সেই উত্তর সর্বসমক্ষে এখন আবার দিচ্ছি।
এক, ঐরকম একটা জায়গায় আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্পর্কে কথা হচ্ছে; তাতে এটা আমার পক্ষে খুবই ভালো যে আমি অতীত বা অপ্রাসঙ্গিক বা মৃত সৈনিক নই। আমি আছি। তাছাড়া এরা সব পিছনে কথা বলার ‘মাল’। ক্ষমতা থাকলে সামনে বলে দেখুক। তখন তো হাত কচলে বলবে, কুণালবাবু ভালো আছেন?

দুই, আমি এক অফিসারের ভূমিকা প্রথমে পুলিশ, তারপর সিবিআইয়ের সামনে এনেছিলাম।

তাঁর নাম সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। ইনি কলকাতার প্রাক্তন নগরপাল, রাজ্যের প্রাক্তন ডিজি, অবসরের পরেও তিনি নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

এই ব্যক্তি যখন রাজ্য পুলিশের আই জি (ল অ্যান্ড অর্ডার) ছিলেন, তখন তিনি সারদার এজেন্ট সম্মেলনে গিয়ে সারদা ও সুদীপ্ত সেনের ঢালাও প্রশংসা করে বক্তৃতা করেছিলেন। এটা কোনো সাধারণ অনুষ্ঠান ছিল না। এটা সারদার নিজস্ব এজেন্টদের সম্মেলন ছিল। এর থেকে সারদা ইমেজ বাড়িয়েছে, এজেন্টরা উৎসাহিত হয়েছেন। কেন গেছিলেন সুরজিৎ? কেন তারপরেও ব্যবস্থা নেন নি?

ওখানে আমি ছিলাম না। তখন ওদের চিনতামও না। বরং পরে এসব শুনে সারদা সম্পর্কে ভালো ধারণাই হয়েছিল। যেখানে সুরজিৎবাবুর মত কর্মরত শীর্ষ অফিসার যান এবং প্রশংসা করেন, সেটা সম্পর্কে খারাপ ভাবার প্রশ্ন থাকে না।

পরে দেখলাম তদন্তে এরা বাদ। অনেক পরে মিডিয়া শাখায় যোগ দেওয়া কুণাল ঘোষকে এমনভাবে নথিপত্রে জড়িয়ে দিল পুলিশ যে সে পুলিশ, সিবিআই, ইডির জালে আটকেই থাকল।

আমি পুলিশকে, কোর্টে, সিবিআইকে বলেছি, কেন সুরজিৎকে গ্রেফতার করা হবে না? কেন তিনি সারদাকে প্রমোট করেছিলেন? তাঁরা এসব করেছিলেন বলেই তো পরে আমাদের মিডিয়াসূত্রে কাজের পরিস্থিতি হয়েছিল। কেন ব্যবস্থা নেন নি সুরজিৎ? আমি সুদীপ্ত সেনকে পাশে নিয়ে ওঁর ভাষণের ছবি, ভিডিও, সব জমা দিয়েছি। আই পি এসদের নিজস্ব লবির কারণে বহু ক্ষেত্রেই বিষয়গুলি এগোয় না। বুঝতে পারি সব। তবু বারবার চাপ রেখেছি। SFIO রিপোর্টে ওঁর বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশ আছে। আমার আবেদনে কোর্টও ওঁর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যতই তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার খেলা চলুক, আমি বারবার পিটিশন চালিয়ে গেছি।

এরপর যদি শুনি আমার নামে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে, সে তো স্বাভাবিক।
এখন আমাকে আবার সকলকে জানাতে হচ্ছে কে কেন চটে আছে !! একতরফা বড় বড় কথা শুনব না।

এদের জন্য আজ আমি বিপদে। বহু মানুষ বিপদে। এদের পাপ ঢাকতে আমাকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। আবার এরাই সাধু সেজে আমার পিছনে নানা কথা বলবে, এতটা সহ্য করার মানসিকতা আমার নেই।

এই যে সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, আমি বলছি আপনি সারদাকে প্রমোট করার কাজে অংশীদার ছিলেন। আমি বলছি আপনার জন্য সারদা ইমেজ বাড়িয়ে বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।
আমি দাবি করছি, আপনাকে গ্রেফতার করা উচিত।
যান, যা পারেন করে নিন।

পুনশ্চ: সারদার এজেন্টদের সামনে সেদিন আপনার ভাষণের ভিডিও “এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদ” ইউ টিউবে থাকবে কিছুক্ষণ পর থেকে। ওখানে সিপিএম বিধায়করাও ছিলেন। আর আপনি কীভাবে সারদা আর সুদীপ্ত সেনের প্রশংসা করেছেন, আরেকবার সবাই দেখুক। সিবিআইর কাছে অনুরোধ, শুধু রাজীবকুমার কেন, ধরুন সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে। কেন এখন দায় এড়াবেন তিনি?

আমি পরিবর্তনের আন্দোলনের একজন পুরনো দিনের কর্মী। ইস্যুভিত্তিক অভিযোগ থাকলেও দলবদলের কথা ভাবি নি কখনও। অন্য দলে নাম লিখিয়ে আবার ফেরার কুরুচিকর নাটকের রেকর্ড আমার নেই। একটা কঠিন পরিস্থিতিতে আছি। কিন্তু তাই বলে কেউ যদি মনে করেন আমাকে অকারণ খোঁচা মেরে নিজেরা সাধু সাজবেন, আমি মরে যাবো, তবু এসব হজম করবো না।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ পুলিশ অফিসারই ফোন ট্যাপিংয়ে যুক্ত!

Previous articleমুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ পুলিশ অফিসারই ফোন ট্যাপিংয়ে যুক্ত!
Next articleদিল্লিতে আজ সোনিয়া- পাওয়ার বৈঠকে মহারাষ্ট্র নিয়ে কথা