পঞ্চসায়রে ‘গণধর্ষণ’ নিয়ে ধন্ধে পুলিশ, রাজ্যকে তোপ জাতীয় মহিলা কমিশনের

যতদিন গড়াচ্ছে, ততই পঞ্চসায়রের ‘গণধর্ষণ’ নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়ছে। হোম থেকে বেরনোর পরে তাঁকে ‘গণধর্ষণ’ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন নির্যাতিতা। তদন্তে নেমে তার কিছুই মেলাতে পারছে না পুলিশ। এদিকে, পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের উদাহরণ টেনে, শুক্রবার রাজ্য প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। তাদের এক প্রতিনিধিদল শুক্রবার দেখা করেন নির্যাতিতার সঙ্গে। পরে তারা লালবাজার গিয়ে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান। তাদের অভিযোগ, ঘটনার এতদিন পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ।

এদিকে তদন্তে নেমে পুলিশ যা তথ্য হাতে পেয়েছে, তার সঙ্গে ‘ধর্ষিতা’র এবং তাঁর দিদির বয়ান মেলানো যাচ্ছে না। তাঁরা দুজনেই বলেছিলেন, সোমবার রাতে হোম থেকে বেরোনোর পরে দুজন যুবক একটি গাড়িতে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁকে ‘গণধর্ষণ’ করা হয়। হোমের সামনে সিসি ক্যামেরা না থাকলেও, এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। সেখানে দেখা গিয়েছে, একটা নয়, সে রাতে দুটো গাড়ি ছিল। ওই মহিলা প্রথম গাড়ি থেকে নেমে দ্বিতীয় একটি সাদা গাড়িকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে, নিজেই উঠেছেন। ফলে তাঁকে জোর করে গাড়িতে তোলা হয়েছে কি না এই নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

নির্যাতিতা জানান, সোনারপুরের কাছে একটি খালপাড়ে তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে নিত্যযাত্রীরা তাঁকে বালিগঞ্জের টিকিট কেটে ট্রেনে তুলে দেন। ট্রেনে বালিগঞ্জ পৌঁছে সেখান থেকে গড়িয়াহাটের এক আত্মীয়ের বাড়ি এবং পরে বেহালায় বোনের বাড়ি যান ওই মহিলা। কিন্তু এখানেও মেলাতে পারছেন না পুলিশ আধিকারিকরা। কারণ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যাচ্ছে, সোনারপুর নয়, নরেন্দ্রপুর গিয়েছিলেন ওই মহিলা। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসে এক কীর্তনের দল। সামঞ্জস্য নেই পোশাকের বিবরণেও। পুলিশের কাছে একটি রক্তমাখা হলুদ নাইটি জমা দিয়েছেন নির্যাতিতা। সেই নাইটি তিনি সেদিন পরেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ফুটেজে সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে ওই রাতে মহিলার পরনে ছিল লাল গাউন ধরনের পোশাক।

মহিলার বয়ানের অসঙ্গতির পাশাপাশি মিল নেই হোম কর্তৃপক্ষের দেওয়া বয়ানেও। কারণ, তারা জানায়, রাত দুটো নাগাদ নোড়া দিয়ে গ্রিলের তালা ভেঙে বেরিয়ে যান ওই মহিলা। কিন্তু ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তদন্তে নেমে দেখেন, তালা ভাঙা হয়নি। তা খোলা হয়েছিল চাবি দিয়েই। আর মাঝরাতে নয়, রাত সাড়ে দশটা থেকে এগোরাটার মধ্যেই বেরিয়েছিলেন ওই মহিলা। তাহলে কেন মিথ্যে বয়ান দিল হোম কর্তৃপক্ষ? যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মাও।

এসবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার মায়ের। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় সহ অন্যান্য সদস্যরা নির্যাতিতার সঙ্গে গিয়ে কথা বলেন। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ধর্ষণ হয়েছে কি না তা এখনই বলা যাবে না। মেডিক্যাল রিপোর্টে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তবে ওই মহিলা যাতে বাড়িতে নিরাপদে থাকেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এইসব টানাপোড়েনের মধ্যেই শুক্রবার জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা নির্যাতিতা সঙ্গে কথা বলেন। পরে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন তাঁরা। তাদের অভিযোগ পার্কস্রিগ ট কাণ্ডেও প্রথমে অভিযুক্তদের ধরা হয়নি। এক্ষেত্রে একই রকম আচরণ করছে পুলিশ। এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে এদিন বিকেলে লালবাজার যান তাঁরা।

Previous articleবিজেপিতে যে আর তাঁরা নেই, কার্যত পরিস্কার করে দিলেন বৈশাখী
Next article২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যে সব ছবি পুরস্কৃত হলো দেখে নিন এক নজরে