সন্ধ্যার মায়াবি ইডেন আইপিএলের উদ্দামতাকেও হারিয়ে দিল অনায়াসেই

গোধূলির গোলাপি ইডেন। এ মায়াবী সন্ধ্যাকে কী শিরোনাম দেবেন? সন্ধ্যার আইপিএল দেখেছেন, সন্ধ্যার ওয়ান ডে দেখেছেন। চিয়ার্স লিডারদের নাচ দেখেছেন, মাইকে উদ্দাম গান শুনেছেন। এসব গোলাপি টেস্টের সন্ধ্যায় ছিল না। কিন্তু যা ছিল, যা দেখলেন ৬৭ হাজারের বেশি দর্শক তাকে বলা যায় এক কথায় স্বপ্নের ভেলায় ভেসে চেনা টেস্ট ম্যাচ অচেনা রঙে ধরা দিল।

ডিনার টাইম শুরু হতেই পিচের পাশে কার্পেট নিয়ে ব্যান্ডের গান। ইডেনে নামল একের পর এক গল্ফের গাড়ি। ভারতের তারকারা। যাদের পরিচিতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। প্রথম গাড়িতে শচীন তেণ্ডুলকর, শেষেরটায় কপিল দেব। মাঝের গাড়িতে হরভজন, কুম্বলে, ভারত-বাংলাদেশের ২০০০-এর টেস্টের খেলোয়াড়রা, ঝুলনরা, সানিয়ারা। ইডেনের গ্যালারির রেলিং জুড়ে তখন ইলেকট্রনিক মশাল। প্রেসবক্স থেকে হাত নাড়ছেন গাভাসকার, লক্ষ্মণরা। কাকে ছেড়ে কাকে দেখবেন? হাততালির ঝড় যেন থামছেই না। আর গ্যালারিতে মোবাইলের আলো জ্বলে উঠতেই তা যেন হাজার মশালকে ম্লান করে দিল, সঙ্গে মেক্সিকান ওয়েভ। আর ক্লাব হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে তখন বাড়ির বড় কর্তার মতো সবটা দেখছেন মহারাজ, বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। মুখে তৃপ্তির হাসি। পিঙ্ক টেস্টকে নিয়ে যে উন্মাদনা তাঁর দৌলতে বিগত দু’সপ্তাহ ধরে তৈরি হয়েছিল শহর জুড়ে, তার থেকেও যেন অভাবনীয় মনোহরণকারী পরিবেশ এনে দিল শুক্রবার সন্ধ্যার ইডেন। কোনও টেস্ট ঘিরে এমন উন্মাদনা গত একশো বছরের ইতিহাসে কেউ দেখেছেন কিনা সে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সঙ্গে আর একটি বিষয় সৌরভের ইডেন তুলে দিয়ে গেল। আইপিএলের উদ্দামতা না এনেও টেস্টকে আইপিএলের মতোই বা তার থেকেও বেশি আকর্ষণীয় করা যায়।

গোলাপি বল। সন্ধ্যার শিশির। ব্যাটসম্যানদের কাঁপুনি। বাংলাদেশের টেল এন্ডাররা যেমন শামি, ঈশান্ত, ঊমেশদের সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেলেন, মনে হল না দেখে খেলছেন। তেমনি সন্ধ্যার ইডেনে গোলাপি বলে মায়াঙ্কও যেন ধাঁধিয়ে গেলেন। কিন্তু এটাই তো ক্রিকেট! কোহলি বৃহস্পতিবার দিন-রাতের টেস্টকে ভবিষ্যত বলতে চাননি। তিনি এখনও মজে টেস্টের সকালের প্রথম এক ঘন্টায়, যখন বোলাররা ব্যাটাররদের ত্রাস। ব্যাট-বলের নাকি সেটাই সেরা লড়াই। কিন্তু দিন-রাতের পিঙ্ক টেস্টও বিরাটের সামনে প্রশ্ন রেখে গেল, টেস্টের সকাল যদি হয় ব্যাট বলের লড়াইয়ের রাজকীয় ক্ষেত্র, তাহলে দিন-রাতের টেস্টের সন্ধ্যাও তার জায়গা নেবে অনায়াসেই। তাহলে এখনও তাকে কেন ব্রাত্য করে দূরে সরিয়ে রাখা! সময়ের সঙ্গে দলের খোলনলচে যদি তিনি বদলে ফেলতে পারেন, তবে টেস্টের ভরা গ্যালারির জন্য এই পরীক্ষাতে বসে সেরার মুকুট পড়ার চ্যালেঞ্জ নিতে কেন তাঁর এত দ্বিধা?

 

Previous articleবাংলাদেশের পারফরমেন্স-এ মন খারাপ হাসিনার
Next articleমহারাষ্ট্রে ‘বিকল্প’ সরকার হচ্ছেই, বিজেপি যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে