Friday, November 14, 2025

এমনও হয় ?

এমনই হয়েছে৷ বৌমা নিজের শরীরের অংশ দিয়ে প্রাণে বাঁচিয়ে দিলেন শ্বশুরকে৷ বেনজির এই ঘটনা নদিয়ার চাপড়ার এলেমনগর গ্রামের৷

অন্য সংসারের মেয়ে তাঁর সংসারে এসে সবাইকে আপন করে নেবে, আর পাঁচটা শ্বশুরের মতো
সম্ভবত এইটুকুই আশা করতেন শ্বশুর সুলতান মল্লিক৷ শ্বশুরের
সেই ‘সামান্য’ আশা-কে একশো মাইল পিছনে ফেলে নিজের শরীরের অংশ দিয়ে শ্বশুরের প্রাণ বাঁচালেন বৌমা জাহানারা৷ এ ঘটনায় এলেমনগর গ্রামে ধন্য ধন্য রব উঠেছে
জাহানারা’র নামে৷ সেটাই তো স্বাভাবিক ৷

সুলতান মল্লিক৷ বছর 55-র সুলতান পেশায় ছিলেন গাড়িচালক। বছর তিনেক আগে জানা যায়, তাঁর যকৃত বা লিভারে সমস্যা আছে৷ টিউমার হয়েছে। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়৷ দীর্ঘ চিকিৎসাতেও কোনও উন্নতি না হওয়ায় সুলতানকে দক্ষিণ ভারতে নিয়ে যান ছেলেরা৷ বড় ছেলে আশিসের কথা, “হায়দরাবাদ, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুর তিন হাসপাতালে যোগাযোগ করি৷ তিন হাসপাতালই জানায়, বাবার লিভারে টিউমার হয়েছে। দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে।” মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তাঁদের৷ প্রথমে সুলতানের তিন ছেলেকে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, বড়ছেলের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করলেও তাঁর ‘ফ্যাটি লিভার’ হওয়ায় সেই লিভার কাজে লাগবে না। তারপর যোগাযোগ করা হয় একাধিক আত্মীয়ের সঙ্গে। কেউ এগিয়ে আসেনি।
তখনই সবাইকে চমকে দিয়ে বাড়ির বড় বউ জাহানারা’র প্রস্তাব, “আমার লিভারে কাজ হবে না? একবার পরীক্ষা করাও৷ যদি মিলে যায়, তাহলে আমিই লিভার দেবো বাবাকে।’’ শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায় সবাই। বলে কী এসব? জাহানারা অনড়৷ ফলে শুরু হয় প্রস্তুতি৷। মিলে যায় ব্লাডগ্রুপ। লিভারও ঠিকঠাক৷ বেঙ্গালুরুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি যে, বৌমা স্বেচ্ছায় শ্বশুরকে লিভার দিতে রাজি হয়েছেন৷ পুলিশকে বলা হয় তদন্ত করতে৷ জেলা পুলিশের রিপোর্ট দেখার পর হাসপাতাল আশ্বস্ত হয়। জাহানারা তাঁর বাপের বাড়ির সকলের সঙ্গেও চিকিৎসকেরা কথা বলার পর বেঙ্গালুরুর ওই হাসপাতাল লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।

জাহানারার আপ্লুত স্বামী আশিস বলেন, ‘‘12 বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে। সন্তানও রয়েছে। কিন্তু এই ঘটনায় ওকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করলাম। সারাজীবন ওর কাছে আমাদের পরিবার কৃতজ্ঞ থাকবে।’’

যাঁকে নিয়ে এতকিছু সেই এইট পাশ গৃহবধূটি কিন্তু শান্ত গলায় বলেছেন, ‘‘বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসারকে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকলে গোটা সংসার আরও সুখে থাকবে। আমি যা করেছি সংসারের ভালোর জন্যই করেছি, ঠিকই করেছি৷”
গত সোমবার টানা 20 ঘণ্টা ধরে হয়েছে অপারেশন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অপারেশন সফল। বেঙ্গালুরুর হাসপাতাল থেকে কান্না ভেজা গলায় সে কথা জানালেন সুলতান৷ বললেন, ‘‘কথায় বলে, বৌমা হল মেয়ের মতো। সেই জন্য তাঁরা শ্বশুরকে ‘বাবা’ বলে। কিন্তু এ বার তো ওর শরীরের অংশ ধার করে আমাদের বাবা-মেয়ের মধ্যে সত্যিকারের রক্তের বন্ধন তৈরি হল। এমন বৌমা লোকে ভাগ্য করে পায়।’’

সুলতান ও জাহানারার এই ব্যতিক্রমী নজির থেকে কি কিছু শিক্ষা নেবে ঘরোয়া বিবাদে দীর্ণ সমাজ ?

Related articles

পাশে প্রথম স্ত্রী! সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্মেন্দ্রর ভিডিয়ো প্রকাশ্যে, গ্রেফতার হাসপাতাল কর্মী

গত এক সপ্তাহ অভিনেতা ধর্মেন্দ্র-র জন্য উদ্বেগে গোটা দেশ। সোমবার ১১ নভেম্বর হঠাৎ তাঁর অসুস্থ হওয়ার খবরে তোলপাড়...

ওটা বিহারের সমীকরণ, বাংলায় জিতবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন: বিজেপিকে উড়িয়ে জবাব তৃণমূলের

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Assembly Election) এখনও পর্যন্ত ফলে ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে এগিয়ে গিয়েছে NDA। আর এই ফল...

দক্ষিণবঙ্গে শীতের আমেজ চলবে, উষ্ণতা বাড়তে পারে উত্তরে!

পারদ পতনের ট্রেন্ড বজায় রেখে দক্ষিণবঙ্গে (Winter in South Bengal)শীতের আমেজ। শুক্রবার সকালে হিমেল ছোঁয়ায় টুপি সোয়েটার সঙ্গী...

ইডেনে খেলতে এসে ছুটির আবদার! গম্ভীরকে আবেদন কুলদীপের

অবসান ঘটিয়ে ইডেনে প্রথম একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন কুলদীপ যাদব , প্রথম সেশনে একটি উইকেটও তুলে নিয়েছেন। কিন্তু...
Exit mobile version