গোটা দেশ জুড়ে কোলাহল চলছে অহরহ !
কোলাহল তৈরি হয়-
প্রান্তিক মানুষকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য,
তাদের রুটিরুজির লড়াই থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য,
নিজেদের মধ্যে জাতের নামে, ধর্মের নামে লড়িয়ে দেওয়ার জন্য!
বৈষম্য বাড়ে, শোষণ বাড়ে পাল্লা দিয়ে!
একদিকে অত্যাচার, অন্যদিকে প্রান্তিক মানুষের ঐক্য ভেঙে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
এসব বাঁধার প্রাচীর সরিয়েই প্রান্তিক মানুষই বিপ্লব করে।
আর যারা বিপ্লব করে তাদের ঘুম থাকেনা।
তাই ওদের ‘ঘুম নেই’।
আখলাক ঘুমোয়না।
ইন্দ্র ঘুমোয়না।
সোনা ঘুমোয়না।
রাধা নকুল কেষ্ট উদ্ধব
এরা কেউ ঘুমোয়না।
এদের সবাইকে সামলাতে সামলাতে
সূর্য কখন পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়
আর কখন পশ্চিম থেকে পুর্বে
সে হিসেব রাখতে পারেনা কেউ।
কৃষক-শ্রমিকদের সঙ্গে
মালিক পক্ষের লড়াই,
মুনাফার জন্য বানিয়ার
লোপুপ হলুদ চোখ,
আর লাল চোখ নিয়ে শিরদাঁড়া টানটান
মজদুরের রুখে দাঁড়ানো,
খনিতে জল ঢুকে মৃত্যুর মুখে খননকারীরা,
উদাসীন বুর্জোয়া,
ছেঁড়া জামা প্রলেতারিয়েতের আপ্রাণ মুক্তিযুদ্ধ,
লাল তথা বামের স্পষ্ট বক্তব্যে জারিত, শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের
মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা-র কথা বলা
সেইসব উৎপলীয় নাটকগুলো কি
নতুন প্রজন্মের একেবারেই পছন্দের নয়?
উৎপল দত্তের টেক্সট কি
তাঁর সাথে সাথেই বিদায় নিয়েছে?
এসব প্রশ্নের খোঁজে আপনাকে দেখতেই হবে
এবছরের যাদবপুর নাট্যমেলার
দ্বিতীয় দিন,
অর্থাৎ ১৫ ই ডিসেম্বর (রবিবার) সন্ধ্যায়
‘ইচ্ছেমতো’ প্রযোজিত নাটক ‘ঘুম নেই’!
বহরমপুর-কলকাতা সংযোগকারী রাস্তায় পাগলাচণ্ডী নদীর উপরকার ব্রিজটির অবস্থা ভালো নয়।
দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ব্রিজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার।
পাহারায় পুলিশ।
ঝুঁকি নিয়ে পার হতে চাইছেও না ট্রাকের ড্রাইভাররা।
কিন্তু এক ব্যবসায়ীর অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে
যদি তার মালবোঝাই ট্রাক পার না হতে পারে।
তাই সে ঘুষ-টুষ দিয়ে,
ড্রাইভারকে বেশি টাকা দিয়ে
একটা ব্যবস্থা করতে চাইছে।
কিন্তু ব্রিজের কাছেই আছে ড্রাইভারদের এক কলোনি।
আছে ইউনিয়ন।
লাল ঝান্ডার ইউনিয়ন!
সেখানকার নেতা আখলাখ।
সে ওই ড্রাইভারকে বোঝায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মালিকের কাজ করা অর্থহীন। তবুও শেষটায় কলোনিরই এক ড্রাইভার ট্রাককে ব্রিজ পার করে দিতে রাজি হয়,
কারণ তার টাকার খুব প্রয়োজন!
শেষটায় ট্রাক কি সে পার করতে পারে?
নাকি একজোট হওয়া ড্রাইভারদের ‘না’য়ের সামনে মালিক থমকে দাঁড়ায়? সেটা সৌরভ পালধী নির্দেশিত এই ‘ঘুম নেই’ নাটকে উপজীব্য।
আখলাখের ভূমিকাতে আছেন কৌশিক কর।
এমনিতে আখলাখ কলোনিতে নাচে, গায়,
মদ খেয়ে হুল্লোড় করে, গালি দেয়,
কিন্তু পাশাপাশি নানা ব্যাপারে সেই খুব সফলভাবে ‘লিড’ নেয়।
রুখে দাঁড়ানোর একটা আশ্চর্য গুণ তার মধ্যে আছে।
কৌশিকের পাশে দাঁড়িয়ে অপ্রতিম কৃষ্ণেন্দু ভিকি মুদাস্সার সহ অন্যান্যরা এক ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে আপনাদের সকলকে নিয়ে যাবে এমন একটা জগতে, যেখানে এই সমস্ত তরুণদের লড়াইয়ের অংশীদার হয়ে পড়বেন আপনিও।
নাটকে অনেক গান আছে।
সেসবের দায়িত্বে রয়েছেন তরুণ গায়ক দেবদীপ মুখোপাধ্যায়।
‘ঘুম নেই’ নাটকটা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।
আসলে প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য।
লড়াইটা যেখানে ওপরতলার সাথে নিচের তলার,
ওপরতলা থেকে শোষণ যখন নীচে নামে
তখন নীচের তলা যদি চিৎকার করে বলে
“আমাদের বাল ছেঁড়া যায়, রাজায় রাজায় তাল পাকায়…”
সেই কথা শ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই বিচার করতে হয়।
কারন ওদের “ঘুম নেই” ঘাম আছে
আর তাই চোখ এত লাল,
ওস্তাদ ঢেউয়েতে উঠেছে আছড়ালো সওয়াল জবাব,
দুরে দাঁড়িয়ে দেখছে একজন
তারও ঘুম নেই আছে তরোয়াল।”
সৌরভের কথায়- “এই নাটক সকলের ভালোলাগার জন্য নয়। এমন কিছু গালাগাল বা শব্দের ব্যবহার এখানে রয়েছে যার সঙ্গে হয়তো সেভাবে পরিচিত নন শহরবাসী। ফলে ছি ছি করবেন না এমনটা ভাবা উচিত নয়। তবে বাস্তবটা দেখানোর জন্য উৎপলবাবু যা লিখেছিলেন, আমি সেটাই স্টেজে দেখাব। রূঢ় বাস্তব এটাই।
আর যে মানুষগুলোকে নিয়ে নাটকটা তৈরি,
তাঁরা হাজার কষ্টের মধ্যেও
সবসময় আনন্দে থাকতেই ভালোবাসেন।
তবে হ্যাঁ একটা কথাই বলতে পারি নাটকে শুধু খিস্তি-খেউড়ই নেই।
সব শেষে দর্শকদের চোখে জল আসতেও বাধ্য।”
তাই আসুন,
১৫ই ডিসেম্বর,
আমরা সবাই মিলে রবিবারের সন্ধ্যায়
একসাথে মিলিত হই,
আখলাখদের পাশে দাঁড়াই।
এ লড়াই বাঁচার লড়াই,
এ লড়াই জিততে হবে!
সৌরভ, কৌশিক আর
পুরো ‘ইচ্ছেমতো’ টীমের
‘এ আকালেও স্বপ্ন দেখার সাহসকে’ দূরে দাঁড়িয়ে বাহবা দিতে শুধু নয় ওদের লড়াইয়ের সঙ্গী হই
কমরেড হয়ে পাশে থাকি
আসুন আমরা সকলেই।
আসুন, দেখা হবে।