লোকসভায় দাপুটে অভিষেকই যেন বিরোধীদের কণ্ঠস্বর

লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্কে রীতিমতো দাপট দেখালেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিদ্ধ করেন তিনি। বক্তৃতার শুরুতেই বাংলার মনীষীদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, আজ বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বেঁচে থাকলে এই ভেদাভেদ দেখে লজ্জা পেতেন।

বিজেপিকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অভিষেক অভিযোগ করেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে দেশে বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
অনুপ্রবেশকারী নিয়ে লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বক্তব্যকে বিজেপি এতদিন হাতিয়ার করেছে, তাকে এদিন অপপ্রচার বলে দাবি করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, ২০০৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই ভাষণের কপি খুঁজে বার করুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে অনুপ্রবেশকারী নিয়ে কিছু বলেননি। তিনি বলেছিলেন, ভুয়ো ভোটার পরিচয় পত্র নিয়ে।’

শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারে সংখ্যালঘুদের উপর লাগাতার নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের প্রস্তাব থাকলেও শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারের উদ্বাস্তুদের কথা ভাবা হয়নি কেন?
এনআরসি প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে খোঁচা দেন অভিষেক। এনআরসি- র সেই ভয়ে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। এর সঙ্গে নোটবাতিলের পরে বিভিন্ন জায়গায় লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এই সময় তাঁর বিরুদ্ধে সরব হন বিজেপি সাংসদরা। বারবার চিৎকার করে তাঁর কথা থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। অভিষেক সরাসরি তাঁদের জানান, লোকসভা বিরোধীদের বক্তব্য পেশের জায়গা। তাদের বলতে দিতেই হবে।
তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘দেশ ধর্মশালা হোক সেটা আমরাও চাই না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা একসঙ্গে রয়েছেন তাঁদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে কেন?’ এ বিষয়ে মতুয়াদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, মতুয়াদের উন্নতি সব রকম উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
একেবারে শেষে তীব্র কণ্ঠে অভিষেক জানান, এনআরসির বিরুদ্ধে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়বে তৃণমূল। “বাংলায় এনআরসি হবে না, হবে না, হবে না।” এদিন লোকসভার অধিবেশনে যে দাপট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখান, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে সেটাই বিরোধীদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

Previous articleনাগরিকত্ব বিল: পক্ষে কারা, বিপক্ষে কারা?
Next articleলাভপুরে খুনে অভিযোগকারীদের সশস্ত্র নিরাপত্তা দিল জেলা পুলিশ