মেকি মানবতাবাদীদের দিন শেষ, সঞ্জয় সোমের কলম

সঞ্জয় সোম

১৯৪৭ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত, গত ৭২ বছর, দেশে বহু সমস্যা ইচ্ছে করে জিইয়ে রাখা হয়েছিল। পঞ্চাশের গোড়া থেকেই প্রথমে জনসংঘ এবং পরে বিজেপি বারবার সেই সমস্যাগুলো এবং তাদের সমাধানের কথা তুলে ধরেছে। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কাশ্মীরের ৩৭০ধারা বিলোপের দাবিতে স্বাধীন ভারতের প্রথম হুতাত্মা হয়েছেন। দেশের মানুষ ধীরে ধীরে এগুলোর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছেন এবং সেই জন্যই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে দ্বিতীয়বার নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছেন। বিজেপি যা যা করছে সে সব দেশের মানুষকে আগে থেকে জানিয়েই করছে, কোনও লুকোচুরি নেই। বস্তুত ক্ষমতায় এলে সেগুলো কোনটা কত সময়ের মধ্যে করবে, তাও ম্যানিফেস্টোতে লিখিতভাবে জানিয়েই বিজেপি মানুষের ভোট চেয়েছিল। প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর কিন্তু সেই দম্ভে মাঠে লাফিয়ে পড়েনি , দ্বিতীয়বার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরই মানুষের সমর্থন সম্পর্কে একেবারে নিশ্চিত হয়ে তবে তারা কাজে হাত দিয়েছে এবং এক এক করে পুরানো সমস্যাগুলোকে ধরছে আর সমাধান করে দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর চেঁচামেচি শুরু হয়েছে, এতদিনের অচলায়তন পরপর ভেঙে পড়ছে যে। ৩৭০ হোক বা তিন-তালাক, রাম মন্দির হোক বা নাগরিক সংশোধন বিধি, যা যা ম্যানিফেস্টোয় বলা আছে, সব যেমন যেমন কার্যকরী করা হচ্ছে তত কায়েমী স্বার্থে আঘাত লাগছে এবং তত বেশি দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে। মানুষ সব কিছু দেখছেন এবং বুঝছেন। তাঁদের ভুল বুঝিয়ে বা বোকা বানিয়ে রাখার দিন শেষ হয়ে গেছে। আজ এটা যাঁরা বুঝছেন না, তাঁরাও একদিন বুঝতে বাধ্য হবেন।

আমি আর আমার ছোটবেলাকার বন্ধু আব্দুল গনি নিজেদের মধ্যে গল্প করছিলাম। আব্দুল পাঁড় কংগ্রেসি, ওর ঠাকুরদা মৌলানা আজাদের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছিলেন এবং ওদের পরিবার আজও সেই লেগাসি বহন করে চলেছে, যদিও এই প্রজন্মের কেউই সক্রিয় রাজনীতিতে নেই। আমি আবুকে জিজ্ঞেস করলাম, “সিএবি নিয়ে তুই কি শঙ্কিত?” ও উল্টে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “তুই কি শঙ্কিত?” আমি বললাম, “আমি কেন শঙ্কিত হতে যাবো? যাঁরা নিজেদের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন কিন্তু এতদিন কোনো recognition পাননি, বিষয়টা তাঁদের নাগরিকত্বের, আমার তো নয়”। আবু বললো, “exactly। এটা আমার বা তোর বিষয়ই নয়, why should we be bothered?” পরে আমার মনে হলো যেহেতু ভারতের নাগরিক হিসেবে আমার আর আবুর মধ্যে পন্থজনিত কারণে কোনো পার্থক্য নেই, আমরা দুজনেই ভূমিপুত্র এবং এদেশের সবকিছুর ওপর আমাদের সমানাধিকার, মায় আর্টিকেল ১৪-এর ওপর হক পর্য্যন্ত। সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিধি নিয়ে যে মানবিক পদক্ষেপ করলেন তাতে ভারতীয় হিসেবে তো আমাদের গর্ব হওয়া উচিত, এতদিন তো মরিচঝাঁপির লজ্জা বয়ে বেড়াচ্ছিলাম। তাহলে মুসলমানদের মধ্যে অকারণে শঙ্কা পয়দা করছে কারা এবং কেন করছে? রাজনীতির লোকেদের মিথ্যেটা তাও নাহয় বোঝা যায় কিন্তু এই যে দেখছি পশ্চিমবঙ্গের সুবিধাভোগী কয়েকজন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীও ক্রমাগত অল্প-শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, এটা আবু বা আমার মতন জাত বাঙালি তথা ভারতীয়র পক্ষে অত্যন্ত লজ্জার।

কয়েকটা ন্যাকামো আর নেওয়া যাচ্ছে না। প্রথম ন্যাকামি, পাকিস্তান, আফগানিস্তান আর বাংলাদেশের মুসলমানদেরও কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি? কেন দেওয়া হবে? যারা নিজেদের দেশে পন্থীয় সংখ্যালঘুদের ওপর এমন অত্যাচার করেছে যে সে বেচারারা প্রাণ হাতে করে আমাদের দেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, সেই জল্লাদদের কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? ধর্ষক আর ধর্ষিতাকে একই দৃষ্টিতে দেখতে হবে, এটা কোন ধরণের বিকৃতকাম মানসিকতা? দ্বিতীয়, আমরা নাকি হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছি! এসব শুনলে মাঝে মাঝে মনে হয় যে হচ্ছি তো হচ্ছি, বেশ হচ্ছি। হিন্দুরাষ্ট্র হলে যদি পাকিস্তানের নিপীড়িত খ্রিস্টানরা আর আফগানিস্তানের খেদিয়ে দেওয়া শিখরা ভারতের নাগরিকত্ব পান আর সেক্যুলার স্টেট হলে মরিচঝাঁপি হয় আর নাশবন্ধি হয়, তহেলে বোধহয় প্রথমটিই ভালো। তৃতীয়, ভারতের সংবিধান নাকি ব্যাপকভাবে উল্লঙ্ঘন হচ্ছে, মুসলমানদের নাকি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে দেওয়া হচ্ছে। এসবের একটাও উদাহরণ কেউ দেখাতে পারবেন না, অথচ নাকি হচ্ছে। তা এতই যখন চিন্তা, কোর্টে যান না মশাই। যেখানে যেখানে উল্লঙ্ঘন বা অন্যায় হচ্ছে বলে আপনাদের মনে হচ্ছে, চ্যালেঞ্জ করুন, কে আটকেছে? হ্যাঁ, ভারত এবং ভারতের সংবিধান এবং ভারতের আইনি রক্ষাকবচ শুধুমাত্র ভারতীয়দের জন্য এবং সেই আইন অনুযায়ী ভারতে অবৈধভাবে বিদেশিদের অনুপ্রবেশ নিষেধ। কেউ কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে আইন ভাঙার সমর্থন করছেন আর বিজেপি আইন মানার কথা বলছে, এটাই পার্থক্য। মেকি সেক্যুলাররা বিষয়টাকে হিন্দু-মুসলমান রং লাগিয়ে ভারতীয় ভূমিপুত্রদের মধ্যে একটা সংঘাতের আবহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। আগে হয়তো এই ন্যাকামো চলে যেত, এখন মানুষ আর ওসবে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেন না। ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের ফিরে যেতেই হবে, তা সে রোমানিয়ান হোক, নাইজেরিয়ান হোক আর বাংলাদেশিই হোক। বিজেপিকে সমর্থনের মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ যেন মেকি সেক্যুলারদের মুখের ওপর বলছেন, “এবার থেকে এমনটাই দস্তুর। যে যা পারেন করে নিন গে যান।”

Previous articleবিজেপি জিতল, ভারত হারল, বললেন অভিষেক
Next articleবছরের শেষে ‘ শীতল চাঁদ ‘ দশকের শেষ পূর্ণিমা দেখুন ১২:১২ তে