কেন্দ্রের তথ্য সঠিক ? IB-রিপোর্ট তো বলছে, CAA-তে লাভ হবে মাত্র 32 হাজার মানুষের

CAA-তে লাভবানের সংখ্যা নিয়ে কেন্দ্রের বয়ান কতদূর সঠিক ?

কেন্দ্রীয় সরকার তথা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বার বার দাবি করেছেন, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে উপকৃত হবেন দেশের লক্ষ কোটি মানুষ৷
আরও কয়েকধাপ এগিয়ে বিজেপি এবং সঙ্ঘ নেতাদের জোরালো হুঙ্কার, কমপক্ষে দেশের
এক থেকে দেড় কোটি শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবেন এই আইনের ভিত্তিতে৷ নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বা CAA এনে বাংলাদেশ- পাকিস্তান- আফগানিস্তানে ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান ও পার্সি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে মোদি সরকার।
বিজেপি-বিরোধী মহলের বক্তব্য, গেরুয়া-শিবিরের এই দাবির পিছনে লুকিয়ে আছে ‘হিন্দু’ তথা অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব দিয়ে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক শক্ত করার ছক৷ বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে, বুঝে অথবা না বুঝে মতুয়া-নেতা ও বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর দাবি করেছেন, শুধুমাত্র মতুয়া সম্প্রদায়েরই 70 লক্ষ মানুষ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। বাংলার বিভিন্ন জেলায় বাস এই মতুয়ারা সবাই ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।

কেন্দ্র তথা বিজেপি’র এই দাবির বেলুনে পিন ফুটিয়ে দিলো অমিত শাহের অধীনস্থ IB বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বলছে :

⚫ নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের সুবিধা পাবেন গোটা দেশে মাত্র 31, 313 জন। এর মধ্যে,

⚫ হিন্দু 25,447 জন

⚫ শিখ 5,807 জন

⚫ খ্রিস্টান 55 জন

⚫ বৌদ্ধ 2 জন

⚫ পার্সি 2 জন

এই বিল নিয়ে আলোচনায় সময়ে কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স বুরো বা IB-র কাছে সংসদের যৌথ কমিটি জানতে চেয়েছিল, ঠিক কত জন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের সুবিধা পাবেন। IB-র ডিরেক্টর উত্তরে জানিয়েছেন, তাঁদের রেকর্ড অনুযায়ী ওই তিন দেশের 31, 313 জন ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন। যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়া হয়েছে। সংখ্যাটা এত কম কেন, সেই প্রশ্নে ডিরেক্টরের ব্যাখ্যা, হয়তো আরও অনেকেই থাকতে পারেন, কিন্তু সম্ভবত তাঁরা নাগরিকত্ব বা রেশন কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি পেয়ে গিয়েছেন। যৌথ কমিটিকে মন্ত্রক জানায়, বাংলাদেশ থেকে এসে কোন রাজ্যে কত জন বাস করছেন, তার পরিসংখ্যান নেই। এই তথ্য রাখা খুব মুশকিল। কারণ তাঁরা আর নির্দিষ্ট কোনও অঞ্চলে বসবাস করেন না।

IB-র এই রিপোর্টের পরই বড়ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্র, আরও স্পষ্টভাবে বললে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে উপকৃতের সংখ্যা নিয়ে এভাবে জাগলারি করছেন কেন ?
IB-র রিপোর্ট যদি সঠিক হয়, তাহলে বিজেপি ও RSS নেতারা এবং অবশ্যই অমিত শাহ ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের’ খোঁজ পেলেন কী করে?

বিজেপি অবশ্য এখন বলার চেষ্টা করছে, এখনও নাগরিকত্ব না-পাওয়া অনেকেই বাংলাদেশ থেকে আসার সময়ে জানাননি যে, তাঁরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে এসেছেন। এখন তাঁরা তা জানিয়ে নাগরিকত্বের আবেদন করবেন।

এই সাফাইও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়৷ প্রশ্ন, যাঁরা ভারতে আসার সময় ধর্মীয় উৎপীড়নের কথা জানাননি, এখন জানালে কি তা মেনে নেওয়া হবে? কী করে তা প্রমাণ হবে?

যৌথ কমিটিও IB-র কাছে এই প্রশ্নই তুলেছিল। কমিটির রিপোর্ট বলছে, IB-র ডিরেক্টর উত্তরে জানান, নাগরিকত্বের আর্জি জানাতে তাঁদের ধর্মীয় উৎপীড়নের প্রমাণ দিতে হবে। আসার সময়ে এ কথা না-বললে এখন তা প্রমাণ করা কঠিন হবে। এমন দাবি উঠলে, গুপ্তচর সংস্থা RAW’-সহ অন্যান্য সংস্থাকে বলতে হবে তদন্ত করে দেখতে।

তাহলে দাঁড়াচ্ছে কী?

কেন্দ্র এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে উপকৃতের সংখ্যা হিসেবে যা দাবি করা হচ্ছে, কেন্দ্রের গোয়েন্দা সংস্থা IB-ডিরেক্টর এবং IB-র রিপোর্টই বলছে, সেই দাবি অসত্য এবং ভিত্তিহীন!

তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের এই দ্বিচারিতা কেন?

Previous articleনিশ্চিন্ত থাকুন, এই আইনে দেশের কোনও ধর্মের কোনও নাগরিকের ক্ষতি হবে না: প্রধানমন্ত্রী
Next article২০২০ আপনার কেমন যাবে?