আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে গিয়ে তবে এরাজ্যে CAA লাগু করতে হবে”: মমতা

“কেউ ভয় পাবেন না। আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে গিয়ে তবেই এরাজ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন লাগু করতে হবে, আমি বেঁচে থাকতে এই আইন লাগু করতে দেব না”। সোমবার NRC ও CAB বিরোধী মিছিল শেষে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “ধর্ম যার যার নিজের। কিন্তু সংবিধান, সংহতি সবার। এটাই আমার দেশ। এই দেশের স্বাধীনতা যারা এনেছিলেন, তাঁরাসবাইকে একসঙ্গে, এক হয়ে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু মানে না। এরা সবাইকে তাড়িয়ে নিজেরা থাকতে চাইছে। সবাই যদি না থাকে, তাহলে কী করে সবার উন্নয়ন হবে। এরা আবার মুখে বলে, সব কা সাথ, সব কা বিকাশ।”

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারও দয়ায় এই দেশের নাগরিক নই। আমরা এই দেশের সত্যিকারের নাগরিক।
আমরা ভাগাভাগি করি না। আমরা শান্তিতে কাজ করবো। কেউ ট্রেনে আগুন লাগাবেন না। ভারত সরকার অনেক ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে।”

এবার মুখ্যমন্ত্রী সুর চড়িয়ে বলেন, “এখানে একজন বিজেপির দালাল এসেছে। তিনি আমাকে সাবধান করছেন। মনে রাখবেন, আমি সবাইকে ক্ষমা করি কিন্তু বিজেপির দালালদের ক্ষমা করি না।”

কেন্দ্রের সরকারকে একহাত নিয়ে মমতা বলেন, “ক্যাব আর এনআরসি ল্যালিপপ। এরা একই কয়নের এ পিঠ আর ও পিঠ। আমাদের বলেছিল সেন্ট্রাল ফোর্সের জন্য। আমরা বলেছি এখানে পুলিশ যথেষ্ট। এদের মতলবই হলো যারা বিজেপি করে দেশে শুধু তারা থাকবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের সফর বাতিল করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু, তারা সফর বাতিল করে দিয়েছেন।”

এখানেই থেমে থাকেননি মমতা। তিনি সুর চড়িয়ে আরও বলেন, “এরা হিন্দুত্ব শেখাচ্ছে। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দর থেকে ওরা বড় হিন্দু? সাম্প্রদায়িকতা করে দেশটাকে ভেঙে দিচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভেদ করছে। সবাই শান্ত থাকবেন। এই লড়াই সবার। শুধু সংখ্যালঘুদের লড়াই নয় এটা।এই লড়াই মানবিকতার লড়াই। লড়াই ততদিন চলবে, যতদিন না পর্যন্ত ক্যাব-এনআরসি বাতিল হচ্ছে। ”

সম্প্রতি CAA নিয়ে দেশজুড়ে যে অস্থিরতা, হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে, তার দায় বিজেপি সরকারের উপর চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “বিজেপি পেঁয়াজ-আলুর দাম কতো ? বাজারে আগুন লাগিয়ে এবার দেশে আগুন লাগাতে চাইছো। তুই একাই নাগরিক, আর আমরা দেশদ্রোহী? বিজেপি নিজেরাই টাকা দিয়ে ট্রেন জ্বালাচ্ছে। আমরা যখন প্রতিবাদ করেছিলাম তখন আমরা একা ছিলাম। এখন অনেকেই আছে আমাদের সঙ্গে। অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও NRC-CAA বিরোধিতা করছেনন। আন্দোলনে যদি সততা থাকে তাহলে আমরা একলা চলতে পারি। এই লড়াই কোনও একটা মানুষের ধর্মের কিংবা জাতির নয়। এই লড়াই সব মানুষের লড়াই। স্বাধীনতার এতো বছর পরে ঠিক করা হবে কে নাগরিক, কে নয় ? আমরা কোনদিন এটা করতে দেব না।”

এরপর রাজ্যবাসীকে শান্তির বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অসমে, দিল্লিতে গুলিতে মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পুলিশের উপরে ভরসা আছে। কেউ আগুন লাগাবেন না। ট্রেন বন্ধ করবেন না। রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের মত নির্বাচিত সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞাপন দেবে কিন্তু তাতে ভয় পাবেন না। শান্তিপূর্ণ ভাবে আপনারা আন্দোলন করুন। ব্লকে ব্লকে মিছিল মিটিং হবে। সবাইকে নিয়ে মিছিল হবে। সব ধর্মকে সম্মান দিয়ে মিছিল হবে। কোনও সাম্প্রদায়িক মিছিল হবে না। তিন দিনের মিছিলের পর আরও কর্মসূচি দিয়ে দেওয়া হবে।”

Previous articleসরকারকে কয়েকটি প্রশ্ন, সঞ্জয় সোমের কলম
Next articleবিজেপির মিছিল ঘিরে সুলেখা মোড়ে ধুন্ধুমার