Tuesday, May 13, 2025

ট্রেনে কাটা পড়ে ছিল পা। সেই অবস্থায় প্রথমে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর একের পর এক কলকাতার হাসপাতালে ঘোরা। টানা সাত দিন এই অবস্থা চলার পর পায়ে পচন ধরতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত দিন এই টানাপোড়েন চলার পর কার্যত অচৈতন্য অবস্থায় তাকে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজ্যের হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর একবার এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

বীরভূমের মুরারই-এর বাসিন্দা জয়ন্ত রাজবংশী। বছরের ৪১-এর শ্রমিক। ডানকুনিতে থাকছিলেন। মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করতেন। গত ১৮ডিসেম্বর রাতে রেললাইন পার হওয়ার সময় মাল গাড়ির ধাক্কা খান। ডান পা কাটা পড়ে। নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। আর তারপরই শুরু হয় দুর্দশা কাহিনি।

মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেখার পর তাকে ভর্তি করতে বলেন। কিন্তু সেই চিকিৎসক আবার জানান হাসপাতালে কাটা পায়ের অস্ত্রোপচার করা যায় না। যেতে হবে পিজিতে। জয়ন্তকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। দেখানোর পর মারাত্মক জখম জয়ন্তকে বলা হয় পরেরদিন আউটডোরে আসতে। শারীরিক অবস্থার খারাপ হতে থাকে। তাই নিয়ে যাওয়া হয় আরজিকর হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তাররা বলেন চিকিৎসার পরিকাঠামো এখানে নেই। আবার পিজিতে যেতে বলেন। ১৯ডিসেম্বর পিজিতে নিয়ে যাওয়া হয় জয়ন্তকে। এবার বলা হয় বেড নেই। অগত্যা তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমশ অবস্থা সঙ্গীন হতে শুরু করে। ফের পিজিতে। সেখানে ভর্তিও নেওয়া হয়। ঠিক হয় ২০ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের মেশিন খারাপ থাকায় চিকিৎসা না করে তাকে ফেলে রাখা হয়। জয়ন্তর প্রতিবেশীরা তখন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। ফের আরজি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ঠাঁই হয় গাছের তলায়। ডান পায়ের ব্যান্ডেজ দিকে তাকানো যাচ্ছে না। যন্ত্রণায় ছটফট করছে, দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। অভিযোগ, জয়ন্তকে আরজিকর কর্তৃপক্ষ হুমকি দিয়ে বলতে থাকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। এমনকি পুলিশ দিয়েও হুমকি দেওয়া হয়। কার্যত মৃত্যুমুখে পড়ে থাকা জয়ন্তর পরিবারের অনুরোধ-উপরোধে এরপর আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জয়ন্তকে। অস্ত্রোপচার হবে। ট্রেনে কাটা যাওয়া একজন রোগীর এভাবে মৃত্যুমুখে ফেলে হয়রানি দেখে অনেকেই বিস্মিত। মুখ্যমন্ত্রী বারবার হাসপাতালগুলিকে মানবিক হতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাতে যে কোনও লাভ হয়নি, এই ঘটনা সেই প্রমাণই বহন করছে।

Related articles

অ্যান্ডি মারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন নোভাক জকোভিচের

একবছরও এগোল না সম্পর্ক। ফরাসি ওপেন(French Open) শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই নোভাক জকোভিচের(Novak Djokovic) কোচের পদ থেকে...

CBSE দশম-দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

CBSE-এর দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।...

তিন সপ্তাহেও অধরা পহেলগামের হামলাকারীরা, পোস্টার দিয়ে খোঁজ গোয়েন্দাদের!

পহেলগাম হামলার পরে প্রায় তিন সপ্তাহ পার। তার মধ্যে পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটি ভাঙতে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে চালানো...

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেও বিরাটের অবসর, বিতর্ক তুঙ্গে

টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন বিরাট কোহলি(Virat Kohli)। কিন্তু এমন ঘটনাটা ঘটালেন বিরাট কোহলি। হতবাক দিল্লি রঞ্জি দলের কোচ...
Exit mobile version