Sunday, May 4, 2025

প্রবীণ ওই সন্ন্যাসী নিশ্চয়ই আবেগে চালিত হননি ! কণাদ দাশগুপ্তের কলম

Date:

কণাদ দাশগুপ্ত

ধারনা একটা ছিলোই, তবে জুতসই দৃষ্টান্ত হাতে ছিলো না৷ সেটা মিললো রবিবার৷

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের এখনকার শীর্ষ পদাধিকারীদের মানসিকতা যে আর পাঁচজন সাধারন ‘গৃহী’ মানুষের থেকে একেবারেই আলাদা নয়, রবিবার সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো৷ সামনে প্রধানমন্ত্রী বা ওই স্তরের ক্ষমতাবানদের দেখলে স্তাবকতায় অভ্যস্ত আরন্ত পাঁচজন ‘গৃহী’ যেভাবে খেই হারিয়ে ফেলেন, আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন, ‘বাটারিং’-এ তিনি কতখানি দক্ষ, তা বোঝাতে যেভাবে মরিয়া চেষ্টা চালান, মিশনের সন্ন্যাসীদের একাংশও যেন ঠিক সেই একই টাইপের, তা স্পষ্ট হলো এদিন৷

সনাতন হিন্দুধর্মের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ যেমন কোনও রাজনৈতিক দলের হাতে কেউ তুলে দেয়নি, তেমনই ঠাকুর, মা বা স্বামীজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য রামকৃষ্ণ মিশনের মতো কোনও প্রতিষ্ঠানকে ‘শালগ্রাম শিলা’ হিসেবে মান্য করারও প্রশ্ন নেই৷ তাই এসব কথা বলতে ন্যূনতম কুন্ঠাও নেই৷

রবিবার বেলুড় মঠে স্বামীজির জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়েছেন বলে অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ প্রতিবাদকারীরা মূলত রাজনীতির জগতের লোকজন৷ ওনাদের আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী কেন বেলুড়ের মঞ্চকে রাজনীতির মঞ্চ বানালেন৷ এর কারন হিসাবে নেতারা বলেছেন, যেহেতু রামকৃষ্ণ মিশন একটি অ-রাজনৈতিক সংস্থা, সুতরাং ওখানে দাঁড়িয়ে রাজনীতির কথা বলাটা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শোভনীয় হয়নি৷

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রধানমন্ত্রীর আচরনের যেভাবে নিন্দা করেছেন, প্রয়োজন হলে তার উত্তর প্রধানমন্ত্রী দিতে চাইলে দিতেও পারেন৷ কিন্তু একটা কথা তো অস্বীকার করা যায় না, এই নেতারা একটি বিশেষ কারনে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করলেও, কায়দা করেই এড়িয়ে গিয়েছেন, ওই একই অনুষ্ঠানে মিশনের সাধারন সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দের বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়টি৷ এই সন্ন্যাসীও তো রাজনীতির কথাই বলেছেন৷ বস্তুত, শুরুটা তো উনিই করেছেন৷ ওসব কথা ‘ব্যক্তি’ স্বামী সুবীরানন্দের ছিলো না, মিশনের সাধারন সম্পাদক হিসাবেই উনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন৷

ঠিক কী বলেছেন সুবীরানন্দ ? স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবস পালনের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার আগে তিনি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে বলেছেন, “ভারতবর্ষের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি”à§· ওই মঞ্চে একথার অর্থ কী? এক সংস্থার সাধারন সম্পাদকের বক্তব্য যদি এটা হয়, তাহলে পাল্টা প্রশ্নের সামনে গোটা মিশনকে তো দাঁড়াতেই হবে৷ তাহলে কি সরকারিভাবেই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন মনে করে যে, ভারতবর্ষের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? মিশন কি মনে করে দেশের বাকি সব প্রধানমন্ত্রী অযোগ্য ছিলেন?
সুতরাং “অ-রাজনৈতিক” রামকৃষ্ণ মিশনের মঞ্চে প্রথম রাজনীতিটা প্রধানমন্ত্রী করেননি, শুরুটা করেছিলেন মিশনের সাধারন সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ৷ অথচ ডান- বাম কোনও রাজনৈতিক নেতা তাঁর নাম উল্লেখ করলেন না৷ জানা নেই, মিশনের কাছে নেতা-মন্ত্রীদের দায়বদ্ধতার রহস্য৷ নিশ্চয়ই কিছু আছে, নাহলে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা যে কারনে হচ্ছে, সেই একই কারনে তো মিশনের সাধারন সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দের বক্তব্যেরও বিরোধিতা করা উচিত ছিলো৷ কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা তা করেননি৷ কেন করলেন না, তাঁরাই বলতে পারবেন৷

মিশনের তরফে এই পর্যবেক্ষণের কথা জানানোর পর
এখন তো স্বামী সুবীরানন্দকে তার ব্যাখ্যা করতেই হবে৷ কিসের ভিত্তিতে, কোন সূচক দেখে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন৷ মনে রাখতে হবে, স্বামী সুবীরানন্দ সাধারন কেউ নন৷ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে যে সংস্থার সেন্টার এবং ভক্ত-শিষ্য, সেই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারন সম্পাদক ৷ তাঁর বক্তব্যের ওজন আছে৷ তাছাড়া, ওটা তো কোনও রাজনৈতিক দলের সভা ছিলো না৷ দায়িত্বশীল এক পদাধিকারী নিশ্চয়ই আবেগে চালিত হননি৷ তাঁর কাছে নিশ্চয়ই তথ্য আছে, কেন নরেন্দ্র মোদি শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী এবং কেন দেশের বাকি প্রধানমন্ত্রীদের তিনি অযোগ্য বলে মনে করেন!
এবং ফের বলছি, ভুললে চলবে না, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তথাকথিত ওই রাজনৈতিক বক্তব্যের আগেই এ ধরনের রাজনীতির কথা বলেছেন মঠ ও মিশনের পদস্থ কর্তা সুবীরানন্দ মহারাজ।

অবশ্য এটাই প্রথম নয়৷ এর আগে রামকৃষ্ণ মিশনের জনৈক সন্ন্যাসীকে কারনে- অকারনে নিয়মিত এ রাজ্যের শীর্ষ স্তরের প্রশাসনিক মঞ্চে দেখা যেতো৷ খুব সহজ সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের৷ সাধারনত মিশনের কোনও সন্ন্যাসীর সঙ্গে রাজনৈতিক লোকজনের বা সাধারন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক এত নিবিড় হয়না৷ একটা দূরত্ব থাকেই৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটা চোখে পড়েনি৷ সেই ধারাই কি বহন করলেন স্বামী সুবীরানন্দ ?

সুবীরানন্দ মহারাজ পরে সম্ভবত বুঝেছেন বিষয়টির গুরুত্ব৷ তাই প্রধানমন্ত্রী বেলুড় থেকে চলে যাওয়ার পর সতর্ক ভাবে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়াতে আগেভাগেই বলেছেন, “আমরা জাগতিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।” কোনটা জাগতিক বিষয় ? প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যদি জাগতিক হয়, তাহলে ওনার নিজের ওই ‘সেরা প্রধানমন্ত্রী” মন্তব্যটি মহা-জাগতিক ছিলো বলেই প্রবীণ এই সন্ন্যাসী মনে করেন?

স্বামী সুবীরানন্দের কাছে সবিনয়ে জানতে চাইছি, শুরুটা যখন আপনি করেছেন, তখন একটু খোলসা করেই বলুন, কোন তথ্য, সূচক ইত্যাদির ভিত্তিতে আপনার ধারনা হলো যে নরেন্দ্র মোদি দেশের সেরা প্রধানমন্ত্রী?

এবং তুলনামূলক কোন কোন নির্দিষ্ট তথ্যসমূহ খতিয়ে দেখে বাকি প্রধানমন্ত্রীদের অযোগ্য বলে আপনি মনে করছেন? সত্যিই এটা আমরা জানতে চাই! আপনার মতো অভিজ্ঞ, প্রবীন, বাস্তববোধসম্পন্ন, ঐশ্বরিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষের নজরে যা আসবে, আমাদের মতো সাধারন মানুষের নজরে তা আসবেনা৷ তাই সমৃদ্ধ হতেই আপনার সাহায্য চাইছি৷
একইসঙ্গে রাজনীতির জগতের যে নেতারা এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করলেন, তাঁদের সুবীরানন্দ ইস্যু পাশ কাটানোর রহস্য-ই বা কী, সেটা জানারও সমান আগ্রহ রইলো৷

Related articles

কাশ্মীরের রমবানে খাদে সেনার গাড়ি, মৃত্যু ৩ জওয়ানের

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধ জিগিরের মাঝেই ফের বিপর্যয় ভারতীয় সেনায় (Indian Army)। কাশ্মীরে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল তিন সেনা...

১৫ দিনে দ্বিতীয়বার! খড়গপুর আইআইটি-তে উদ্ধার ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ

খড়গপুর আইআইটি-র হস্টেল থেকে মিলল আরও এক পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে এই নিয়ে তৃতীয় মৃত্যু...

প্রয়াত ১২৯ বছর বয়সী দেশের প্রবীণতম ‘যোগী’ স্বামী শিবানন্দ বাবা

যোগেই (Yoga) রোগ মুক্তির কথা বলেছিলেন তিনি। জীবন দর্শনকে জীবনশৈলীতে বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন। এবার শেষ হলো পথ চলা।...

অবশ্যই যেতে হবে: দিলীপের পথে জগন্নাথ মন্দিরের প্রশংসায় আরও এক বিজেপি সাংসদ

বাংলায় জগন্নাথ মন্দির (Jagannath Temple) প্রতিষ্ঠা নিয়ে রাজনীতির খেলায় বঙ্গ বিজেপি। দিলীপ ঘোষের সেই মন্দির প্রতিষ্ঠায় যাওয়া নিয়েও...
Exit mobile version