মোহনবাগান ছিল, আছে, থাকবে, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

বড় সিদ্ধান্ত। বড় ঘোষণা।
প্রতিক্রিয়া তীব্র।
সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড়।
মোহনবাগান সমর্থকমহলেও কিছু বিভ্রান্ত, কিছু বিষাদ।
কিছু ফোন পেলাম, ক’জন এলো, প্রতিবাদ চাই, আন্দোলন, মামলা।

জল্পনা নতুন নয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমারও দ্বিধা ছিল।
অন্য স্পনসর হলে কথা ছিল, কিন্তু এটিকে?
গোয়েঙ্কাদের হাতে মোহনবাগান?

এখনও পর্যন্ত যা বুঝলাম:
ক্লাব অটুট। ফুটবল কোম্পানিতে শেয়ার হাতবদল।
সবুজ মেরুণ অটুট।
পালতোলা নৌকো অটুট।
নাম এটিকে-মোহনবাগান।

অভ্যেস ভেঙে প্রথমেই হজম কঠিন।
আবেগ চট্ করে যুক্তি মানে না।

কিন্তু, বাস্তব, টুটু বোস, সৃঞ্জয় বোসরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সাহসী, সময়োপযোগী, সমর্থনযোগ্য।

টাকা নেই, পয়সা নেই, আজকের বাজারে স্পনসর আনা কঠিন। চলবে কী করে? সারাবছর কোনোক্রমে চালিয়ে শেষে ব্যক্তিনির্ভরতা? টুটুবাবুদের পকেট থেকে ঘাটতি মেটানো। আর কতদিন? বছর আসে, বছর যায়, হাল বদলায় না।

মোহনবাগান আবেগ। মোহনবাগান ঐতিহ্য। মোহনবাগান ইতিহাস।

তার নামের আগে ম্যাকডোয়েল নামক মদের কোম্পানি জোড়ার পরেও যদি ক্ষতি না হয়ে থাকে, ফুটবলক্লাব এটিকে বসলে কীসের ক্ষতি? সাবেক সবুজমেরুণ জার্সি গত কয়েকবছরে কতরকম স্টাইলে বদলেছে, কেউ গুণেছেন? একটু এদিকওদিক হলে ক্ষতি কী?

বিশ্বফুটবলে মালিকানার ধাঁচ বদলাচ্ছে।
তাতে মূল বিন্দুটি তো বদলাচ্ছে না।
টুটুবাবুদের প্রশংসা করছি, নিজেদের ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণের কথা না ভেবে ক্লাবের ভবিষ্যতের স্বার্থে এমন শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আর শেয়ার না পেলে বিপুল টাকা ঢালার রাস্তায় আজ কোনো বাণিজ্যিক সংস্থা স্থায়ীভাবে আসবে কি?

আমি নিজে একসময় এই সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এবং এটিকে মালিকদের এন্তার সমালোচনা করে বলেছিলাম, কীসের এটিকে? বাংলার এই ব্যবসায়ীরা যদি বাংলার ফুটবলকে সত্যিই ভালোবেসে থাকেন, কেন মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলে লগ্নি করে ঐতিহ্যশালী ক্লাবগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করলেন না?

আজ, কালের নিয়মে দেখা গেল, এটিকে তাঁদের সৃষ্ট বটে, কিন্তু সফল নয়। চাই বাঙালির বড় ক্লাবকে। কর্পোরেট জগতের নিয়মকানুন মেনে তাঁরাই এখন আগ্রহী মোহনবাগানে।
ক্ষতি কী?

এটিকে এবং তার মালিকদের যে কর্পোরেট কাঠামো আছে, তা যদি মোহনবাগানের ঐতিহ্য আর গরিমার সঙ্গে হাত মেলায়; তাহলে যুগোপযোগী এই সিদ্ধান্ত যে স্থায়ী ইতিবাচক ভিত্তি তৈরি করবে না, এমন মনে করব কেন?

সমর্থকদের দুটি শিবির মামলার কথা ভাবছেন।
বুঝিয়ে বললাম, আবার বলছি, করবেন না। সময়ের সঙ্গে পা ফেলতে হবে। এটিকে যদি মোহনবাগানের আবেগকে সম্মান না দেয়, সবরকম প্রতিবাদের দরজা খোলা। এখন তার সময় নয়।

ফুটবল চালাতে বড় টাকার দরকার। দীর্ঘদিন ধরেই সঙ্কট। সব ক্লাবের সঙ্কট। সেখানে লগ্নিকারীর বক্তব্যকে প্রাধান্য দিতেই হবে। সবটা ভালো লাগুক, বা নাই লাগুক।

টুটু বোস, টুম্পাই বোস, দেবাশিস দত্তরা নিশ্চয় চেষ্টা করেছেন নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রেখে স্পনসর আনার। আমি আপনি হলেও তাই করতাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেটা হয় নি বলেই ফুটবলের শেয়ার ছাড়তে হয়েছে।

অপ্রিয় সিদ্ধান্ত। তবে আগামীর সকাল দেখার সিদ্ধান্ত।

এটিকে মালিকদের শুধু বলব, টাকার সঙ্কট বলেই আপনারা মোহনবাগানের নিয়ন্ত্রণ পেলেন। এখন কাজের কাজ করুন। তার বাইরে বেশি মালিকানা দেখাতে যাবেন না। প্রতিবাদ কাকে বলে, সেটা আশা করি দেখানোর পরিস্থিতি হবে না। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, উৎসব পারেখ এবং অবশ্যই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অভিজ্ঞ লোক। তাঁদের উপর আস্থা রেখে দেখা যেতেই পারে।

আর একটা কথা।
কাল থেকে দেখছি মোহনবাগান নিয়ে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের লম্ফঝম্প বেশি।
ভাই, চারশ কোটি এলো?
শেয়ার নিয়ে আপনারা ঘুরছেন না দুয়ারে দুয়ারে?
কোয়েস্ট নিয়ে কী চলছে?
আই লিগটা দেখতে কেমন?

সবুজমেরুণ বন্ধুদের বলব, তাকাবেন না। এসব কা কা ডাক বেশি বাড়াবাড়ি করলে বড়জোর বলে দিন, এই কাক, হুশ্।

জয় মোহনবাগান।
ভবিষ্যৎ বলবে, স্পনসর আসবে যাবে।
মোহনবাগান নামের আগে অর্থদাতার নাম আসবে যাবে।
এমন চুক্তি টেঁকার হলে টিকবে, না হলে ভাঙবে।

কিন্তু, আসল ভালোবাসা, বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব মোহনবাগান থাকবে একেবদ্বিতীয়ম্ চেহারায়।

গীতায় ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন, আত্মা অবিনশ্বর। তার মৃত্যু নেই। সে শুধু শরীর বদল করে।

ম্যাকডোয়েল মোহনবাগান হোক বা রূপান্তরিত এটিকে মোহনবাগান; আমরা থাকবই।

কারণ মোহনবাগান হল এদেশের আত্মা।

আরও পড়ুন-মোদি সরকারের ‘দূরদর্শিতা’ নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ টাটা

Previous articleএনপিআরে নতুন তথ্য দেওয়া কি বাধ্যতামূলক? কী জানাল কেন্দ্র?
Next articleদিল্লির ভোটের আংশিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ বিজেপির