রাজ্যসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় চমক, কৌতূহল পঞ্চম আসনে

চলতি বছরেই পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যসভার 5 আসনে নির্বাচন হবে৷ 5টির মধ্যে 4টি আসন রয়েছে তৃণমূলের দখলে৷ নিজেদের দখলে থাকা 4 আসন ফের নিজেদের দখলে রাখতে তৃণমূলের কোনও সমস্যাই নেই৷ তৃণমূল অন্দরের খবর, এই 4 আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে৷ তালিকায় যথেষ্ট চমক আছে৷

এদিকে রাজ্যসভায় তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন না’কি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো বক্তা। ওকে প্রার্থী করলে দলের লাভ হবে’৷ ঋতব্রত-র সাংসদ পদের মেয়াদও শেষ হচ্ছে একইসঙ্গে ৷ সিপিএম প্রার্থী হিসেবে ঋতব্রত রাজ্যসভায় গেলেও পরবর্তীকালে শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে
দল তাঁকে বহিষ্কার করে৷ দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা দেননি ঋতব্রত৷ ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন ডেরেকের৷ সংসদের চালু কথা, ঋতব্রত এখন ডেরেক-লবির সাংসদ৷ ঋতব্রত এখন ‘নির্দল’ হিসাবেই সাংসদ পদে আছেন৷ ডেরেক চাইছেন তৃণমূল এবার রাজ্যসভায় ঋতব্রতকে প্রার্থী করুক৷ কিন্তু দু’টি ভিডিও ঋতব্রতকে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ প্রথম ভিডিওটি দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের উপর হামলার, যেখানে দেখা গিয়েছে দলবল নিয়ে ঋতব্রত নিজেই অমিত-নিগ্রহের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ আর দ্বিতীয় ভিডিওটি প্রায় সবার দেখা, ঋতব্রত’র সেক্সভিডিও। তাছাড়া আজ পর্যন্ত দলের কাজে এক মিনিটের জন্যও কোথাও সামিল হননি ঋতব্রত৷ ফলে ডেরেক দরবার করলেও, তা কতখানি ফলপ্রসূ হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে৷

তৃণমূলের যে 4 জন রাজ্যসভা সাংসদের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে, তাঁরা হলেন মণীশ গুপ্ত, আহমেদ হাসান ইমরান, যোগেন চৌধুরি ও কে ডি সিং৷ সূত্রের খবর, কে ডি সিং-র উপরে তৃণমূল নেতৃত্ব ভীষণই ক্ষুব্ধ৷ ক্ষোভ এতটাই যে, বড় ধরনের কোনও অঘটন না ঘটলে তৃণমূল থেকে কে ডি সিংয়ের পুনরায় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই৷ দলীয় হুইপ থাকার সত্ত্বেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ভোটাভুটিতে কে ডি সিং রাজ্যসভায় অনুপস্থিত ছিলেন৷ বর্ষীয়ান সাংসদ তথা বিশিষ্ট চিত্রকর যোগেন চৌধুরি ইতিমধ্যেই দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর দাঁড়াতে চান না৷ রাজ্যসভায় দলের ডেপুটি লিডার মণীশ গুপ্ত ও সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের পুনরায় মনোনয়নের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী৷ শোনা যাচ্ছে, বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার একটি কেন্দ্রে প্রার্থী করা হবে মণীশ গুপ্তকে৷ তাঁকে মন্ত্রিসভায় ফেরাতে দল আগ্রহী৷

এদিকে যাবতীয় আগ্রহ তৈরি হয়েছে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনটি নিয়ে৷ কংগ্রেস এবং বামেরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে একজনকে প্রার্থী করলে, দু’দলের মিলিত ভোটে তিনি জিতবেন৷ শোনা যাচ্ছে, সিপিএম এবার দলীয় বিধি সংশোধন করে দলের সাধারন সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় ফেরাতে চায়৷ এই নামে আপত্তি নেই কংগ্রেসেরও৷ তবে কারাত-লবি চাইছে প্রার্থী করা হোক মহম্মদ সেলিমকে৷ সেলিমের নামে ঘোরতর আপত্তি আছে কংগ্রেসের৷ এই সেলিমের কিছু অবিবেচক মন্তব্যের কারনেই গত লোকসভা নির্বাচনে কং-বাম আসন সমঝোতা বা জোট হয়নি৷ তাই এই নামে কংগ্রেস কতখানি একমত হবে, তা সন্দেহ৷

তৃণমূল সূত্রের খবর, এই 4 আসনে প্রার্থী করে তৃণমূল রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে রাজ্যের দুই প্রবীন মন্ত্রীকে৷ বাকি 2 আসনে প্রার্থী হতে চলেছেন গত লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়া দীনেশ ত্রিবেদি এবং অর্পিতা ঘোষ৷ রাজ্য সরকারের এই দুই মন্ত্রী হলেন, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায় গত লোকসভা নির্বাচনে বাকুঁড়া কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু পরাজিত হন৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষেত্রে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জ কেন্দ্রে থাকতে পারে বৃহত্তম চমক ৷

Previous articleফের আর্জি খারিজ, তারপরও নির্ভয়া-দোষীদের ১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসি নিয়ে সংশয়
Next articleরবীন্দ্রনাথ নেতাজিকে সেদিন যা বলেছিলেন