
কলকাতা পুরসভার ভোটে তৃণমূলের টিকিট পেতে হলে এবার প্রশান্ত কুমারের ছাঁকনি দিয়ে গলতে হবে প্রথমেই৷ সেখানে আটকে গেলে যত ‘ডাকসাইটে’ কাউন্সিলর-ই হোন, এবার বাদ পড়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ সেই ছাঁকনিই কলকাতায় তৃণমূলের ৫০ শতাংশ কাউন্সিলরের ঘুম কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে৷

কলকাতা পুরসভার নির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলরদের ৫০ শতাংশই আসন্ন পুরভোটে দলের টিকিট পাচ্ছেন না৷
প্রশান্ত কিশোরের এক সমীক্ষার ভিত্তিতেই দল প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ওই সমীক্ষায়, তৃণমূলের বর্তমান কাউন্সিলরদের কার্যকলাপ, গত ৫ বছরে তাঁদের ভূমিকা, মানুষের সঙ্গে ব্যবহার, আচরণ, স্বজনপোষণ, সম্পদ সৃষ্টি সবই সমীক্ষা করে দেখা হয়েছে। জানা গিয়েছে, পিকে-র সমীক্ষায় ফেল করেছেন কলকাতার ৫০ শতাংশ তৃণমূল কাউন্সিলরই৷ এই রিপোর্টের ভিত্তিতে তৃণমূল শীর্ষস্তরে পিকে-র পরামর্শ এবং সুপারিশ, কলকাতার ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ নির্বাচিত কাউন্সিলরকে বদল করতে হবে, না হলে পুরভোটে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে তৃণমূল।
কলকাতা-সহ রাজ্যের শতাধিক পুরসভায় ভোটের ঢাকে কার্যত কাঠি পড়েছে৷ একুশের বিধানসভা ভোটের আগে এই মিনি বিধানসভা ভোটে দলকে ঝালিয়ে নিতে চাইছে শাসক তৃণমূল৷ রাজ্যের শাসন ক্ষমতা দখলে রাখতে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ তৃণমূল ৷ সে কারনেই ভাবমূর্তি নিয়ে এলাকায় প্রশ্ন থাকা কাউকেই কলকাতায় এবার প্রার্থী করছে না ঘাসফুল শিবির৷ এ ধরনের বিতর্কিত কাউন্সিলর খুঁজতেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো টিম-প্রশান্ত কিশোরকে৷ গত লোকসভা ভোটে কলকাতার প্রায় ৫৫টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে ছিলো তৃণমূল। পিছিয়ে থাকার কারণ খুঁজতেও প্রাথমিক অন্তর্তদন্ত হয়েছে৷ সেই সমীক্ষা শেষ করে পিকে সম্প্রতি রিপোর্ট তুলে দিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষস্তরে৷ জানা গিয়েছে, রিপোর্টে প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, কলকাতায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কাউন্সিলর বদল না হলে পুরভোটে খারাপ অভিজ্ঞতা হবে তৃণমূলের। সেই রিপোর্ট হতে পেয়ে বিস্মিত শীর্ষমহল৷ দলের মধ্যেই যে এত বিপুল সংখ্যক ‘অভিযুক্ত’ কাউন্সিলর আছেন, তা আগে আঁচই করতে পারেনি হাই কম্যাণ্ড৷ তবে বিস্ময় কাটিয়ে কড়া সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছে দল৷ সূত্রের খবর, পিকে’র রিপোর্ট অনুসারে দল ইতিমধ্যেই ভাবনা শুরু করেছে, এবার কে টিকিট পাবেন, কে পাবেন না। যদিও গোটা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- ই৷ সূত্রের খবর, মার্চ মাসের মাঝামাঝি কলকাতা পুরভোটে দলের প্রার্থীপদ চূড়ান্ত হয়ে যাবে৷

লোকসভা ভোটের পর তৃণমূল নেত্রী অসংখ্যবার বলেছেন,জনমানসে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, এলাকায় পরিচিতি এবং সাংগঠনিক শক্তি আছে, এমন ব্যক্তিকেই এবার কলকাতা-সহ অন্যান্য পুরভোটে প্রার্থী করতে চায় তৃণমূল৷ খড়্গপুর, করিমপুর এবং কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী দেওয়ায় ৩টিতেই তৃণমূল জয়ী হয়। বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের খড়্গপুর আসনও ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। সেই ফর্মুলাই পুরভোটে প্রয়োগ করতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, সাংগঠনিক শক্তি আছে, এলাকায় সুনাম রয়েছে এমন ‘যোগ্য’ ব্যক্তিদের খুঁজছেন তিনি৷ জানা গিয়েছে, সুপ্রিমোর এ ধরনের শর্ত পূরণ করতে পারছেন, এমন প্রার্থীর খোঁজে দ্বিতীয় দফায় সমীক্ষা শুরু করতে চলেছেন প্রশান্ত কিশোর৷ ওয়ার্ড ধরে ধরে এই সমীক্ষা চালানো হবে৷
এই সমীক্ষার রিপোর্ট দলের শীর্ষনেতৃত্বের কাছে জমা পড়ার পর কলকাতায় দলের প্রার্থীপদ চূড়ান্ত করবে তৃণমূল হাই কম্যাণ্ড বলে জানা গিয়েছে।

তবে, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত৷ অস্বচ্ছ ভাবমূর্তি, উগ্র আচার-আচরন, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সন্দেহজনক পথে সম্পদবৃদ্ধির কারনে
কলকাতায় এবার প্রার্থী হতে পারছেন না অসংখ্য তৃণমূল কাউন্সিলর, এর মধ্যেই আছেন একাধিক মেয়র পারিষদ ও বরো- চেয়ারপার্সনও৷

আরও পড়ুন-KMC vote 131: শোভনের আঁতুর ঘরে ঘাসফুলের প্রার্থী এবার রত্না?
