দ্য আনসাঙ হিরো… যার কথা পড়লে, জানলে, সান্নিধ্যে এলে আপনিও পাল্টে যেতে পারেন!

সন্ন্যাস ও সন্ন্যাসী শব্দ দুটি বড্ড ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। কোথায় যেন গতানুগতিকতায় ভেসে যাওয়া আর একটি ‘নোবেল প্রফেশন’ সন্ন্যাস। কিন্তু কেউ কেউ তো অন্যরকম ভাবেন, আলাদা খাতে জীবনকে বইয়ে নিয়ে যান। সামনে যদি সাজানো জীবনের প্রতিচ্ছবিও থাকে, তবু তিনি অনায়াসে সব কিছু ছেড়ে ব্যক্তি থেকে নৈর্ব্যক্তিক হয়ে স্বামীজির ভাবনা-চিন্তা-মননকে সামনে রেখে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন। এদের জন্য নিশ্চিতভাবে স্বামী বিবেকেনন্দের উত্তরসূরীরা গর্ব করতে পারেন।

কেউ বলছেন তিনি এ যুগের স্বামীজি। কেউ বলছেন বলিউডের আমির খান অভিনীত ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর আধুনিক র‍্যাঞ্চো তিনি। নাম স্বামী কৃপাকরানন্দ। বন্ধুরা এখনও যাকে দেবতোষ চক্রবর্তী হিসেবেই চেনেন। যার নামের পাশে অনায়াসে তাঁরা বসিয়ে নিতে পারেন ব্রিলিয়ান্ট, মারভেলাস, দ্য আন সাঙ হিরো… তাঁর সহপাঠীর করা সেই পোস্ট এখন মানুষের শেয়ার পোস্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেবতোষ ওরফে আজকের কৃপাকরানন্দজিকে নিয়ে অতীতের মার্জার সরণিতে চলুন আমরাও হাঁটি… বন্ধুর কলমে…

দেবতোষ ১৯৮৯-এর মাধ্যমিক ব্যাচ। রাজ্যে হয়েছিল পঞ্চম। ‘৯১-এর উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে সপ্তম। সে বছরই জয়েন্টে মেডিক্যাল র‍্যাঙ্ক ১৭। ঠিকানা হলো এনআরএস। আমার রুম মেট, ফার্স্ট ইয়ারের একেবারে শেষ দিকে। হস্টেলের পাণ্ডব বর্জিত সাউথ গ্রাউন্ড ফ্লোর। ওর বাবা সে সময়ে রাইটার্সের পদস্থ অফিসার। মা সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা। অভাব নয়, স্বচ্ছলতা ওর জীবনের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিল। কিন্তু ওর আচরণে কোনওদিন কেউ বোঝেনি। পারিবারিক মূল্যবোধ আর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষা ওকে নম্রতা দিয়েছিল। ও যেখানেই যেত, সেখানেই সেরা। অসাধারণ গাইত, সৌম্যকান্তি দেখতে ছিল, অভিনয়টাও ভাল করত, কবিতা লিখত, অসাধারণ ছবি আঁকত। আর বলতো অসাধারণ। আমাদের কোনও আলোচনায় ওর ধীর-স্থির-যুক্তিপূর্ণ কথা নিশ্চিত আলাদা মাত্রা যোগ করতো। কতো রাত এভাবে গিয়েছে জানি না। ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে উঠে দেখছি ওর ক্যানভাসে রাত জেগে আঁকা অসাধারণ ছবি। চারপাশে ছড়ানো ছিটানো রঙ, প্যাস্টেল, ইজেল… অল্প পড়তো, অথচ ওই এক নম্বর। রাগ সঙ্গীতের যে কোনও রাগ যেন ওর কণ্ঠে যে কোনও সময়ে খেলতে পারে। তো এমবিবিএস পাশ করার পর রেজিস্ট্রেশন। এখানকার পাঠ চুকিয়ে ও চলে গেল দিল্লির এইমসে এমডি পড়তে। হার্ট স্পেশালাইজেশন। দু’বছর শেষ করেই গবেষণা করতে গেল মার্কিন মুলুকে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গবেষণা। তখনও যোগাযোগ ছিল। তারপর তার কেটে গেল। স্বামীজির শিকাগো যাত্রার সঙ্গে যেন মিলেমিশে একাকার। কিন্তু কোথায় গেল প্রতিভাধর দেবতোষ?

প্রায় বছর দশেক পর ২০০৮-২০০৯-তে খবর পেলাম দেবতোষ মহারাজ বেলুড় মঠের ‘আরোগ্য নিকেতন’-এর দায়িত্ব নিয়েছেন। জানতে পারার পরের দিনেই আমাদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। মাঝে শুধু বয়ে গিয়েছে একটা দশক। কাকে দেখছি? মুণ্ডিত মস্তক, গেরুয়া বসন, শরীরে যেন কোন এক আভা! সন্ন্যাসী। ঐতিহ্য মেনে সহপাঠীকে প্রণাম করতে গেলাম। আমার হাত ধরে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিল দেবতোষ, ভুল বললাম স্বামী কৃপাকরানন্দ। আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে সে হতে পারত বিখ্যাত ডাক্তার, অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, গায়ক, লেখক! সে কিনা সব ছেড়ে মানুষের সেবায়!

এতো নেই নেই কিছু নেইয়ের মধ্যে দেবতোষরাই তো বাঁচার ইচ্ছাকে জাগিয়ে রাখেন। প্রেরণা। নমস্কার আর শ্রদ্ধা ‘এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদ’-এর পক্ষ থেকে।

Previous articleরানুকে নিয়ে হিমেশের নতুন গান, সঙ্গে গাইলেন কে জানেন!!
Next articleবই ‘বেস্টসেলার’ বাড়ি বসে শুনছেন সৌমিত্র