
প্রবেশ সাহিব সিং বর্মা৷

পশ্চিম-দিল্লি কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ৷ ১৯৯৬ সালে ২ বছর ২২৮ দিনের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সাহিব সিং বর্মা৷ প্রয়াত সেই নেতার পুত্র এই প্রবেশ বর্মা৷

এবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে বিজেপি’র তরফে দাবিদার ছিলেন ৭-৮ জন৷ এই এততো দাবিদার সামলাতে না পেরেই এবারের নির্বাচনে কাউকে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ পদে প্রোজেক্ট করার সাহস দেখাতে পারেনি বিজেপি৷ ২০১৫-র নির্বাচনে বিজেপি ভোটে গিয়েছিলো প্রাক্তন IPS কিরন বেদিকে মুখ্যমন্ত্রী- পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষনা করে৷ যদিও সেই ভোটে কিরন বেদি পরাজিত হয়েছিলেন ২৪০০ ভোটে৷ এই প্রবেশ সাহিব সিং বর্মা এবারের নির্বাচনে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম জোরালো দাবিদার ছিলেন৷

এবারের ভোটপ্রচারে বিজেপির যে ক’জন নেতা কু-কথার জোয়ার এনেছিলেন, প্রবেশ বর্মা সেই তালিকার উপরের দিকেই ছিলেন৷ প্রকাশ্য সভায় প্রবেশ বর্মা একাধিকবার কুরুচিকর এবং উসকানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন৷ কখনও শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের ধর্ষক ও খুনি বলে, আবার কখনও অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘জঙ্গি’ ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন এই প্রবেশ বর্মা৷ দিল্লির বিদায়ী উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিশোদিয়ার বিরুদ্ধেও আপত্তিকর কথা তিনি বলেছিলেন৷ নির্বাচন কমিশন পর পর দু’বার এসব উক্তির জন্য প্রবেশ বর্মাকে সতর্ক করলেও দল হিসাবে বিজেপি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, উল্টে মজা লুটেছে৷ এ সব কুরুচিকর কথা বলে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বেশ একটা ‘হিরো’ ইমেজ পেয়ে যান প্রবেশ বর্মা৷
প্রবেশ বর্মা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম-দিল্লি কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন৷ প্রবেশ পেয়েছিলেন ৮,৬৫,৬৪৮ ভোট৷ শতাংশের হিসাবে ৬০.০৫% ভোট৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের মহাবল মিশ্র পেয়েছিলেন ২,৮৭,১৬২ ভোট৷ শতাংশের হিসাবে ১৯.৯২% ভোট৷ তৃতীয়স্থানে ছিলেন AAP প্রার্থী বলবীর জাখর৷ পেয়েছিলেন ২,৫১,৮৭৩ ভোট, শতাংশের হিসাবে ১০.৯১% ভোট৷

পশ্চিম-দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রটি ১০টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত৷ এগুলি হলো, মাদিপুর, রজৌরি গার্ডেন, হরি নগর, তিলক নগর, জনকপুরী, উত্তম নগর, বিকাশপুরী, দ্বারকা, মাতিয়ালা এবং নজফগড়৷

মূল বিষয়টি এবার৷ প্রবেশ বর্মা যে লোকসভা কেন্দ্র থেকে ৫,৭৮,৪৮৬ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন, সেই কেন্দ্রটি তো নিশ্চিতভাবেই বিজেপির দুর্গ৷ তো, এই নির্বাচনে ওই ১০ বিধানসভা কেন্দ্রে কী ফল করেছে বিজেপি ?
তথ্য বলছে, মাদিপুর, রজৌরি গার্ডেন, হরি নগর, তিলক নগর, জনকপুরী, উত্তম নগর, বিকাশপুরী, দ্বারকা, মাতিয়ালা এবং নজফগড়, এই ১০ কেন্দ্রেই শোচনীয়ভাবে হেরেছে বিজেপি৷ সাংসদ, বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার, সাহিব সিং বর্মা’র মতো নেতার পুত্র এই প্রবেশ বর্মা’র এই শোচনীয় হাল কেন হলো?

উত্তর দিয়েছেন পশ্চিম-দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটদাতারাই৷ তাঁরা বলেছেন, প্রবেশ বর্মা’র কু-কথার জবাব দেওয়া হয়েছে৷ প্রবেশের দল এসব কথার প্রতিবাদ করেনি৷ কিন্তু ভোটদাতারা বুঝিয়েছেন, রাজনীতিতে কু-কথা বলা বন্ধ করতে হবে নেতাদের৷ সুস্থ মানসিকতাসম্ন্ন এবং রুচিশীল না হলে সেই নেতা বা জনপ্রতিনিধিকে প্রত্যাখ্যান করতে, এই মুহুর্তে সচেতন ভোটাররা তৈরি৷
রাজনীতির আঙ্গিনাকে কলুষমুক্ত করার যে বার্তা দিল্লির ভোটাররা এবার দিয়েছেন, তা থেকে এ রাজ্যের রাজনৈতিক নেতা বা জনপ্রতিনিধিরা শিক্ষা না নিলে, তাদের শেষের সেই সব দিন বড়ই ভয়ঙ্কর হবে৷
