সারদার ঘাটাল মামলা নিয়ে ফেসবুকে কী লিখলেন কুণাল?

প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ সারদার ঘাটাল মামলা নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন। তাতে আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবরের তথ্যবিভ্রান্তির কথা বলা হয়েছে। কুণাল অবশ্য বলেছেন,” সাংবাদিকদের ভুল হতেই পারে। তবে যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই ঘটনাটি স্পষ্ট করে দিলাম।”

ফেসবুকে কুণাল লিখেছেন:

ঘাটালের সারদামামলা ও সিবিআই

6 মার্চ 2020 শুক্রবারের আনন্দবাজার পত্রিকার 3 পাতায় ” কুণালের সারদা মামলায় সিবিআই” শীর্ষক একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।

আমি দীর্ঘকাল সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। জানি, সাংবাদিকের ভুল হতেই পারে। এই ক্ষেত্রে যেহেতু আমি সংক্রান্ত কিছু তথ্য ও বিষয়গত ত্রুটি রয়েছে এবং এর ফলে কিছু বিভ্রান্তিকর ধারণা তৈরির অবকাশ আছে, তাই বিষয়টি সংক্রান্ত পোস্ট করতে বাধ্য হলাম। সকাল থেকেই কিছু ফোন ও বার্তা পেয়েছি। বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া ভালো।

প্রকাশিত খবরের দ্বিতীয় লাইনেই লেখা হয়েছে,” অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষকে সারদার এই মামলায় যুক্ত করতে চেয়ে আবেদন করেছিল সিবিআই। বৃহস্পতিবার ঘাটাল এসিজেএম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সপ্তবর্ণা সেনগুপ্ত তাতে সম্মতি দিয়েছেন।”

এই বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল।
আমাকে যুক্ত করতে চেয়ে কোনো আবেদন সিবিআই করে নি। ফলে আদালতের তাতে সম্মতি দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

বিষয়টি হল:
ঘাটাল আদালতে এই সারদা মামলাটি 2013 সালের। এটি রাজ্য সরকার অর্থাৎ রাজীব কুমারের সিট-এর মামলা।
2014 সালে আমাকে গ্রেফতার দেখানো হয় ( shown arrest)। আমাকে জেরাও করা হয় নি। দশ-বারো দিনের মাথায় আমার জামিন হয়ে যায়।
পরে এই মামলায় ঘাটাল কোর্টে গিয়ে আমি নিয়মিত নির্ধারিত দিনে উপস্থিত থাকি।

সিআরপিসি 167(5) অনুযায়ী কাউকে গ্রেপ্তারের 2 বছরের মধ্যে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট না দিলে আদালত তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন।
যেহেতু দু’বছরের বদলে এক্ষেত্রে ছ’বছর হয়ে গেছে, আমার বিরুদ্ধে কোনো চার্জশিট জমা পড়ে নি, তা এই আইন অনুযায়ী আমার অব্যাহতি চেয়ে আমার আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী ( খবরে লেখা ভট্টাচার্য নয়) আদালতে আবেদন করেন। রাজ্য সরকারের আইনজীবীর সৌজন্যে সেই পিটিশনের ফয়সালা এখনও হয় নি।

ইতিমধ্যে 10/2/20 তারিখে সিবিআই ঘাটাল আদালতে আবেদন করে বলে তারা গোটা মামলাটি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে নিয়ে তাদের আর সি 4 মামলার সঙ্গে যুক্ত করতে চায়। ফলে মামলাটি এসিজেএম ঘাটাল কোর্ট থেকে এসিজেএম আলিপুরের এজলাসে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।

বৃহস্পতিবার ঘাটাল কোর্টে সংশ্লিষ্ট সব শিবিরের কিছু কথা হয়। যা শুনেছি, সিবিআই চেয়েছে অবিলম্বে মামলাটি তাদের হাতে যাক। এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় তাদের হাতিয়ার। আমার আইনজীবী চেয়েছেন 167(5) আবেদনটি গৃহীত হোক। রাজ্য সরকারি আইনজীবী সেটি গ্রহণ না করে ঝুলিয়ে রাখার পক্ষে। কিন্তু আমার পক্ষে কিছুদিন অন্তর অনন্তকাল ধরে ঘাটাল কোর্টে গিয়ে উপস্থিত হওয়া যন্ত্রণাদায়ক। সরকারি আইনজীবী যখন 167 পিটিশনে সাড়া দিতে নারাজ, তখন আমার আইনজীবীর কাছে আবেদনটি সাময়িক স্থগিত রেখে মামলাটি সিবিআইর হাতে যেতে দেওয়াটাই সমীচীন বলে মনে হয়েছে। তাতে ঘাটালের বদলে আলিপুর যেতে হবে। ফলে অয়ন পিটিশনটি মামলার রেকর্ডে নথিভুক্ত রেখে মামলা হস্তান্তরে সম্মতি দিয়েছে। এর পর তিন পক্ষ- রাজ্য সরকারি আইনজীবী, সিবিআই আধিকারিকরা এবং আমার আইনজীবী একসঙ্গে বিচারকের কাছে যান এবং মামলাটি আলিপুরে সিবিআইয়ের মামলায় সংযুক্ত করার কথা বলেন। বিচারক তাতে সম্মতি দেন।

ফলে ঘাটাল থেকে মামলাটি আলিপুর আদালতে চলে আসছে। আর কিছু না হোক, ঘাটাল পর্যন্ত দৌড়তে হবে না !

এর মধ্যে প্রতিবেদক ” কুণাল ঘোষকে যুক্ত করতে চেয়ে আবেদন করেছিল সিবিআই। আদালত তাতে সম্মতি দিয়েছেন”- বিষয়টি কোথা থেকে পেলেন, বুঝলাম না।

নতুন করে কোনো মামলা সিবিআই নেওয়া আর কোনো ব্যক্তিকে যোগ করতে চাওয়ার মধ্যে সবদিক থেকেই বিস্তর ফারাক আছে।

এই মামলা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। ফলে এই ধরণের সূক্ষ্ম বিভ্রান্তিও কাম্য নয়।

সিবিআই ঠিক কী চেয়েছিল, আদালতের সেই পিটিশনের কপি আমি এই লেখার সঙ্গে দিলাম। prayer অংশটিতেই দেখবেন সিবিআই মামলা চেয়েছে না ব্যক্তি চেয়েছে।

আমি জ্ঞানত কোনো অন্যায় করি নি।
রাজ্য বা কেন্দ্র, যে সংস্থাই তদন্ত করুক, আমি সহযোগিতা করে এসেছি। এখনও করব।

আনন্দবাজারের সাংবাদিক ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করেছেন বলে মনে করি না। কোনোভাবে ভুল হয়েছে। আমি কোনো বাদপ্রতিবাদে ঢুকছি না।
যেহেতু সকাল থেকে অনেকে জানতে চেয়েছেন, তাই জানালাম।
প্রসঙ্গত, এবিপি আনন্দ এবং নিউজ 18 যা দেখিয়েছে, তাতে কোনো ভুল নেই।

 
Previous articleদোলের আগে ঝলমলে আকাশ, স্বস্তি রাজ্যবাসীর
Next articleনারী দিবসকে কেন্দ্র করে রাজপথে নেমে “জেল ভরো” কর্মসূচি বাম মহিলা সংগঠনের