BREAKING: রাজ্যসভায় তৃণমূলের নিশ্চিত দীনেশ-মনীশ-সুব্রত, চতুর্থ আসনে মৌসম বা বাশার

এবার রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে ৫টি আসন শূন্য হয়েছে, অঙ্কের বিচারে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৪টি আসনে সরাসরি জয় পেতে চলেছে। হিসাব বলছে, পঞ্চম আসনেও নির্ধারণকারী শক্তি হিসেবে কাজ করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর দল। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে জল্পনা কারা তৃণমূলের টিকিটে এবার বাংলা থেকে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন? তৃণমূল শিবিরের খবর, অন্য ক্ষেত্রের কোনও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি নন, এবার তারা রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে একেবারে রাজনীতির অলিন্দে থাকা ব্যক্তিত্বদেরই।

এবার তৃণমূল তাদের নিশ্চিত আসনে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে দীনেশ ত্রিবেদী, মনীশ গুপ্ত এবং সুব্রত বক্সিকে। প্রথমজন অর্থাৎ দীনেশ ত্রিবেদী ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে অতীতে সাংসদ হয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য দলবদলু অর্জুন সিংয়ের কাছে হারতে হয়েছে তাঁকে। তাই দীনেশের অভিজ্ঞতা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দলীয় আনুগত্যর কথা মাথায় রেখে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে তৃণমূল।

দ্বিতীয়জন, অৰ্থাৎ মনীশ গুপ্ত এবারও রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। ২০১১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে পরিবর্তনের বছরে প্রথমবারের জন্য সংসদীয় রাজনীতিতে ভোটে দাঁড়িয়ে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হারিয়ে ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রথম মন্ত্রিসভার বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর কাছে হেরে যান তিনি। যা নিয়ে দলের মধ্যেই বিতর্ক রয়েছে। এই পরাজয়কে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হিসেবেই চিহ্নিত করে দল। কিন্তু রাজ্যের প্রাক্তন আমলা মনীশ গুপ্তকে পুনর্বাসন দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনীশ গুপ্তের যোগ্যতা বিচার করে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান তিনি। এবার মেয়াদ ফুরোনোর পর ফের তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে তৃণমূল।

তৃতীয়জন অর্থাৎ, সুব্রত বক্সি এবার রাজ্যসভায় যাচ্ছেন তৃণমূলের টিকিটে। দীর্ঘদিন ভবানীপুরের বিধায়ক ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর নিজের আসন ছেড়ে দিয়েছিলেন সুব্রত বক্সি। পরবর্তী সময় দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর পরিবর্তে দক্ষিণ কলকাতা থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন মালা রায়। এবং ব্যাপক মার্জিনে জিতেছিলেন। সেই সুব্রত বক্সি এখন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। এবার তাঁকে সসম্মানে রাজ্যসভায় পাঠাতে চলেছে ঘাসফুল শিবির।

এদিকে, বিধায়ক সংখ্যার বিচারে রাজ্যসভায় চতুর্থ আসনও নিশ্চিত তৃণমূলের। এক্ষেত্রে দুটি নাম ঘোরাফেরা করছে তৃণমূল শিবিরে। প্রথমজন গনি খান চৌধুরীর ভাগ্নি, রুবি নূরের কন্যা তথা মালদার প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ আইনজীবী মৌসম বেনজির নূর। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে দল বদলে তিনি তৃণমূল এসেছিলেন এবং নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যদিও হারতে হয়েছিল তাঁকে। এবার মালদার এই তৃণমূল নেত্রীকে রাজ্যসভার পাঠাতে চাইছে শাসক দল।

তবে মৌসমের রাজ্যসভায় যাওয়ার পথ দীনেশ ত্রিবেদী-মণীশ গুপ্ত বা সুব্রত বক্সির মতো মসৃণ নয়, দলীয় মহলে তাঁর লড়াই চলছে আবুল বাশার-এর সঙ্গে। জয় নিশ্চিত চতুর্থ আসনে তৃণমূল একজন সংখ্যালঘু ব্যক্তিত্বকে রাজ্যসভার পাঠাতে চাইছে। সম্প্রতি, বিশিষ্ট লেখক আবুল বাশারের সঙ্গে তৃণমূলের একটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের একাংশ চাইছে আবুল বাশারকে রাজ্যসভায় পাঠাতে। আবার অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ লবি চাইছে মৌসম বেনজির নূরকে রাজ্যসভায় পাঠাতে। উত্তরবঙ্গ লবির যুক্তি, মৌসমের সংসদীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা আছে। এবং মালদায় তৃণমূলের ব্যাপক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে। যার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেও মালদা সফর করতে হয়েছিল কিছুদিন আগেই। সেক্ষেত্রে মালদা থেকে রাজ্যসভায় একজন গেলে, আখেরে তৃণমূলেরই লাভ। সুতরাং, নিশ্চিত চতুর্থ আসনে আবুল বাশারকে কিছুটা পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছেন মৌসম। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে দল নেত্রীর উপর।

এদিকে, বাংলার পঞ্চম আসন নিয়ে জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে। অর্থাৎ যে আসনে প্রকৃত নির্বাচনটা হবে। যেহেতু, লোকসভা নির্বাচনে এক ধাক্কায় তৃণমূল অনেকগুলো আসন হারিয়েছিল, তাই সংসদে নিজেদের সাংসদ বাড়াতে চায় রাজ্যের শাসক দল। রাজ্যসভায় চারটি আসনে নিশ্চিত জয়ের পরও পঞ্চম আসনকে পাখির চোখ করছে তারা। আর এই আসনে উঠে আসছে তৃণমূলের এক প্রাক্তন সাংসদের নাম। যিনি রত্না দে নাগ। গত লোকসভা নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্র থেকে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়-এর কাছে হারতে হয়েছিল তাঁকে। তৃণমূলের একাংশ চাইছে রত্নাদেবীকে রাজ্যসভা নির্বাচনে লড়িয়ে দিতে।

আর রাজ্যসভা ভোটে মূল আলোচনা-রসায়ন সবকিছুই এই পঞ্চম আসনকে কেন্দ্র করে। বিজেপি খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যসভা ভোট থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখবে। কারণ, সংখ্যার বিচারে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। আসলে বামেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গড়িমসির ফলে রাজ্যসভার শূন্য হওয়া পঞ্চম আসনকে ঘিরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী দুই রাজনৈতিক শিবিরে।

বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে রাজ্যসভার মনোনয়ন পর্ব। জানা গিয়েছে, তৃণমূল পরিষদীয় দলের তরফে ২০ সেট মনোনয়ন পত্র তোলা হয়েছে বিধানসভার সচিবালয় থেকে। আর তাতেই পঞ্চম আসন নিয়ে তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সিপিএমের প্রার্থী কংগ্রেসের সব বিধায়কের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে জোট প্রার্থীর সরাসরি জয় কঠিন হবে। এই পরিস্থিতি বিচার করে নিজেদের মনঃপুত প্রার্থী দিয়ে তৃণমূলের পক্ষে ভোটের খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

অঙ্ক বলছে, রাজ্য বিধানসভার ২৯৪ আসনের মধ্যে এক বিধায়ক প্রয়াত হওয়ায় মোট সদস্য ২৯৩। বিজেপির ৬ বিধায়কের ভোটে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেহেতু রাজ্যসভা ভোটে দলের হুইপ কার্যকর নয়, তাই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়করা ভোটে অনুপস্থিত থাকবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। ফলে রাজ্যসভায় ভোটার সংখ্যা ২৮০ কিংবা তার চেয়েও কমে যেতে পারে। এই অবস্থায় কোনও প্রার্থীর জয়ের জন্য ন্যূনতম প্রথম পছন্দের ভোটের পরিমাণও নেমে যেতে পারে। ফলে চারটি আসনে তৃণমূল একক শক্তিতে জয় নিশ্চিত করার পরে তাদের হাতে যে বাড়তি ভোট থাকবে, তা নিয়ে পঞ্চম আসনেও প্রার্থী বাছাইয়ে খেল দেখাতে পারে তৃণমূল।

Previous articleকরোনা ঠেকাতে মিড-ডে মিলের টাকায় স্কুলে সাবান-স্যানিটাইজার পাঠানোর নির্দেশ সরকারের
Next articleচিনে ভেঙে পড়ল হোটেল, ভিতরে আটকে করোনা-আক্রান্তরা