
ভণ্ডামি’র সব সীমা ছাড়িয়ে গেল আলিমুদ্দিন৷ নিজেদের ফেলা থুতু নিজেরাই চাটতে শুরু করেছে মরিয়া হয়ে৷ আর এই ভণ্ডামির শিকার দলের কর্মী-সমর্থকরাই৷ অথচ তাদের কোনও দোষই নেই৷

শনিবার, ২১ মার্চ,২০২০ তারিখে রাজ্য সিপিএমের মুখপত্র, “গণশক্তি”-র প্রথম পাতায়, ছাপা হলো, “মানুষের পাশে দাঁড়ান, আহ্বান মিশ্রের”, এই শিরোনামে একটি খবর৷ লম্বায় বড় খবরটি৷ প্রথম পাতার ফার্স্ট-ফোল্ডে ৮ম কলমের মাথা থেকে শুরু হয়ে খবরের টার্ণ গিয়েছে ২য় পাতায়৷ মিশ্র মানে এখানে সূর্যকান্ত মিশ্র, রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক এবং সিপিএমের পলিট ব্যুরোর সদস্য৷ তো, কী লেখা হয়েছে ওই খবরে ?

বলা হয়েছে, সিপিএম আগামী ২২মার্চ দেশজুড়ে ‘সংহতি দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, ওইদিন এ রাজ্যেও এই কর্মসূচি পালিত হবে ৷ গণশক্তি ওই প্রতিবেদনে লিখেছে, “করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং তার অর্থনৈতিক প্রভাবে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তখন মানুষের পাশে থাকার জন্য বামপন্থী কর্মীদের কাছে আবেদন জানিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র বলেছেন, এই মুহুর্তে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রাম৷ মানুষ যখন সমস্যায় এবং আতঙ্কে সহায়হীন ও দিশাহীন হয়ে পড়ছেন, তখন তাদের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করতে হবে৷ তাদের সমস্যায় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে৷ আন্তরিকভাবে পাশে থেকে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে৷”
গণশক্তি লিখেছে,
“কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যাতে করোনা মোকাবিলায় জনগনের সমস্যাগুলির দিকে দৃষ্টি দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেই দাবি নিয়ে আগামী ২২ মার্চ সারা দেশে জনগণের সংহতি দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছে সিপিআই(এম)৷ ” এই লাইনগুলি সূর্যবাবুর বক্তব্য হিসাবেই ২১ মার্চ ‘গণশক্তি’ লিখেছে৷

সিপিএমের এই রাজনৈতিক কর্মসূচির কথা, সিপিএমের দলীয় মুখপত্র গণশক্তি-তে প্রকাশিত হওয়ামাত্রই রাজ্যজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ করোনা-যুদ্ধে গোটা দেশ যখন এক হয়ে লড়াই করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন সিপিএম এই করোনা নিয়েই সস্তা,সংকীর্ণ রাজনীতি করার নিন্দা শুরু হয়ে যায়৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় সিপিএমের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন, প্রচারসর্বস্ব, ধান্দাবাজির বিরুদ্ধে সর্বস্তরে ছি: ছি : শুরু হয়৷
কিন্তু ততক্ষণে টিউব থেকে পেস্ট বাইরে চলে এসেছে৷ তা তো আর ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়৷ তাই শনিবার দুপুর থেকে সিপিএম মনোভাবাপন্ন কিছু অর্ধশিক্ষিত সোশ্যাল মিডিয়ায় বলতে শুরু করলো, এসবই মিথ্যা প্রচার ৷ সিপিএম ২২মার্চ কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেনি৷ সিপিএমের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এই মিথ্যা প্রচার চলছে৷ এই কথা বলার সময় সূর্যবাবুর ছবি দেওয়া এক ‘মহান বাণী’-ও প্রচারের চেষ্টা হলো৷ সেখানে সূর্যবাবুর মুখে এমন সব কথা বসানো হলো, যা সূর্যবাবু শুক্রবার দলের কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে দেওয়া ভাষণে বলেননি৷ বললে, ‘গণশক্তি’ এততো কথা লিখলো, আর এসব ‘বাণী’ এডিট করতো না৷ আর তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, সূর্যকান্ত মিশ্রকে আর সহ্য করতে পারছে না দল, তাই দলীয় মুখপত্রই ওনার মুখে “উনি যা বলেননি” তাই বসাচ্ছে৷
ওদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনা কয়েক তথাকথিত সিপিএম কর্মী বা সমর্থক তাদের অশিক্ষা-অর্ধশিক্ষা নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করে, কার্যত আরও ডোবাচ্ছে দলকে, দলের রাজ্য সম্পাদককে, দলের মুখপত্র ‘গণশক্তি’-র বিশ্বাসযোগ্যতাকে৷ এটা অবশ্য ওই দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷

কিন্তু, এবাব তো প্রশ্ন উঠছে, এই যে শনিবার সূর্যকান্ত মিশ্র দলীয় মুখপত্র “গণশক্তি”-তে বললেন যে, “এই কারনেই সিপিআই(এম) ২২ মার্চ রবিবার জনগনের প্রতি সংহতি দিবস পালন করবে এবং জনগণের স্বার্থে দাবিগুলি প্রচার করতে থাকবে ৷ রাস্তায় মাইক নিয়ে প্রচার, লিফলেট বিলি ইত্যাদি করা হবে৷” সেটা আজ রবিবার গোটা রাজ্যের কোথায় কোথায় হলো ? কোন ‘জনগণ’ সেই ‘মাইক নিয়ে প্রচার’ শুনতে রাস্তায় ছিলেন ? নিজে একজন চিকিৎসক হয়ে, এই কঠিন করোনা- পরিস্থিতিতে সোশ্যাল- ডিসট্যান্সিং উপেক্ষা করে
দলের কর্মীদের রবিবার রাস্তায় নেমে মাইক হাতে দলের দাবি প্রচার করতে নির্দেশ দিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র কোন সামাজিক দায়িত্ব পালন করলেন ? এসব কথা কোনও ‘বুর্জোয়া সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়নি৷ সিপিএম-বিরোধী কোনও রাজনৈতিক দলের অভিযোগও এসব নয়৷ শনিবারের গণশক্তি পড়লেই এ সব পাওয়া যাবে৷

এখানেই শেষ নয়৷ রবিবার, ২২ মার্চের ‘গণশক্তি’ আবার খবর করেছে, “পার্টিকে হেয় করতে মিথ্যা প্রচার সোশ্যাল মিডিয়ায়”৷ এখানে দেখা যাচ্ছে সিপিআই (এম)-এর কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক মহোদয় বলছেন, ” ২২মার্চ কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচি আমাদের নেই৷”

এটা যদি ঠিক হয় তাহলে শনিবার দলের রাজ্য সম্পাদক মহোদয় যে বলেছিলেন, ২২ মার্চ “রাস্তায় মাইক নিয়ে প্রচার, লিফলেট বিলি ইত্যাদি করা হবে” – সেটি ভুল !
কি জটিল সমস্যা বলুন দেখি! দলের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য ছাপা হলো দলের মুখপত্রে এক রকম৷ আর দলের একটি জেলা কমিটির সম্পাদক ওই দলের মুখপত্রেই বললেন, “কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচি আমাদের নেই”৷
তাহলে কী দলীয় কর্মীরা নিজেদের বাড়িতেই মাইক লাগিয়ে প্রচার করলেন আর লিফলেট বিলি ইত্যাদি করলেন রবিবার ? হতেও পারে হয়তো !

সূর্যকান্ত মিশ্র একজন চিকিৎসক৷ ভয়াবহ এই করোনা-আগ্রাসনের সময়, যখন ভিড়- জমায়েত এড়িয়ে চলার সময়, তখন তিনি “রাস্তায় মাইক নিয়ে প্রচার, লিফলেট বিলি ইত্যাদি করা হবে” বলে কর্মসূচির ডাক দিলেন কোন আক্কেলে, তা জানার কৌতূহল হচ্ছে৷ নাকি, ‘গণশক্তি’-ই সিপিএমকে নিয়ে ‘অসত্য-প্রচার’ করছে ? তা জানারও কৌতূহল হচ্ছে৷

আসলে এই মূহুর্তের রাজ্য সিপিএমে নেতৃত্ব বলে অবশিষ্ট কিছুই নেই৷ তবে জেলায় জেলায় এখনও অবশ্যই কিছু ডেডিকেটেড কর্মী-সমর্থক আছেন, যারা এখনও স্বপ্ন দেখেন, একদিন সুসময় ফিরবে৷ আর তাদের কাঁধে পা রেখেই আলিমুদ্দিন আজ পার্টি-পার্টি যাত্রাপালা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ভণ্ডামির পর ভণ্ডামি করে যাচ্ছে৷

সেদিন সম্ভবত আর বেশি দূরে নেই এই নেতৃত্ব যেদিন সিপিএমকে বামফ্রন্টের দুই শরিক,
বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস এবং আরসিপিআইয়ের সঙ্গে এক বেঞ্চিতে বসিয়েই ছাড়বে৷

—-