পার্ক স্ট্রিটে জন্মদিনের পার্টি: পোস্ট আসল না ভুয়ো?

সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট, সেখানে কিছু ছবি, আর সেই ছবি বেশ কিছু মানুষের হাতে হাতে ঘুরে বেড়ানোয় ঘরবন্দি আমজনতার মধ্যে ধন্ধ, প্রশ্ন ও বিস্ময় তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ছবিগুলি কি আসল? নাকি নেহাতই কিছু মানুষকে বিতর্কের বিপাকে ফেলতেই এগুলি পোস্ট করা হয়েছে! যদি সত্য হয় তাহলে মারাত্মক। আর ভুয়ো হলে আরও মারাত্মক। কারণ, মিথ্যার জাল বুনে প্রশাসনকেই হেয় করার প্রচেষ্টা চলছে!

নাম জ্যোতি গুরটু সাপ্রু। ভদ্রমহিলার ফেসবুক পরিচয় অনুযায়ী তিনি কলকাতার বাসিন্দা। কিন্তু মূলত শ্রীনগরের মেয়ে। কাশ্মীরি, বাংলাসহ গোটা পাঁচেক ভাষা জানেন। আর জন্মদিন ২৫ মার্চ। এতদূর পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর রাতে তাঁর একটি পোস্ট বিতর্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। কী আছে তাঁর পোস্টে? মোট ২১টি ছবি। সম্ভবত জ্যোতির জন্মদিনের পার্টির ছবি। পার্ক স্ট্রিটের ‘হার্ড রক’ রেস্তোরাঁর এই পার্টি ‘হয়েছিল, অন্তত তাঁর ছবি তাই বলছে। বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে ছবি। নাচ-গান-হুল্লোড়ের ছবি। যেমন হয় আর কি!

পোস্টে কী লিখেছেন জ্যোতি?… ” জানি না এটাই শেষ কিনা (ইমোজি)… মধ্যরাত, দিনটা ইতিহাসের পাতায় চলে গেল, গোটা দেশ লকড ডাউন…এই এক ঘোলাটে সময়ের মাঝখানেও আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। কারণ, আমার পরিবার আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা মিলে আমার জন্মদিনকে নানা রঙে রঙিন করে তুলল… হার্ড কাফে কলকাতাতে। #হ্যাপি বার্থ ডে # হ্যাপি নভরাত্রি # নভরে মুবারক টু অল (তিনটি ইমোজি)।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হল জ্যোতির পোস্ট করা ছবির একটিতে বেশ কিছু গণ্যমান্যর সঙ্গে এক আইপিএস অফিসারকেও দেখা যাচ্ছে। তিনি আর কেউ নন, এডিজি কারা পীযূষ পাণ্ডে। সোশ্যাল সাইটগুলিতে প্রশ্ন তুলছেন আমজনতা, আইন শুধু সাধারণের জন্য, আর লক ডাউনের সময় খোদ কারা কর্তা পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁয় লোক লস্কর নিয়ে পার্টি করছেন? দমদম জেল জ্বলছে, কয়েদিরা মরছে, আর কর্তা পার্টি করছেন! রাস্তায় লক ডাউনে ভ্যান বের করার জন্য তাহলে কেন শুধু শুধু পুলিশের ডান্ডা খেতে হবে বেচারা দিনমজুরকে! কিন্তু এই প্রশ্ন উঠলেও ‘এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ’ এ নিয়ে কারা কর্তার বিরুদ্ধে তীর নিক্ষেপ করতে পারছে না। কারণ, এই পার্টি হার্ড রক রেস্তোরাঁয় ২৫ মার্চ রাতেই হয়েছিল কিনা তা এই ছবি প্রমাণ করে না। ছবিতে দেখা গেলেও ছবিগুলি পরীক্ষিত নয়। ছবিতে তীর চিহ্ন দেওয়া ব্যক্তি পীযূষ পান্ডের মনে হলেও, এটাই কারা কর্তা, ছবির ফরেন্সিক তদন্ত ছাড়া তা বোঝা সম্ভব নয়। ‘এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ’ সেই কারণেই ছবিগুলি প্রকাশ্যে এনে জানাতে চাইছে, অবিলম্বে প্রশাসন এই ছবির সত্যতা সম্বন্ধে জানাক। ভুয়ো ছবি হলে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হোক ওই জ্যোতি সাপ্রুর বিরুদ্ধে। কারণ, শুধু কারা কর্তা নয়, প্রশাসনকে হেয় করার এটি জঘন্য চক্রান্ত। লক ডাউন ইন্ডিয়া চলাকালীন এই ছবি প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলে দেয়, তেমনি এই ঘটনা সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীন, মারাত্মক ও মহামারী আইন লঙ্ঘনের চরমতম উদাহরণ।

পুনশ্চ : জ্যোতি গুরটু সাপ্রুর প্রোফাইল থেকে স্ক্রিন শট নেওয়ার সময় সব ঠিকঠাক ছিল। পোস্টের পরেই প্রোফাইল লক। প্রোফাইল ছবিও নিরুদ্দেশ!!

Previous articleজনমানব শূন্য রাস্তা, অনাহারে দিন কাটছে নিরাশ্রয়দের
Next articleমুখ্যমন্ত্রীর করোনাযুদ্ধের তহবিলে ১০ লক্ষ টাকা অ্যাডামাসের