এবার ব্রাত্য হোক অনুরোধ, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

করোনা আপডেট :২৮ মার্চ, রাত ১০টা। বিশ্ব : আক্রান্ত ৬,১৪,০৭৫, মৃত ২৮,২৩৮। দেশ : আক্রান্ত ৯৩৩, মৃত ২২। রাজ্য : আক্রান্ত ১৭, মৃত ১

কণাদ দাশগুপ্ত

দুনিয়ার অন্য প্রান্তের আতঙ্ক আজ ধীরে ধীরে গ্রাস করছে আমাদের সমাজকেও৷ অথচ, এখনও আমাদের অনেকেই বিষয়টি হালকাভাবেই নিচ্ছে৷ আমাদের অনেকের মধ্যেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে বিন্দুমাত্র সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না৷ তাহলে আমরা ঠিক কী চাইছি?

এভাবে কি কোনও যুদ্ধ জেতা যায়? শত্রু যেখানে অজানা, লড়াই যেখানে ছায়ার সঙ্গে, সেখানে তো আমাদের আরও আগেই সতর্ক হওয়া দরকার ছিলো৷ যে কোনও যুদ্ধের ‘বেসিক’ নিয়ম, শত্রুকে অবজ্ঞা করা যাবে না, শত্রুকে বুদ্ধিমান ভাবতে হবে, শত্রুকে কখনও কখনও ভয়ও করতে হবে৷ এবং মুখ বন্ধ করে শুনে যেতে হবে দক্ষ সেনাপতির কথা এবং নির্দেশ৷
আমরা যখন এ সব শোনার বা মানার চেষ্টা করছিনা, তখন যুদ্ধ জয়ের আশা করছি কেন?

সমাজ যদি এতখানি দুর্বিনীত,অবাধ্য এবং অসংগঠিত হয়, তাহলে যুদ্ধজয়ের আশা পরিত্যাগ করে শত্রু’র পদতলে নতজানু হওয়াই তো আমাদের ভবিতব্য৷ লকডাউন অমান্য করে বিনা কারনে পথে নামা, জটলা করা, এমনকী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বা বসে খোশগল্প করার দৃশ্যও আমাদের নজরে আসছে৷ ওদিকে গুটি গুটি পায়ে শত্রুপক্ষ আমাদের ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে৷

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কেন লকডাউন, কেন সোশ্যাল- ডিসট্যান্সিং, তা এখন আমাদের কারোরই অজানা নয়৷ আমরা নানাভাবে জেনে গিয়েছি, করোনাভাইরাসটি এক মানুষের থেকে কাছাকাছি অন্য মানুষে ছড়ায় ‘ড্রপলেট’ অর্থাৎ ছোট ছোট ফোঁটার মাধ্যমে। করোনা-আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়েও এই ভাইরাস অতি ক্ষুদ্র জলীয় ফোঁটার মাধ্যমে বাইরে আসে৷ অসতর্ক মানুষ সেই ভাইরাস নিজের শরীরে বহন করে পৌঁছে দিতে পারে বহু দূরে। যেমনভাবে বিদেশ থেকে এ রাজ্যে ভাইরাস এসেছে৷ এ তথ্য বিশেষজ্ঞদের৷ এরপরও কিছু মানুষ নির্লিপ্ত হয়ে আগের মতোই জীবনযাপন করছে, লকডাউন বিধি তোয়াক্কা না করেই৷ আরও অনেকভাবে এই বিষ শরীরে ঢুকতে পারে৷ সে কারনেই বারবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বা Social Distancing- এর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষ সজ্ঞানে, বিনা প্রয়োজনে এ সবের ধার ধারছেন না৷ কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার তো বৃহত্তর ভাবনা ভাবছেই৷ অথচ আমরা আমাদের এইটুকু কর্তব্য পালন করতেই অনীহা দেখাচ্ছি৷ আমরা সবাই দায়িত্বটুকু ঠিকমতো পালন করলে আগামী দিনে আরও কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হত না৷ কিন্তু নিজেদের দোষেই আমরা কঠিনতর, কঠিনতম পরিস্থিতি ডেকে আনছি৷

আসলে এটা আমাদের সামাজিক সমস্যা৷ আমাদের অসংগঠিত বোধের সমস্যা৷ লকডাউন বা Social Distancing- এর বিষয়টি এখনও অনুরোধ-এর রয়েছে৷ তাই একশ্রেণীর শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষ এসব অনুরোধ কেয়ার করছেনা৷ এখন বোঝা যাচ্ছে স্কুলে কেন একসময়ে বেত-এর প্রচলন ছিলো৷ বাস্তব এটাই, আমাদের মানসিকতা আসলে ভৃত্যশ্রেণীর৷ আমরা হুকুম মানতে যতটা স্বচ্ছন্দ, অনুরোধ মানতে ততটা নই৷ তাই সময় এসেছে, হুকুম করার৷ সরকার বা সেনাবাহিনী আমাদের এ সব মানতে হুকুম করুক, তখন আমরা ল্যাজ গুটিয়ে সব কথা শুনবো৷ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ক্রমশ বাড়ছে৷ না হলে এভাবে এক পরিবারের দুধের শিশু-সহ ৫জনের সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হতে পারে ? দেশের শিক্ষিত উচ্চশ্রেণীর মানুষ যে কোয়ারান্টাইন ব্যাপারটাই বোঝেন না, এটা মানা অসম্ভব৷ মেরি কম, দুষ্ম্যন্ত সিং, কনিকা কাপুর বা বাংলার কিছু “তারকা”-র মতো দেশের সচেতন সমাজ, শিক্ষিত উচ্চশ্রেণীর মানুষ আজ কোয়ারান্টাইন ব্যাপারটাই মানছেন না৷ এবং বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ঘাড় ধরে না মানালে সমাজের একটা অংশ এ সব নিয়ম মানতে রাজি নন৷

দায়িত্বজ্ঞানহীনতা মাশুল দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে৷ দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া থামানো যাচ্ছে না৷ অন্যান্য দেশের থেকে ভারত তুলনায় ভালো অবস্থায় থাকলেও দেশবাসীর একাংশ সেই ভালো অবস্থার যেন অবসান চাইছেন৷ নির্দেশ না মেনে শহর থেকে সাধারণ মানুষ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ফিরে যেতে শুরু করেছেন৷ তাঁদের শরীর বেয়ে দেশের সর্বত্র ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া স্রেফ এখন সময়ের অপেক্ষা৷ এর পর তো রোগী বা রোগীর সংস্পর্শে আসা মানুষদের খুঁজে বের করাও দুঃসাধ্য হবে।

তাই সময় এসেছে, বোঝা যাচ্ছে, পরামর্শ বা অনুরোধে কাজ হবেনা৷ এবার আমাদের উপর আদেশ নেমে আসুক৷ সেই আদেশ অমান্য করলে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করা হোক৷ এই অপরাধে কঠোর শাস্তি দিয়ে, সে কথা আনা হোক সংবাদমাধ্যমে৷ আমরা চাকর-বাকরের জাত, ‘ইয়েস স্যর’ বা ‘জো হুজুর’ বলতেই যে বেশি ভালোবাসি৷ দেশ, রাজ্য তথা দেশবাসীকে বাঁচাতে কড়া বিধি জারি করা প্রয়োজন এখনই৷ এখনই জারি হোক কার্ফু, এখনই নজর রাখুক সেনাবাহিনী৷

এবার ব্রাত্য হোক অনুরোধ৷

Previous articleজরুরি পরিষেবায় যুক্ত ব্যক্তিদের আটকাচ্ছে পুলিশ, বিভ্রান্তি দূর করতে নগরপালের “ই–পাস”
Next articleকরোনা যুদ্ধে লকডাউন, দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে মনকে সজেজ রাখতে শুনুন সাগ্নিকের গান