Saturday, May 17, 2025

আমাকে মনে রাখেনি তো কি? আমরা গানটা তো ‘জাগল’: অভিমানী “বড়লোকের বিটি লো”-স্রষ্টা

Date:

Share post:

ব়্যাপার বাদশা ও পায়েল দেবের গাওয়া নয়া মোড়কে “বড় লোকের বিটি লো” গানটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কিন্তু বাংলার মাটির গন্ধ লেগে থাকা এই গানের স্রষ্টা আজও আড়ালেই। মিউজিক ভিডিওর কোথাও তাঁর নামের উল্লেখ নেই। তিনি প্রচারের আলো থেকে শতহস্ত দূরে থাকা শিল্পী রতন কাহার। লকডাউনে অশীতিপর শিল্পী গৃহবন্দি। সংসারে অর্থাভাব। তবু আজও তাঁর গান আবার এত প্রিয় জনপ্রিয় হওয়ায় চোখ ছলছল করে উঠল অভিমানী লোকগানের শিল্পী রতন কাহারের। বীরভূমের সিউড়ি পুরসভার সোনতোড় পাড়ার বাসিন্দা রতন কাহারের ভাদু গানে অবাধ বিচরণ। পাশপাশি, ঝুমুর, প্রভাতী কীর্তন বা লোকগানে- রতন কাহারের জুড়ি মেলা ভার। ১২শোর বেশি লোকগানের রচয়িতা তিনি। কিন্তু নিজে রয়ে গিয়েছেন প্রচারের আড়ালে।

১৯৭৬ সালে যে গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী, সেই “বড়োলোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল….” ১৯৭২ সালে লিখেছিলেন বীরভূমের ভূমিপুত্র রতন কাহার। গেয়েছেন বহু অনুষ্ঠানেও। সম্প্রতি সোনি মিউজিক ইন্ডিয়া তাঁদের ইউটিউব চ্যানেলে বাদশা ও পায়েল দেবের গাওয়া একটি গান পাবলিশ করেছেন, যার নাম দিয়েছেন, ” গেঁদা ফুল ” । মুক্তির প্রথম দিনেই এক কোটি মানুষ এই গান শুনে ফেলেছেন। এখন গানটি ভারতে ইউটিউবে ১ নম্বরে ট্রেন্ডিং চলছে। অথচ প্রাপ্য সম্মান ও অর্থ থেকে বঞ্চিত স্রষ্টা। নামটুকুও সৌজন্যমূলক ভাবে উল্লেখ করা হয়নি ভিডিওতে!
কিন্তু কেন? প্রশ্ন তুলে নিন্দার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যখন তাঁর প্রতি বঞ্চনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় তখন প্রচারের আলো থেকে শতহস্ত দূরে রতন কাহার বললেন, “আমাকে মনে রাখেনি, তো কি হয়েছে? আমরা গানটা তো ‘জাগল’। একদিন অভাব অনটন নিয়েই চলে যাব। তবুও কাউকে প্রতিদান চাইব না।”
সিউড়ির সোনতোড় পাড়ার এক চিলতে বাড়িতে গত ১৫ দিন ধরে গৃহবন্দি তিনি। করোনা আতঙ্কের মাঝে দারিদ্র্যের ছাপ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এক ছেলে প্রভাত লটারি বিক্রি করেন রাস্তা ধারে। আজ তাঁর কাজ নেই। ছোট ছেলে শিবনাথ মাছের আড়তে কাজ করতেন। লকডাউনের জেরে মালিক আডড় বন্ধ করে দেওয়ায় কাজ গিযেছে। এখন নুন আনতে পান্তা ফুরনো অবস্থা। এককালে দু’মুঠো ভাত জোগাড় করার জন্যে বিড়ি বেঁধে সংসার চালাতেন এই লোকশিল্পী। আর এখন ভরসা বলতে, এদিক-ওদিকে দু’-চারটে অনুষ্ঠান। করোনার প্রভাবে বাড়িতে বন্দি, অনুষ্ঠান তো দূরের কথা।
অথচ, এমন কি হওয়ার কথা ছিল? সম্মান ও প্রাচুর্য কি প্রাপ্য নয় শিল্পী রতন কাহারের? তাঁর লেখা আরও গান পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল দেশ-বিদেশের প্রান্তে।কিন্তু বাংলার মাটির সেই শিল্পী বিস্মৃতির আড়ালেই রয়ে গেলেন।

spot_img

Related articles

এবার নাম বদলের রাজনীতি বিহারে! গয়া হল ‘গয়াজি’

বিজেপি জমানায় নাম বদলের রাজনীতি নতুন নয়। আর তার শীর্ষে অবশ্যই যোগি আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তর প্রদেশ। তবে এবার...

আইএমএ বাংলার নির্বাচন বাতিল ঘোষিত! দুমাসে কমিটি গঠনের নির্দেশ

চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (IMA) রাজ্যের ২০২৫-২৭ নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই বাতিল করে দেওয়া হল কেন্দ্রীয় শাখার তরফে। নির্বাচন...

নির্দেশ দেখে পদক্ষেপ: ডিএ নির্দেশে প্রতিক্রিয়া চন্দ্রিমার

রাজ্য সরকারের কর্মীদের ২৫ শতাংশ ডিএ (DA) দেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। এক ঘোষণায় সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৯...

টুটু বোসের ইস্তফা প্রসঙ্গে দেবাশিসের পাল্টা মুখ খুললেন সৃঞ্জয়

মোহনবাগানে(Mohunbagan) নির্বাচনের ডঙ্কা বেজে গিয়েছে। সেইসঙ্গেই চড়তে শুরু করেছে উত্তেজনার পারদ। এই মুহূর্তে অবশ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল...