করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দেশ একজোট হয়ে লড়ছে। সেই কারণে একতা প্রদর্শন করতে রবিবার, ৫ এপ্রিল রাত নটা থেকে ৯টা ৯মিনিট পর্যন্ত ঘরের বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে, মোমবাতি, প্রদীপ অথবা টর্চ নিয়ে বাড়ির বারান্দায়- উঠোনে- দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেশের শক্তি প্রদর্শনের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু আচমকা সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গিয়ে আবার ৯ মিনিট পরে বেড়ে গেলে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা। এই বিপর্যয় এড়াতে কী করতে হবে আর কী করা উচিত নয়, তাই নিয়ে শনিবার দফায় দফায় বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক এবং রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরগুলি। এ প্রসঙ্গে শনিবার কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক বলে, প্রধানমন্ত্রী শুধু আলো নেভানোর কথা বলেছেন, কোনও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্ধের কথা বলেননি। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যে ওই ৯মিনিটি টিভি, ফ্রিজ, এসি বন্ধ রাখাই ভালো। কারণ, তাঁদের মতে, আচমকা ভোল্টেজের ওঠা-নামা হলে গৃহস্থলীর ওই যন্ত্রগুলি বিগড়ে যেতে পারে। আর লকডাউন পরিস্থিতিতে সেগুলি সারানোর কারিগরও কিন্তু পাওয়া যাবে না। লকডাউনের জেরে যখন বাজার থেকে একবারে একটু বেশি খাদ্যপণ্য নিয়ে এসে জমিয়ে রাখতে হচ্ছে, তখন ফ্রিজ অচল হয়ে গেলে যে কী অবস্থা হবে, সেটা সহজেই অনুমেয়।
তবে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক দাবি করেছে, দেশের গ্রিট ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা ওঠাপড়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কী সেই ব্যবস্থা?
রাত নটায় আলো নেভালে গ্রিড এর চাহিদা বারো হাজার আটশো ৭৯ মেগাওয়াট কমবে। পশ্চিমবঙ্গে সেই চাহিদা কমতে পারে ৭৫৩ মেগাওয়াট। সেই কারণে রাত সাড়ে আটটার পর থেকে জাতীয় গ্রিডে ন্যূনতম ফ্রিকয়েন্সি ৪৯ দশমিক ৯ হার্ৎজের মধ্যে রাখা হবে। আর গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি ৫০.৪ হার্ৎজের বেশি করতে দেওয়া হবে না।
তবে এই ব্যবস্থায়
সব রাজ্য খুব একটা আস্থা রাখতে পারছে না। সেই কারণে রবিবার রাত আটটা থেকে নটা পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ধাপে ধাপে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লকডাউনের জেরে একে বিদ্যুতের চাহিদা কম। তার মধ্যে দেশ জুড়ে অল্প সময়ের জন্য বাড়িতেও যদি চাহিদা হঠাৎ কমে যায়, তাহলে গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ভারসাম্য রাখাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। রবিবার রাত ৮ টার পর থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ধাপে ধাপে কমানো হবে, যাতে যখন আলো নিভে যাবে, তখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে চলে না আসে। আবার রাত ন’টা মিনিটের পর যখন ফের আলো জ্বলবে, তখন বাড়তি চাহিদা মেটাতে জলবিদ্যুৎ, গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। কারণ চাহিদা হঠাৎ বাড়লে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যায় না। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত ন’টার পরে মাইথন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ানোর উপর বেশি জোর দেওয়া হবে। চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যের অঙ্কের সামান্য ভুল হলেই গ্রিড ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।