Friday, December 19, 2025

এবার প্রমাণের দায়, আমরাই কেন সেরা !

Date:

Share post:

“একদিন ঝড় থেমে যাবে। পৃথিবী আবার শান্ত হবে।” – লেখাটা সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে। পড়ে মনে একটু আশার আলো যে জ্বলছে না, তা বলবো না, কিন্তু সাথে সাথে আরো অনেক চিন্তা ভীড় করে আসছে। হয়তো এত অখন্ড অবসর, এই বিপদের দিনের একাকিত্ব, সামনের দিনগুলোর অনিশ্চয়তা, আগামীদিনের দ্বায়িত্বগুলো এত চিন্তার জন্ম দিচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে পৃথিবী যে শান্ত হয়েছে সেটা দেখে যাবার মতো সৌভাগ্য আমার হবে তো?

এখন যা পরিস্থিতি তাতে আমাদের এই ছোট্ট সংসারের দ্বায়িত্ব সামলানোটা একটা কঠিন কাজ। আসলে গত কয়েকমাসের বেচাকেনা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির একটা আঁচ দিয়ে গেছে। কিন্তু ভেঙে পড়ি নি, ভেবেছি ঠিক সামলে নেবো সবাই মিলে। কিছু তো হচ্ছে। কিছু তো মালমশলা তৈরী আছে, সুতরাং ভয় পাবার মতো পরিস্থিতি এখনো হয় নি। সামনের কয়েকমাস ঠিকমতো চললেই আবার শান্ত পৃথিবী দেখতে পাবো।

গতমাসে একটু আশার আলো দেখলেও, সে আলোর সুইচটা এখনো হাতে পায়নি যে জ্বালাবো। গত মাসের মাঝামাঝি থেকে আর এমাসের মাঝামাঝি অবধি কাজ বন্ধ। এখনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে এই তো, এইমাসের মাঝামাঝির পর থেকে সবকিছু ঠিকঠাক চললেই, একটু সামলে নেওয়া যাবে। হ্যাঁ, একেবারে ঠিকঠাক সামলে নিতে আরো কয়েকটা মাস বেশী সময় লাগতে পারে, এর থেকে বেশী আর কিছু না।

এখন এপ্রিল মাসের মাঝামাঝির পরও শুনছি এইরকম পরিস্থিতি চলতে পারে। খরচা তো থেমে নেই, থামানো সম্ভবও না। কিন্তু গত একমাসে আয় লবডঙ্কা। কে সি নাগের চৌবাচ্চার অঙ্কটা এখন খুব সোজা হয়ে গেছে। চৌবাচ্চায় জল ঢুকছে না কিন্তু বেরোচ্ছে একটা সুনির্দিষ্ট আয়তনে প্রতি মিনিটে। জলের আরেকনাম জীবন। বেঁচে থাকতে হলে জলের যোগান থাকতে হবে। হ্যাঁ, এটা বলতে পারেন রে খরার সময় বেশী জল খাওয়ার দরকার কি বাপু, একটু কম করে খেলে হয় না? কিন্তু কে কতটা জল না খেলে বেঁচে থাকবে না, সেটা তো আমি ঠিক করে দিতে পারবো না। সেটা তারাই ঠিক করতে পারে। কেউ রাজি নাও হতে পারে – বলতেই পারে – আমি তো জল এমনিতেই কম খাই, আপনি বরং একটু কম করে খান। অথবা বলতে পারে – আর কতো কম খাবো, কমই তো খাচ্ছি চিরকাল। সুতরাং আমার কর্তব্য নিজে পারলে জল না খেয়ে, চৌবাচ্চায় যতটা জল আছে তা দিয়ে সবাইকে জল খাওয়ানো। কিছু বেঁচে থাকলে তার থেকে কয়েক ফোঁটা খেয়ে, আগামী সেই পৃথিবী শান্ত হওয়ার দিনটার জন্য অপেক্ষা করা।

সুতরাং চৌবাচ্চা কতক্ষণে খালি হবে প্রশ্ন করলে খুব কম সময়ে নির্ভুল উত্তর দিতে পারা যাবে, কারণ জল কতটা আছে সেটা মোটামুটি মাপা আছে। এটা বুঝতে কারোরই কোন অসুবিধে হবার কথা নয় যে সবাইকেই যদি পরিমাণ মতো জল খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়, তাহলে আমাদের এই চৌবাচ্চাটা তাড়াতাড়ি ভরে ফেলতে হবে। কিন্তু যতদিন না বাড়ি থেকে বেরোতে পারছি ততদিন জল আনতে যাবে কে? আর বালতি তো বাড়িতে নেই, তাই জল আনতে চাইলেও জল এনে জল ভরার উপায় কি? সুতরাং অপেক্ষা চালিয়ে যাও যে পৃথিবী কবে অপেক্ষাকৃত শান্ত হবে।

এবার আসা যাক, অপেক্ষাকৃত শান্ত পৃথিবীর পরিস্থিতিতে, যেটা আমরা আশা করছি যে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি হবে। তখন হাতে বালতি আছে আর, সামান্য জলভরা চৌবাচ্চা আছে, তাই আশার আলো আছে। কিন্তু জল এনে জল ভরবো বললেই তো জল ভরে যাবে না। জল পাবো কোথায়? এইকদিনে তো যে কুঁয়ো বা পুকুর থেকে জল আনতাম, তারাও তো একটু হলেও শুকিয়ে গেছে। তাই হয় তো যেখানে বালতি চুবিয়ে এক বালতি জল পাওয়া যেত, সেখানে আধ বালতি বা সিকি বালতি জল পাওয়া যাবে। কি জানি, অনেক কুঁয়ো তো এতদিনে বোধহয় শুকিয়েই গেছে !!!! যেদিন বালতি হাতে জল ভরতে যাবো, সেদিন হয় তো জানতে পারবো।

তাহলে উপায় কি? কবে চেনা কুঁয়োয় জল পাবো তার জন্য বসে থাকা? হ্যাঁ থাকা যায়, কিন্তু কতদিন? নতুন কুঁয়ো খুঁজতে বেরোবো? হ্যাঁ, বেরোতেই হবে, তাই তো করা উচিত বলে সাধারণ বুদ্ধিতে বলে। এইবারে অঙ্কটা একটু জটিল মোড় নেবে। এই গরমে যে বা যারা বালতি হাতে নতুন কুঁয়ো খুঁজতে রাস্তায় বেরোবে, তাদের তো জলতেষ্টা, যারা বাড়িতে বসে জল খাচ্ছে, তাদের থেকে বেশী হবে। সুতরাং জল খরচা বাড়বে, তাতে চৌবাচ্চা তাড়াতাড়ি শুকোনোর সম্ভাবনা বাড়বে। ওদিকে এমনটাও তো হতে পারে, যারা যারা জল পাচ্ছে না, তারা সবাই জল খুঁজতে বেরিয়ে ঐ নতুন নতুন কুঁয়োতে ভীড় জমিয়েছে। আবার এমনটাও হতে পারে যে নতুন কুঁয়োয় যে জলটুকু ছিলো সেটা কেউ আগেভাগে গিয়ে তার বালতি ভরে ফেলেছে – তাই কুঁয়ো এখন শুকনো। সুতরাং জল খরচা বেশী হলেও শুন্য বালতি নিয়ে ফিরে আসা গতি নেই, ওদিকে চৌবাচ্চা যতটা খালি হওয়ার কথা ছিল, তার থেকে বেশী খালি হয়ে গেছে এইকদিনে।

এবার আসা যাক, চেনা কুঁয়োর কথায়। সেখানে এতদিন যারা যারা জল নিচ্ছিলো তাদেরই অগ্রাধিকার থাকবে বলে ভাবা গেছিল। কিন্তু সেটা আমাদের চেনা কুঁয়ো হলেও, অনেক অচেনা লোক বালতি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়বে, কারণ তাদেরও জল দরকার, তাদের চৌবাচ্চাও খালি। কেউ কেউ হয়তো ছোট ছোট বালতি নিয়ে এসে বলবে, আমি তো পুরো বালতি জল নিচ্ছি না, অল্প একটু নেবো। বড়ো বড়ো বালতি নিয়ে যেসব চেনা লোক আছে, তাদের থেকে একফোঁটা করে দিলেই আমার বালতি ভরে যাবে, আর বড় বালতি থেকে একফোঁটা করে কমলে সেরকম কি আর এসে যাবে? এবার কুঁয়োর মালিকের ওপর ভরসা, সে কি সিদ্ধান্ত নেয়? অঙ্কটা সরল পাটিগণিতের অঙ্ক থেকে কেমন যেন কঠিন অ্যালজেবরা বা ইনটিগ্রেশন বা প্রবাবিলিটির বা সব মেলানো মেশানো একটা জগাখিচুড়ির অঙ্কের দিকে মোড় নিচ্ছে না?

মোড় তো নেবেই। কারণ পরিস্থিতি তো সুস্থ স্বাভাবিক নয়। ঝড় উঠেছে যে। এই কঠিন ঝড়ে অনেকের অঙ্ক মিলবে, অনেকের মিলবে না। যাদের চৌবাচ্চার সাইজ বড়, তারা অনেকক্ষণ ধরে অঙ্ক করবে আর তাই তাদের অঙ্ক মেলার সম্ভাবনা বাড়বে আর যাদের চৌবাচ্চা ছোট তাদেরকে কমসময়ের মধ্যেই হয় অঙ্কটা কষে মিলিয়ে ফেলতে হবে নাহলে মিলিয়ে যেতে হবে ঝড়ের ধূলিকণার সঙ্গে।

এখন এই অঙ্ক মেলাতে যেটা সবথেকে বেশী দরকার পড়বে সেটা হলো সবাই মিলে একসঙ্গে মন দিয়ে অঙ্কটা কষা। সবাই অঙ্কে ভালো হয় না আবার সবাই সব অঙ্ক ভালো কষতে পারে না। যে যে অঙ্কটা পারে সেটাই মন দিয়ে কষতে হবে, একসাথে, একতালে, স্টেপ জাম্প করে এগিয়ে গেলে হবে না। এই অঙ্ক বড় কঠিন অঙ্ক, কারণ এ তো গণিতের অঙ্ক নয়। গণিত শাস্ত্র, ইতিহাস, ভূগোল, জীবনবিজ্ঞান, দর্শণ শাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান, অর্থশাস্ত্র, আরো অনেককিছু। সব মিলিয়ে মিশিয়ে অঙ্কটা কষতে দিয়েছেন সর্বশক্তিমান – যেন আহ্বান করেছেন মানবজাতিকে যে তোমাদের তো এই পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ করে পাঠিয়েছি, এইবার প্রমাণ করো তোমরাই শ্রেষ্ঠ, উত্তর দাও আমার অঙ্কের।

আসুন, আমরা সবাই মিলে এর উত্তর খুঁজি। আমরা সবাই মিলে একসাথে যদি অঙ্গিকার করি তবেই আমরা পারবো। আমরা প্রত্যেকে যদি তাদের নিজের নিজের ক্ষমতা অনুসারে একমনে একসাথে অঙ্কটা কষতে পারি, তাহলেই উত্তর খুঁজে পাবো, আর একসাথে উত্তর খুঁজে পাওয়াটাই আসল, একসাথে বেঁচে থাকাতেই আনন্দ, একসাথে বেঁচে থাকাতেই শান্তি। কারণ একা একা বেঁচে থাকা হয়তো যায়, কিন্তু তাতে জীবনের স্পন্দন থাকবে, প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাবেন না।

spot_img

Related articles

বাংলায় আবার নিশ্চয়ই মমতার সরকার হবে, বাঙালিরাই দেশের ভবিষ্যৎ বলে দেয়: সংসদ চত্বরে সরব জয়া

তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে দীর্ঘদিন সুসম্পর্ক সমাজবাদী পার্টির (SP) রাজ্যসভার (RajyaSabha) সাংসদ...

মেসি ইভেন্টের আর্থিক তদন্তে ইডি, শতদ্রুর বাড়িতে পুলিশের হানা

মেসি ইভেন্টে বিশৃঙ্খলা কাণ্ডে তদন্তে ইডি(ED )। শতদ্রু দত্তের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদনের তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় সংস্থা।...

দ্বিতীয় বৈঠকেও কাটল না চিংড়িঘাটার মেট্রো জট

দ্বিতীয় বৈঠকের পরেও চিংড়িঘাটা মেট্রো জটিলতায় মিলল না কোনও সমাধান সূত্র। কলকাতা হাই কোর্টের (Kolkata High Court) নির্দেশে...

লোকপালের সিদ্ধান্ত ত্রুটিপূর্ণ, মহুয়ার বিরুদ্ধে CBI চার্জশিটের নির্দেশ খারিজ দিল্লি হাইকোর্টের

‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ মামলায় (Cash for query) চার সপ্তাহের মধ্যে সিবিআই চার্জশিট সংক্রান্ত লোকপালের নির্দেশ খারিজ করে দিল...