প্রভু যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিন ‘গুড’ কেন!

আজ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গুড ফ্রাইডে৷

করোনার কারণে দেশজুড়ে লকডাউন। তাই
এ বছর গুড ফ্রাইডের প্রকাশ্য সব অনুষ্ঠান বন্ধ। চার্চ সর্বত্র খোলা থাকলেও সাধারনের প্রবেশ নিষেধ৷ বহু রাজ্যের চার্চে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পালিত হবে পবিত্র এই গুড ফ্রাইডের অনুষ্ঠান।

কেন পালিত হয় গুড ফ্রাইডে ?

খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন প্রভু যিশুকে এই গুড ফ্রাইডের দিনেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল৷ ৩ দিন পরে তিনি ফের বেঁচেও ওঠেন।

এই দিনটি গুড ফ্রাইডে ছাড়াও গ্রেট ফ্রাইডে, ব্ল্যাক ফ্রাইডে, ইস্টার শুক্রবার বা পবিত্র শুক্রবার নামেও পরিচিত। গুড ফ্রাইডেকে আবার “কারফ্রেইট্যাগ” বা Karfreitag-ও বলা হয়৷ এর অর্থ ‘দুঃখজনক শুক্রবার’ বা Sorrowful Friday। ইংরেজি ভাষায় এ ক্ষেত্রে এই ‘গুড’ শব্দটি বিতর্কিত। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে এই দিনটির আগে নাম ছিলো, ‘গড’স ফ্রাইডে’ বা God’s Friday৷ অনেকে মনে করেন গুড ফ্রাইডের মধ্যে ‘গুড’ শব্দটি দিনটির পবিত্রতা বা holy, pious বোঝাতেই ব্যবহার করা হয়।
খৃষ্টীয় ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু খ্রিষ্টের ক্র‌ুশবিদ্ধকরণ, মৃত্যু ও তাঁর পুনরুজ্জীবনের স্মরণে এই উৎসবটি পালিত হয়। পবিত্র সপ্তাহে ইস্টার রবিবারের আগের শুক্রবারে প্যাস্কাল ট্রিডামের অংশ হিসেবেই দিনটি পালিত হয়। অনেক সময় আবার গুড ফ্রাইডে ইহুদিদের উৎসব ‘পাসওভার’-এর সঙ্গে একই দিনে উদযাপিত হয়।
একাধিক শাস্ত্রীয় গ্রন্থে জানা যায় যে তাঁকে সম্ভবত শুক্রবারে ক্র‌ুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। দুটি ভিন্ন গোষ্ঠীর মতে গুড ফ্রাইডের বছরটি হল ৩৩ খ্রিস্টাব্দ। আইজ্যাক নিউটন বাইবেলীয় ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার এবং অমাবস্যার তিথি বিচার করে গুড ফ্রাইডের যে প্রকৃত সালটি নিরুপণ করেছেন, সেটি হল ৩৪ খ্রিস্টাব্দ। ক্র‌ুসিফিকেশন ডার্কনেস অ্যান্ড একলিপস পদ্ধতি নামে একটি তৃতীয় পদ্ধতি হিসেব করে গুড ফ্রাইডের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ এপ্রিল, ৩৩ খ্রিস্টাব্দ।
বাইবেলের বিবরণ
অনুযায়ী, যিশুর শিষ্য যিহুদা ইসকারিয়োতের সাহায্যে মন্দিরের রক্ষীদল গেৎশিমানি উদ্যানে যিশুকে গ্রেফতার করে। যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার পুরস্কার স্বরূপ যিহুদাকে ৩০টি রৌপ্যমুদ্রা দেওয়া হয়েছিল। যিহুদা রক্ষীদলকে বলে রেখেছিলেন যে তিনি যাঁকে চুম্বন করবেন তিনিই যিশু। যিশুর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহ, সিজারকে রাজস্বদানে বাধা ও নিজেকে রাজা ঘোষণা করার অভিযোগ আনা হয়। পিলাত ইহুদি সমাজপতিদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী যিশুর বিচার ও শাস্তিদানের অনুমতি দিলেন। যিশুকে ক্র‌ুশবিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। “নাজারেথের যিশু, ইহুদিদের রাজা” লেখা একটি ক্র‌ুশ যিশু বয়ে নিয়ে চলেন গলগথা নামে এক এলাকায়৷ তাঁকে ক্র‌ুশ বহনে সাহায্য করেছিলেন সাইরিনের সিমন।
৬ ঘণ্টা যিশু ক্র‌ুশে যন্ত্রণাভোগ করেন। দুপুর ৩টে থেকে শেষ তিন ঘণ্টায় অন্ধকারে গোটা এলাকা ঢেকে যায়। যিশু প্রাণত্যাগ করেন। এর পরই ভূমিকম্প হয়, সমাধিপ্রস্তরগুলি ভেঙে যায় এবং প্রধান মন্দিরের পর্দা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিঁড়ে যায়। যিনি ক্র‌ুশবিদ্ধকরণের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন, “ইনি সত্যিই ঈশ্বরপুত্র ছিলেন।”

আরিমাথিয়ার যোসেফ যিশুর দেহ পরিষ্কার বস্ত্রে মুড়ে ক্র‌ুশবিদ্ধকরণ ক্ষেত্র থেকে একটু দূরে একটি বাগানে তাঁর নিজের জন্য নির্মাণ করা প্রস্তরখোদিত সমাধিমন্দিরে রেখে দেন৷ খানিক পর নিকদিম এলেন সুগন্ধি নিয়ে। ইহুদি সৎকার প্রথা অনুযায়ী সেগুলি রেখে দিলেন আচ্ছাদন বস্ত্রে যিশুর দেহের সঙ্গে। একটি বড় পাথর দিয়ে তাঁরা সমাধির মুখ রুদ্ধ করে দিলেন। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে সাব্বাথ শুরু হয়ে যাবে বলে তাঁরা ঘরে ফিরে যান। তৃতীয় দিন, রবিবার, যিশু পুনরুজ্জীবিত হন।

সঙ্গের ছবিটি সুব্রত দত্ত’র আঁকা