করোনা আতঙ্কে জন্ম তাই কি সদ্যোজাতর নাম রাখা হল ‘করোনাশ’?

সারা বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা আতঙ্ক। মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। এই আতঙ্কের মাঝেই বেহালায় এক সদ্যজাত শিশুর নাম রাখা হল “করোনাশ”। ডাক্তার নিজেই করলেন নামকরণ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রসব যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন শিখা মন্ডল। ঠাকুরপুকুর কবরডাঙ্গা অঞ্চলের বাসিন্দা তিনি। অন্তঃসত্বা হবার পর থেকে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতাল ডাক্তার দেখাতেন। কিন্তু এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত রোগীদের রাখা হচ্ছে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে। তাই সেই হাসপাতালে যেতে ভয় পান তিনি। ফলে প্রসব যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকা শিখাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন স্বামী গৌর মন্ডল। লকডাউন চলায় কোনভাবেই স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার উপায় পাচ্ছিলেননা। এরমধ্যেই শিখা অনুভব করেন পেটে সন্তান কোনও রকম নড়াচড়া করছে না। এমন অবস্থায় এক বন্ধুর থেকে ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরীর ফোন নম্বর পান গৌর মন্ডল। বেহালা পর্ণশ্রী অঞ্চলে বাড়ি ডাক্তারের। এরপর গৌর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে। শিখা মন্ডলকে পরীক্ষা করার পর ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরী বুঝতে পারেন অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। নাহলে সন্তানটিকে বাচাঁনোর মুশকিল হবে। কারণ হৃদস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার কোথায় পাওয়া যাবে। পেশায় গাড়িচালক গৌর। কোনও নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর মতো আর্থিক অবস্থা নেই তাঁর।

এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরী। তিনি খোঁজ করতে শুরু করেন বেহালা অঞ্চলে কোনও নার্সিংহোম পাওয়া যায় কিনা। এক বন্ধুর মাধ্যমে শকুন্তলা মেটারনিটি নার্সিংহোমের খবর পান। যেখানে সমাজের প্রান্তিক মানুষদের কম পয়সায় চিকিৎসা করা হয়। ডাক্তার সেই নার্সিংহোমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আশ্বাস পেয়ে শিখা মন্ডলকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে এখানেও সমস্যা। কারণ‌ লকডাউন হওয়ায় ডাক্তারের গাড়ি চালক নেই। শিখা মন্ডলের স্বামী গৌর মণ্ডল পেশায় গাড়িচালক হওয়ায় তিনি নিজেই গাড়ি চালানোর দায়িত্ব নেন। ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরীর গাড়িতে শিখা মন্ডলকে নার্সিংহোমে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। ৭ এপ্রিল রাত আটটায় ভর্তি হয়। অস্ত্রোপচার করেন ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরী নিজেই। রাত ৮টা ৪৯ একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন শিখা। ডাক্তার এই সন্তানের নাম ঠিক করেন। শিখা ও গৌর মন্ডলের সদ্যোজাত সন্তানের নাম রাখেন “করোনাশ।”

এমন নামকরণের কারণ হিসেবে ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরী জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন চলছে। তার মধ্যেই অনেক প্রতিকূলতাকে দূর করে এই সন্তানের জন্ম। করোনাকে জয় করে যার জন্ম তার নামই ‘করোনাশ’। তবে একটা জিনিস বলে রাখা ভালো মা ও সন্তানের কোনও করোনা সংক্রমণ নেই। আসলে পরিস্থিতির বিচারে এই নামকরণ। মা এবং সন্তান দুজনেই ভালো আছেন। রবিবার সকালে নার্সিংহোম থেকে ছাড়া হবে। ডাক্তার রায়চৌধুরী আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্রোপচার না হলে সন্তানটিকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। হৃদস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছিল না। আসলে মায়ের নাড়ি সন্তানের গলায় জড়িয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা হয়। তবে আমি কৃতজ্ঞ নার্সিংহোমের কাছে। নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তা ভাবা যায় না। একজন মায়ের কোলে সন্তানকে তুলে দিতে পেরেছি। আমরা সবাই খুশি। শিখা মন্ডলের অস্ত্রোপচারের জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেননি ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরী। এমনকী রবিবার ডাক্তার নিজেই গাড়ি করেই শিখা মন্ডল ও তার সদ্যোজাত সন্তানকে বাড়ি পৌঁছে দেন বলে জানান।
শিখার স্বামী গৌর বলেন, “ডাক্তারবাবু না থাকলে কি হতো জানিনা। ছেলের নাম ডাক্তারবাবু যা দিয়েছেন তাতেই আমরা খুশি। করোনাশ নামে আমার সন্তান পরিচিতি পাক।”

Previous articleপরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা বিশ্বব্যাঙ্কের
Next articleকরোনা সঙ্কটের মধ্যেই এবার রাজ্যের এই সেনা ছাউনিতে বিধ্বংসী আগুন