Wednesday, August 27, 2025

লকডাউনে আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি যাঁদের ক্ষতি হচ্ছে, তাঁদের কথা মিডিয়া বলে না

Date:

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক

চোখের সামনে একটা দেশ, একটা শহরের অসংখ্য মানুষ শেষ হয়ে যাচ্ছে। জীবন চলে যাচ্ছে নিরীহ, গরিব মানুষের। কোটি কোটি সাধারণ মানুষের কাজ চলে গেছে রাতারাতি। পরিবারগুলো অর্ধাহারে আছে, অবসাদে, হতাশায় ভুগছে।
কিন্তু যাদের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি, তাদের কথা মিডিয়া বলে না। কিন্তু বরিস জনসন, প্রিন্স চার্লস, টম হ্যাঙ্কস, কণিকা কাপুর মতো লোকেরা দুদিনের জন্যে অসুস্থ হলে সে খবর হেডলাইন হয়। এইসব বড় বড় মানুষ — সেলিব্রিটি — যদি করোনাভাইরাস আক্রান্ত না হতো, সে আমাদের দেশেই হোক বা আমেরিকা বা ইংল্যান্ড — যেটুকু লকডাউন, আইসোলেশন, কড়াকড়ি হয়েছে, সেটাও হত কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
তারপর আছে মিডিয়া সেলিব্রিটি এলেন ডিজেনারেস জাতীয় ব্যক্তিদের অমানবিক উক্তি — যিনি বলেছেন এই লকডাউন তাঁর কাছে জেলে থাকার মতো। তিনি জেল কখনো দেখেছেন কি না, বা সেখানে কত লোক পচে, এবং কীভাবে পচে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা তাঁর বা তাঁর মতো বিলিওনেয়ার স্টারদের আছে কি না, জানতে ইচ্ছে করে।
তিনি কি জানেন, সারা পৃথিবীর জেলবন্দির ২৫ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে? এবং তাঁরা মনুষ্যেতর জীবনযাপন করে।
এই হলো বৈষম্য — ভারতে, আমেরিকায়। শুধু আর্থিক বৈষম্য নয়, জীবন সম্পর্কে ধারণার নিষ্ঠুর বৈষম্য। এখানকার ওই এলেন, আর আমাদের দেশের হেলেন। একই ব্যাপার। এখানে হলিউড স্টার, ওখানে বলিউড। এখানে কোটিপতি বেসবল প্লেয়ার, দেশে ক্রিকেটার।
আমেরিকার এই শোচনীয় অবস্থার জন্য দায়ী সাধারণ মানুষের জীবনের প্রতি শাসকশ্রেণীর সম্পূর্ণ উদাসীনতা, অবজ্ঞা এবং নিষ্ঠুর মনোভাব। এই কদর্য চেহারাটা মিডিয়া আগেও কখনো দেখায়নি। এখনও যা দেখানো হচ্ছে, তাতে খবর বিক্রি করার, মুনাফা ও রেটিং বাড়ানোর উদ্দেশ্য যতটা, মানুষের কাছে কারণগুলো পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ সে তুলনায় নেই বললেই চলে।

আজকের দিনেও এই মানবতাবিরোধী, লাগামছাড়া, ভোগবাদী, ব্যাক্তিস্বার্থ কেন্দ্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পর্কে মিডিয়াতে কোনো কথা নেই। কোনো আলোচনা নেই লাগামছাড়া পরিবেশ ধ্বংস ও অবিশ্বাস্য উষ্ণায়ন সম্পর্কে। কারণগুলোকে মানুষের চোখের থেকে আড়াল করে রাখা হয়েছে আজকের এই মহাসংকটের দিনেও।
মৃত্যুর মিছিলের মধ্যেও আমেরিকার মিডিয়াতে মৃতদের ছবি দেখানো হয় না, তাঁদের পরিবারগুলোর, শিশুদের কান্না দেখানো হয় না।

তার ফলে যা হচ্ছে এবং যা হবে এই মার্কিনি বিশ্বায়িত মডেলের কল্যাণে, তা হল এই-
(১) এই মহামারী যখন কিছুটা প্রশমিত হবে, তখন সাধারণ মানুষের কথা না ভেবেই ওয়াল স্ট্রিট, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বিজনেস ওয়ার্ল্ড খুলে দেওয়া হবে (ঠিক যেমন হয়েছিল ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর) — যা ট্রাম্প এখনই করতে চাইছে মানুষের ভবিষ্যৎ বিপদের কথা না ভেবে।

(২) মানুষকে এই লকডাউন ও আইসোলেশনের নিয়মের বেড়াজালে পাকাপাকিভাবে বেঁধে ফেলা হবে এবং মিটিং, মিছিল, সমাবেশ, রাজনৈতিক বিরোধিতা, এবং সাধারণ অর্থে সমাজ বলতে আমরা যে যৌথ জীবনযাত্রা বুঝি, তা বন্ধ হবে।

(৩) অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণভাবেই ওই ১%-মালিকানার বহুজাতিক ও বিশাল কোম্পানিগুলোর হাতে চলে যাবে, এবং কারণ হিসেবে দেখানো হবে এই যে ছোট ছোট ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, গ্রসারি, ওষুধের দোকান, দৈনিক খুচরো বাজার এবং যাবতীয় গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের রুটি রুজির ব্যবস্থা যা আছে, তা আর চলছে না। যাকে বলে আমাজন অর্থনীতি (অথবা ভার্চুয়াল, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থনীতি) তাই ক্রমে হয়ে যাবে “সাধারণ” বা নর্মাল অর্থনীতি।

(৪) ডি-মানিটাইজেশন জাতীয় আইন আবার নতুন করে ফিরে আসবে, এবং তার সঙ্গে “দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির স্বার্থে” যেসব নতুন আইন পাশ হবে, তাতে আপনার আমার সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংক থেকে, পেনশন থেকে, বীমা থেকে, পোস্ট অফিস থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। সুদের হার এখনই কমাচ্ছে ওরা, এবার আরো অনেক কমে যাবে।

(৫) তার সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হবে একনায়কতন্ত্র, কারণ আমেরিকাতেই বলুন, বা ভারতে অথবা বাংলাদেশে — একজন ছাড়া দুজন দেশনেতা বা নেত্রীকে আর চোখে দেখা যাচ্ছেনা এই সংকটের সময়ে — আমরাও সেটাই মেনে নিয়েছি। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, যুদ্ধ, স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া ইত্যাদি সবকিছুই বাধ্যতামূলকভাবে মেনে নিতে হবে এবং না মানলে জেল জরিমানা গুপ্তহত্যা ইত্যাদি রোজকার খুচরো জিনিসে পরিণত হবে।
মোটামুটিভাবে বলা যেতে পারে, গণতন্ত্র নামক প্রাণীটির এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ।

Related articles

শান্তনুর বিদেশী মেডিক্যাল ডিগ্রি নিয়ে বিতর্ক, এবার রাজ্যকে খতিয়ে দেখতে বলল রাজভবন

বিদেশী মেডিক্যাল ডিগ্রি নিয়ে বিতর্ক। এবার রাজভবনের নজরে ডা শান্তনু সেন (Shantanu Sen)। অভিযোগ, চিকিৎসা করতে গিয়ে সত্যিই...

ভারতের অন্তত ৬ লক্ষ কোটির বাজারে ধাক্কা মার্কিন শুল্ক নীতির

বুধবার থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর অন্তত ৫০ শতাংশ করে শুল্ক (tariff) লাগু করে দিয়েছে আমেরিকা। খুব সোজা কথায়...

কমনওয়েলথে ভারোত্তোলনে বিশ্বরেকর্ড বাংলার মেয়ে কোয়েলের, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর 

ভারোত্তোলনে কমনওয়েলথ ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে (Commonwealth weightlifting championship) বাংলার জয়জয়কার। মোট ১৯২ কেজি ভারোত্তোলন করে বিশ্বরেকর্ড বাংলার মেয়ে কোয়েল...

আইপিএল থেকেও অবসর নিলেন, বাইশ গজকে এখনই বিদায় জানাচ্ছেন না অশ্বিন

গত বছরের ডিসেম্বরে বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি চলাকালীন টেস্ট(test) ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin )। একদিনের(ODI) ও...
Exit mobile version