নিম গাছের ছালের নির্যাসেই মিলতে পারে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক! স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাঙালি বিজ্ঞানী

নিম একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই কাজে লাগে।

বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে, ভাইরাস রোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে, চ্যাগাস রোধ নিয়ন্ত্রণে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে, দন্ত চিকিৎসায় ব্যথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।
নিমের আছে ১৩০টি ঔষধি গুণ। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসেবে নিম খুবই কার্যকর। আর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কিছু নিমপাতা চুর্ণ করে এক গ্লাস জলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বহুগুণ।
আইআইএসইআর কলকাতা বা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চের অধ্যাপিকা তথা বাঙালি বিজ্ঞানী জয়শ্রী দাস শর্মার গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। তাঁর দাবি, নিম গাছের ছালের নির্যাস ইঁদুরের শরীরে করোনাভাইরাস আটকাতে সক্ষম হয়েছে। এবার এই নিম গাছের ছালের নির্যাস মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস আটকাতে সক্ষম হয় কী না তার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
মানুষের শরীরে গবেষণা করার মত পরিকাঠামো এই মুহূর্তে আইআইএসইতে না থাকায় সুইডেনের এক বিজ্ঞানীর সহযোগিতায় এই গবেষণা চলছে সেখানে। এই গবেষণাটি গত ১৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক স্তরের গবেষণাপত্রে স্বীকৃতি পেয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন এই গবেষণাটি “frontiers in cellular neuroscience” এই গবেষণাপত্রে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই আইআইএসইআর কলকাতার জীব বিজ্ঞানের অধ্যাপিকা ডঃ জয়শ্রী দাস শর্মা এবং তার গবেষক ছাত্রছাত্রী লাকি সরকার, রবি করণ পুটচালা, আব্বাস আলাও সাফিরিউ এই নিয়ে কাজ করে চেলেছেন৷ এরা পরীক্ষামূলক ভাবে ইঁদুর মডেলের ওপর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রোগ সৃষ্টিকারী বিষয়ের উপর গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ভাইরাসটি শুধুমাত্র ইঁদুরের স্নায়ুতন্ত্র ও যকৃতের সংক্রমণ করে, কিন্তু মানুষকে সংক্রমিত করতে পারেনা।
গবেষকরা জানাচ্ছেন এই ভাইরাস দ্বারা পরিচালিত একাধিক লক্ষণ মানুষের বিভিন্ন স্নায়বিক রোগ ও মাল্টিপেল ক্লোরোসিস এর মতই হয়ে থাকে। এই ভাইরাসের মোরক অংশ স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন এর মধ্যস্থতায় কোষ থেকে কোষে সংযুক্তি হল MHV পরিচালিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
নিম একটি প্রাচীন ঔষধিগাছ যেটি আলসার নিরোধক, ম্যালেরিয়া নিরোধক এবং ক্যান্সার নিরোধক হিসেবে বহুল প্রচারিত। গবেষকরা জানাচ্ছেন তাই সংক্রমণ সূচনার ক্ষেত্রটিতে নিম ফলের নির্যাস সরাসরি স্পাইকে বাঁধতে পারে কিনা তা নির্ধারণ করা এবং কোষের সঙ্গে ভাইরাসের সংযুক্তি নির্যাস ব্যবহার করে বাধা দেওয়া যায় কিনা তা নির্ধারণ করা আবশ্যক ছিল।
আইআইএসইআরের বিজ্ঞানী ডঃ জয়শ্রী দাস শর্মা ও তার গবেষক ছাত্রছাত্রীরা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন MHV  সংক্রামিত স্নায়বিক neuro 2a কোষ গুলিতে নিম ছালের নির্যাস প্রয়োগ করে ভাইরাস প্ররোচিত কোষ  থেকে কোষের সংযুক্তি, বহু নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষ গঠন এবং ভাইরাসের নিউক্লিয় ক্যাপসিড প্রোটিনের অভিব্যক্তিতে ১২ ঘণ্টা পরেই উল্লেখযোগ্যভাবে কম দেখা গিয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন সংক্রমণ সূচনার পর্যায়টি নিয়ন্ত্রণের জন্য RSA59 ভাইরাসকে নিম গাছের ছালের নির্যাস এর সঙ্গে ১৫ মিনিটের জন্য মিশ্রিত করে ৪ ডিগ্রি উষ্ণতায় বরফের মধ্যে রাখা হয়েছিল এবং তার প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছিল ভাইরাসের প্রতি লেখ ও প্রতিলিপি গঠনের মাধ্যমে ইঁদুরের ওপর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যালোচনার জন্য। গবেষকরা জানাচ্ছেন নিম গাছের ছালের নির্যাস কার্যকরভাবে ভাইরাসের কোষে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের প্রতিরূপ ও প্রতিলিপি গঠন এবং ভাইরাসের নিউক্লিয় ক্যাপসিড প্রোটিন ও প্রদাহ সৃষ্টিকারী সাইটোকাইনিনের বিকাশ সীমিত করে।
বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপিকা ডঃ জয়শ্রী দাস শর্মা স্বয়ং জানিয়েছেন ” এখানে BSL-3 এর সুবিধা না থাকার কারণে নিম গাছের ছালের নির্যাস দিয়ে SARS-CV-2 ভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। কিন্তু আমাদেরই এক সহ বিজ্ঞানী (সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউশন) BSL-3 তে নিম গাছের ছাল এর নির্যাস দিয়ে সুইডেনের COVID-19 এর নমুনা পরীক্ষা শুরু করেছেন।

Previous articleএকজন পজিটিভ, দুজনের উপসর্গ: ১৫,০০০ মানুষের বসতি কোয়ারেন্টাইনে
Next articleজানেন বিরাটের পরা এই জামার দাম কত?