করোনা: ম্যান-মেড না গড-মেড জানতে এবার আর্জি জানালাম বিশ্ব-আদালতে

সুভাষ দত্ত
পরিবেশবিদ

ভারতের শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি.এন.ভগবতীকে স্মরণ করে একটা মরিয়া চেষ্টা করলাম।

করোনা এই মুহুর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকেও বেশি গুরুতর ৷ মূলত এই আর্জির ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক আদালতে একটা পিটিশন পাঠালাম প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে স্মরণ করেই৷ স্মরণ করার কারণ, ৩৫ বছর আগে এই ভগবতী সাহেবই জনস্বার্থ মামলার এক নতুন দিক খুলে দিয়েছিলেন। তুমি কে, কেন আদালতে এসেছো, এসবের পাট চুকিয়ে পোস্টকার্ডে পাঠানো বিষয়ের ওপরও জনস্বার্থ মামলার সূচনা করেছিলেন। সেই পথেই এগোলাম আমি৷

হল্যান্ডের হেগ শহরের আন্তর্জাতিক আদালতেও যাতে একই পদ্ধতি মেনে করোনা-বিষয়ে আমার আবেদনটি গ্রহণ করে এবং তার শুনানি করা হয়, সেই আর্জি পেশ করেছি সোমবার।

আমার আবেদনের বিষয়বস্তু এইরকম :

◾ করোনা, ম্যান-মেড না গড-মেড তা আগে নির্ধারন করা দরকার। যদি প্রথমটা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

◾ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আলাদাভাবে করোনা আগ্রাসনের মোকাবিলায় নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে৷ যার ফলে uniformity অর্থাৎ অভিন্নতা থাকছে না। অনেক দেশে লক-ডাউন জারি হয়েছে অথচ সমস্ত পরিবহন ব্যবস্থা ও ব্যবসায়িক সংস্থাকেও সচল রাখা হয়েছে। কোথাও আবার লক-ডাউন মানে শুধুই লাঠিচার্জ।

◾এই লক-ডাউন, যাকে আমি বলি নিল-ডাউন, সারা বিশ্বেই একটা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। আমি আশংকা করছি যে এই বিপর্যয় মোকাবিলার নামে কেউ আবার ব্যবসা ফেঁদে বসবে না তো? কয়েকটি দেশ এবং কিছু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে ফিউচার ট্রেডিং করে ফেলেছে। করোনার নামে বা এই করোনা যাতে ব্যবসার কাজে ব্যবহার না হয়, এটা দেখা দরকার।

◾ করোনার মোকাবিলা করতে গিয়ে অন্য সমস্ত অসুখ-বিসুখকে, এমনকি ক্যানসারকেও সিন্দুকে পুরে দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণের জন্য হাসপাতাল বন্ধ, ডাক্তারবাবুরাও আত্মগোপন করেছেন, এই অবস্থায় বিনা চিকিৎসার কারণে সারা বিশ্বেই গড় আয়ু কমতে বাধ্য। অন্য রোগের চিকিৎসা সচল রাখাটাই একান্তই জরুরি।

◾ বিভিন্ন জায়গায় করোনা রোগীরা চরমভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। শুনেছি বিশ্বের কোনও প্রান্তে নাকি করোনা-রোগীদের গুলি করে মেরেও ফেলা হচ্ছে। মানবাধিকার অর্থাৎ বেঁচে থাকার অধিকারকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে, যা বন্ধ হওয়া জরুরি।

◾ বিভিন্ন দেশ করোনা- মোকাবিলার নামে তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখেছে। সরকারি দলের লোকজনকে সব কিছুতে ছাড় আর প্রতিপক্ষকে দেওয়া হচ্ছে মার। ত্রানের নামে কোথাও চলছে দাদাদের কারবার। এসব বন্ধ হওয়া দরকার ৷

◾United Nations Organization বা UNO নামে একটি সংস্থা আছে ঠিকই কিন্তু সেখানে বিভিন্ন দেশ ঝগড়াই করে বেশি । আন্তর্জাতিক আদালত একমাত্র প্ল্যাটফর্ম, যার নিরপেক্ষতা স্বীকৃত৷ আশা রাখি এই গুরুতর বিষয়ে বিশ্ব আদালত পদক্ষেপ করবে এবং সারা বিশ্বকে রক্ষা করতে পারবে। যেহেতু WHO বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা- মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে, তাই বিশ্ব-আদালতই এখন জনগনের ভরসা।

◾ মজার বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক আদালত কিন্তু বিশ্বকে রক্ষা করার পরিবর্তে নিজেদেরকেই এখন রক্ষা করতে বেশি ব্যস্ত৷ ইতিমধ্যেই তারা দু’বার প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে।

আমার মতন এক সাধারন মানুষ আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ বা অস্তিত্বহীন। তাই প্রাক্তণ প্রধান বিচারপতি পি.এন.ভগবতীকে স্মরণ করে বিশ্ব আদালতকে জানিয়েছি যে আমার পিটিশনের ভিত্তিতে যেন Sou Moto বিষয়টির শুনানি করে। কারন, পৃথিবীতে আর কখনও এমন সামগ্রিক জনস্বার্থের বিষয় সামনে আসেনি।

Previous articleরাস্তায় নামেনইনি অভিষেক, তবু কোন জাদুবলে ‘কল্পতরু’ এমন মসৃণ!
Next articleবিরোধী সুরেই ৮ চিকিৎসক সংগঠনের চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে, সই করলেন তৃণমূল সাংসদও