চুনী গোস্বামী, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

কাউকে ছোট করা হচ্ছে না, তবুও প্রশ্ন করতেই হয়, সদ্যপ্রয়াত ঋষি কাপুর বা ইরফান খানের তুলনায় কতখানি ‘ছোট’ চুনী গোস্বামী বা পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়? দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঠিক কোন নজরে দেখলেন এই দুই কিংবদন্তি ফুটবলারকে ? বাংলা তথা দেশের এই দুই কিংবদন্তী কেন ব্রাত্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ?

দেশজুড়ে যারা ঘন্টা বাজিয়েছিলেন অথবা হ্যারিকেন ধরেছিলেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের টুইটারে ঝড় তুলেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদি, তিনি এখনও পর্যন্ত দেশের এই দুই প্রবাদপ্রতিম ফুটবলারের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠাননি, তাঁর টুইটারেও তিনি একটি শব্দও খরচ করেননি৷ দুর্ভাগ্যজনক৷ অথচ দেশের রাষ্ট্রপতি সঠিক সময়েই শোকপ্রকাশ করেছেন৷ দেশের প্রধানমন্ত্রীর এহেন আচরন বা মানসিকতা প্রদর্শন মানায় না৷

দেশের প্রধানমন্ত্রী কি মনে করেন যে কোনও নামী অভিনেতার থেকে অনেক কম যোগ্যতার ছিলেন চুনী- পি কে ? নিজের রাজনৈতিক বৃত্তে যে সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন কারো আঙুল ধরে হাঁটা শিখছেন, সেই সময়েই বার বার ভারতের তেরঙা বিশ্ব আসরে তুলে ধরেছিলেন এই চুনী-পিকে৷ এ সবই লেখা আছে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসের পাতায়৷ এমনিতে হয়তো তিনি এসব নাও জানতে পারেন, কিন্তু সর্বোচ্চ স্তরের দুই দেশরত্নের প্রয়াণের পরেও প্রধানমন্ত্রীর ‘দক্ষ’ সচিবালয়ের চৈতন্য হয়নি, এটা মানা কষ্টকর৷ সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী চুনী-পিকে-র মৃত্যুর পর শোকবার্তা পাঠানোর বিষয়ে সেভাবে আগ্রহই দেখাননি৷ ফলে ধরেই নেওয়া যায়, প্রধানমন্ত্রীর এহেন উপেক্ষা আদৌ অনিচ্ছাকৃত নয়৷

যারা প্রধানমন্ত্রীর টুইটার দেখতে অভ্যস্ত, তাঁরা জানেন, এই সোশ্যাল মিডিয়া জগতে কতখানি ‘অ্যাক্টিভ’ নরেন্দ্র মোদি৷ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে এই প্রজন্মের তরুন- তরুনীদের যে কোনও সময়ে দশ গোল দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন মোদিজি৷
এই সেদিনও দেখা গিয়েছে ঘন্টা বাজানো ক্রীড়াবিদদের জন্য দিনের পর দিন সোশ্যাল মিডিয়া অজস্র বাক্যে খরচ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি৷ অথচ এক্ষেত্রে তিনি নীরব৷ সন্দেহ নেই, এটা লজ্জার৷

অজুহাত আসতেই পারে, করোনা-কালে বড়ই ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী ৷ তাই ফস্কে গিয়েছে৷ সম্প্রতি বলিউডি যে দুই অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে, সে সময় দেশে করোনার প্রকোপ ছিল না, এমন তো নয়, তাহলে ওই দুই ক্ষেত্রে সঠিকভাবে শোকপ্রকাশ করে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা কীভাবে পালন করেছিলেন তিনি ? তিনি অভিনয়প্রেমী বলে ?

আসলে এ রাজ্যে তাঁর দলের লোকজন প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানোর সাহসই দেখাতে পারেননি যে এই বাংলার মানুষ চুনী গোস্বামী বা পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঠিক কোন আসনে বসে আছেন৷ সেখানে মোহনবাগান- ইস্টবেঙ্গল বা তৃণমূল-সিপিএম- কংগ্রেস বা বিজেপি তো তুচ্ছ৷ কারনে-অকারনে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা এ রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর দলভুক্ত লোকজন এই দায় কখনই অস্বীকার করতে পারবেন না৷ এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার।

তবে এটাও ঠিক যে কারো শোকবার্তা আসুক বা না-আসুক, এ দেশে বা এ রাজ্যে তিলমাত্র আসনচ্যূত হবেন না চুনী গোস্বামী বা পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় !

Previous articleভিডিও কলিংয়ে পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন বাঙুরের কোভিড রোগীরা
Next articleনীতু লিখলেন : আমাদের গল্প শেষ