মদের দোকানে যাঁরা লাইন দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য বিনামূল্যে রেশন কেন? প্রশ্ন স্যোশাল মিডিয়ায়

জয়িতা মৌলিক

মদের দোকান খোলার নির্দেশিকা জারি হতেই দোকানের সামনে লাইন দিয়েছেন সুরা রসিকরা। যেভাবে লাইন পড়েছিল নোটবন্দির সময়, বা বহু বছর আগে বেবি ফুডের আকালে যেভাবে রাত থাকতে অভিভাবকরা গিয়ে দোকানের বাইরে লাইন দিতেন, ঠিক সেরকম ভাবেই রাত থাকতে মদের দোকানের সামনে ইট পাচ্ছেন ক্রেতারা। ওষুধ কিনতেও যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াচ্ছেন সবাই, সেখানে মদ না খেয়েই গুলিয়ে যাচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বিধি; ঘাড়ে উঠে যাচ্ছেন একে অপরের। মাথাপিছু দু বোতল মদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এতো খাটনি পরে মাত্র দু বোতলে কী মন ভরে? তাই নিজের সঙ্গে বাড়ির প্রাপ্তবয়স্ক কয়েকজনকে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। লাইন দিচ্ছেন তাঁরাও। মাথাপিছু দু বোতল করে হলে চার থেকে ছয় বোতল বা তারও বেশি পাওয়া যাচ্ছে পরিবারের জন্য। এখানেই প্রশ্ন উঠছে যাঁরা মদ কেনার জন্য ভিড় জমাতে পারছেন, তাঁদের বিনামূল্যে রেশনে কী প্রয়োজন? রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার- লকডাউনের এই সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিনামূল্যের রেশনের ব্যবস্থা করেছে। সেটা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভাব-অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু যিনি মদ কিনে খেতে পারছেন, তাঁর বিনামূল্যের রেশনের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? কেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি তিনি সেই টাকায় কিনবেন না?

দাবি উঠেছে, রেশন কার্ড নিয়ে মদের দোকানে যান ক্রেতারা। সেখানে মদ বিক্রির সময় রেশন কার্ডে স্টাম্প দিয়ে দেওয়া হোক। এবং সেই কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে রেশন পাবেন না ওই গ্রাহক।
এই দাবির পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রোজ দুবেলা অন্নসংস্থান করাটাই এখন বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। লকডাউনের ফলে শুধু অসংগঠিত ক্ষেত্রে নয়, সংগঠিত ক্ষেত্রেও প্রবল আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছে। দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে আক্ষরিক অর্থেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই রয়েছেন অর্ধাহারে, অনাহারে। সুতরাং যাঁরা গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে মদ কিনছেন, তাঁরা সেই টাকা দিয়ে রেশন কিনুন। তাহলে যাঁরা সত্যিই অভুক্ত আছেন, তাঁদেরকে আরও বেশি পরিমাণে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া যাবে।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যাঁরা মদ কিনছেন তাঁরা কি সবাই বিনামূল্যে রেশন পান না? তা হয়তো পান না। কিন্তু বেশিরভাগই পান। আর যাঁরা পান না, তাঁদের যদি এই দুর্দিনে মদ কেনার টাকা থাকে, তাহলে সেটা তাঁরা অভুক্ত মানুষের খাবার জন্য খরচ করুন। বা যে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে তাঁরা মদের দোকানের বাইরে লাইন দিচ্ছেন, সেটা নিয়েই জরুরি পরিষেবায় ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করুন। তাতে অন্তত দেশের মানুষের কিছুটা উপকার হয়। মনে রাখতে হবে, এটা কিন্তু সাধারণ- স্বাভাবিক সময় নয়। অত্যন্ত সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, যাচ্ছে দেশ।
আর সব শেষে প্রশ্ন, মদ না খেয়ে যারা লকডাউন ভেঙে, করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা সরিয়ে রেখে ভোর থেকে উঠে লাইন দিচ্ছেন, তাঁরা পেটে সুরা পড়লে কী আচরণ করবেন? একেই লকডাউনে গার্হস্থ্য হিংসা বেড়ে গিয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। রাজস্ব আদায়ের জন্য মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তাতে আইন-শৃংখলার আরো অবনতি ঘটবে না তো? গত দুদিনের চিত্রটা সেই প্রশ্নই উসকে দিচ্ছে।

Previous articleলকডাউনের মধ্যেই ১২টি দেশ থেকে ১৪ হাজার ভারতীয় ফিরছে দেশে
Next articleদেখুন কেদারনাথ মন্দির