Monday, August 25, 2025

ফুটপাথবাসীদের ক্ষুধা মেটানোর সঙ্গেই সামাজিক দূরত্ব বিধির পাঠ দিচ্ছেন মানবিক পুলিশ অফিসার

Date:

Share post:

“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”। কবি সুকান্তের লেখা কবিতার লাইনগুলি আজকের বাস্তবের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ক্ষুধার সঙ্গে পরিচিত মানুষগুলো পূর্ণিমা চাঁদের রূপ দেখে ঝলসানো রুটি মনে করে। সেই ভাবনা থেকেই কবির কলমে জায়গা করেছিল এই কবিতা।

দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে না পারা মানুষগুলো এই লকডাউনের দিনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়েছেন। নিজের পেটের কথা তো দুরস্ত, ঘরে থাকা ছোট ছোট সন্তান আর বৃদ্ধ মা-বাবার মুখে অন্ন কোথা থেকে আসবে সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা মানুষগুলির। আর এই দুঃসময়ে একান্ত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় দুঃস্থ-অসহায় ফুটপাতবাসী ভবঘুরে মানুষগুলির মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন বারুইপুর জি আর পি এস-এর ভারপ্রাপ্ত অধিকারিক অর্নব দত্ত।

একদিন-দুদিন নয়, লকডাউনের প্রতিটি দিন এই অভুক্ত মানুষদের পাশে এসে দাড়িয়েছেন তিনি, লকডাউনের ৪৭ দিন ধরে একই ভাবে এই মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন অর্ণববাবু ও তার সহকারিরা। ক্ষুধার্তদের মুখে অন্ন না তুলে এখনও একদিনও নিজের মুখে অন্ন নেননি অর্ণব দত্ত।

তাঁর কাছে প্রতিদিন কম-বেশি ১০০ জন ক্ষুধার্ত মানুষ আসেন পেটের জ্বালা মেটাতে। তিনি হাসি মুখে নিজে হাতে পরিবেশন করে তাদেরকে পেট ভরে খাইয়ে তৃপ্ত করেন। নিজেও তৃপ্তি পান।

শুধু তাই নয়, নিজের পরিবারের মতো এই মানুষগুলির মুখে একেকদিন একেক রকম নতুন আইটেমের খাবার পরিবেশন করেন তিনি। আমাদের সবদিন একই খাবার খেতে ভালো লাগেনা, মাঝে মধ্যে একটু ভালমন্দ খাবার আশা আমরা সকলেই করে থাকি। আর সেই ভাবনা মাথায় রেখে কোনওদিন তাঁর মেনুতে থাকে ভাত-ডাল-আলুচকা। কোনওদিন ডিম-সোয়াবিন। আবার কোনওদিন দেশি রুই-কাতলা কিংবা মাংস। সঙ্গে কমন আইটেম চাটনি-পাপড়-দই কিংবা পায়েস-মিষ্টি।

আট থেকে আসি, শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই মিলে একসঙ্গে বসে একান্নবর্তী পরিবারের মত লকডাউনের প্রতিদিন এইভাবেই ক্ষুধা মিটিয়ে যান এখান থেকে। তবে অর্ণব দত্তের একটাই শর্ত। দূরত্ব রাখো বজায়, পেট ভরে খাও বেজায়।

সম্প্রতি সিস্টেমে পরিবর্তন এনেছেন অর্ণব দত্ত। এখন আর প্লাটফর্ম-এ পাশাপাশি বসে খাওয়া নয়। কিছুটা বুফে সিস্টেমের মতো ব্যবস্থা। সারি ধরে প্লেট-ফয়েলে রেডি থাকছে গরম গরম খাবার। আর সামাজিক দূরত্ব ও নিয়মানুবর্তিতা বজায় রেখে একে একে তা নিজেরাই তুলে নিচ্ছে ফুটপাতবাসী আবাল বৃদ্ধবনিতা।

এদিনও তার ব্যতিক্রম হলো না। মেনুতে ছিল ফ্রায়েড রাইস, ও কাশ্মীরি আলুর দম। তবে মেনু বড় বিষয় নয়। দেখুন ফুটপাতবাসী তথাকথিত “অশিক্ষিত” গরিব মানুষগুলি যেভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলো, তা এককথায় নজিরবিহীন। শিক্ষনীয়ও বটে। আর প্রতিনিয়ত তাদের এই শৃঙ্খলা পরায়ণতার পাঠ দিচ্ছেন ওসি অর্ণব দত্ত।

spot_img

Related articles

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...

শান্তিপুরে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ভোটে গোহারা বিজেপি! ২৬-৪-এ জয়ী তৃণমূল 

এসআইআর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মাতামাতির মধ্যে নদিয়ার শান্তিপুরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির নির্বাচনে বড় সাফল্য পেল...