Monday, November 17, 2025

লকডাউনের ফয়দা নিয়ে কেন্দ্র আসলে মানুষকে ঠকাচ্ছে : অভিজিৎ ঘোষের কলম

Date:

Share post:

অভিজিৎ ঘোষ

কোভিডের আড়ালে কেন্দ্র মারাত্মক কিছু পদক্ষেপ করছে, যা দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা দেশের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। যেমন শুক্রবারের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন। ১৩টি পণ্য আর অত্যাবশ্যকীয় থাকছে না। ১৯৫৫ সালের আইন পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ৬৫ বছরের পুরনো আইন বদলে যাচ্ছে। সংসদ বসছে না, তাই অর্ডিন্যান্স আনা হচ্ছে। কৃষকদের পণ্য আর নির্দিষ্ট দামে সরকারি এজেন্সি কিনে নেবে না। সরকার এখানে অপশনাল। কৃষকরা চাইলে সরকার, ফোড়ে, ব্যবসায়ী, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী, যাকে খুশি বিক্রি করবে। আগে কেজিতে ২টাকা লাভ হলে এখন কেজিতে ২০টাকা লাভের সুযোগও থাকছে। সরকার বানিয়াদের মতো পয়সার লোভ দেখিয়ে যে কথাটা বলেনি তা হলো…

১. কৃষক যদি বিক্রি না করতে পারে, তাহলে তার ফসল কে কিনবে?

২. কৃষিপণ্য বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কী হবে? কৃষক যদি বেশি লাভ করতে চায় (যেটা স্বাভাবিক) তাহলে বহু ফোড়ের হাত ধরে বাজারে গিয়ে তার দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে কী ভেবেছে সরকার? গরিবরা সেটা কিনতে পারবে?

৩. রেশনে ২ টাকা কিলো চাল কে দেবে? সরকার তাহলে কৃষকদের থেকে কিনে রেশনে কম দামে দেবে! একদিকে ভর্তুকি তোলার জন্য দৈনিক বায়নাক্কা, অন্যদিকে ভর্তুকি দেওয়ার রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে তাই নয়, পরিমাণও বাড়াচ্ছে।

৪. কৃষিকে কর্পোটাইজেশন করাই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য। দেশে যদি ১০ কোটি কৃষক থাকে তাহলে কতজন এই কর্পোরেটে যুক্ত হতে পারবেন? প্রত্যেক বছর প্রতি রাজ্যে দেখা যায় কৃষকরা ফসলের দাম না পেয়ে ফসল পুড়িয়ে দিচ্ছেন, রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন কিংবা আত্মহত্যা করছেন। যদি বিক্রি করার জায়গা থাকতো তাহলে তো আগেও বিক্রি করা যেত। তাহলে তখন যখন হয়নি, এখন হবে কোন মন্ত্রবলে? শুধু ঘোষণা করে দিলেই হলো?

৫. কয়েক কোটি কৃষক মূলত ঋণের দেনায় ডুবে আছেন। তাঁদের জন্য কোন মনেটোরিয়াম দেওয়া হবে? কে তাদের পাশে দাঁড়াবে?

৬. লোকাল থেকে ভোকাল। ফের একটা আপ্তবাক্যের স্লোগান বিগত তিন দিন ধরে শোনানো হচ্ছে। যদি নিজেদের ব্র‍্যান্ড তৈরি করতে হয় তাহলে এয়ার ইন্ডিয়া ব্র‍্যান্ড দিয়েই বোধহয় শুরু করা উচিত ছিল। সেটাই সরকার চালাতে পারে না। মুখ থুবড়ে পড়ে। বেচে দেয়। গ্লোবাল টেন্ডার দেয়। মানুষ চাকরি হারায়। তারপর এই লোকাল থেকে ভোকাল বা ব্র‍্যান্ডিং ব্যাপারটা সোনার পাথরবাটি ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছে না। এর আগে গত বাজেটের আগেই ১০টা সরকারি সংস্থা বেচার সিদ্ধান্ত হয়। যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবার লাভজনক। তারপর লোকাল ব্র‍্যান্ড ব্যাপারটা খাটে? খাদিতে মোদিজির ক্রেডিট নয়, সেলাম ঠুকতে হলে নেহরুকে ঠোকো।

৭. এই সরকারের লক্ষ্যই হলো পুরনো যা কিছু বদলে ফেল। যোজনা পর্ষদ বদলে দিয়ে দুম করে নীতি আয়োগ হলো। কিন্তু তাতে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন তো হয়নি, নিচের দিকে গড়িয়েছে। কোভিডের আগে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ২% নেমে আসার কথা বলেছিলেন। আর এখন তো অনুমাণ ০%-এর নিচে নামবে। তাহলে এসব বিপ্লবের ফলটা বোঝাই যাচ্ছে।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ব্যাপারটা এই কোভিডের বাজারে তুলে দেওয়া আসলে সঙ্কটের সময়ে ফয়দা তোলা সুযোগ নেওয়া। কোথায় মানুষের হাতে সরকার কাঁচা টাকা দেবে, তা না করে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে কোন জাহান্নমে ঠেলছে তা আগামী দিনেই বোঝা যাবে।

spot_img

Related articles

বাংলাদেশে মৌলবাদী সংগঠন বাড়াচ্ছেন ইউনূস: সাজা ঘোষণার আগে সরব শেখ হাসিনা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ঘোষণা হবে সাজা। তাতে মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাবনা। তা সত্ত্বেও বহু বছরের প্রচেষ্টায় যে আওয়ামী লিগকে প্রতিষ্ঠা...

দিল্লি বিস্ফোরণে গাড়ি ভর্তি ছিল IED! দিল্লিতেই লুকিয়ে ছিল উমরের সহযোগী

দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার আত্মঘাতী জঙ্গি উমরের সহযোগী আমির রশিদ আলি। আশ্চর্যজনকভাবে সেই আমির দিল্লিতে লুকিয়ে থাকলেও প্রায়...

বাংলায় ঢালাও সুবিধা, সেই সব দাবিতে ডবল ইঞ্জিন অসমে পথে চাবাগান শ্রমিকরা

প্রতিবেশী রাজ্যে ঢালাও সুবিধা। জীবনযাপনের মান থেকে পরিবারের নিরাপত্তায় একের পর এক দায়িত্ব পালন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata...

শুট অ্যাট সাইট নির্দেশ ইউনূস প্রশাসনের! হাসিনার রায় বেরোনোর আগে উত্তপ্ত ঢাকা

বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Shiekh Hasina)। সেই অভিযোগের বিচার...