এক নার্সের মৃত্যু, একটু ফিরে দেখা

অনিমা মাল

কোনো নেতা মরে গেলে,অভিনেতা মরে গেলে শোকাতুর পোস্ট এর ঝড় বয়।

আর 29th মে আমফান ঝড়ের রাতে একটা নার্সিং অফিসার ডিউটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে নিজেই শয্যাশায়ী রোগী হয়ে মারা গেলেও কেউ জানতে পারে না।

সুনীতা মন্ডল, পেশায় সেবাব্রতী (নার্স) । মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ড । কোভিড ওয়ারিওর । আমরা আমাদের আর এক সহযোদ্ধাকে হারালাম।

ব্যক্তিগত সূত্রের খবর—
PCOD ছিলো, সেদিন সাডেনলি পেটের ব্যথা আর প্রচন্ড বমি নিয়ে ভর্তি হয়। কোনো ফ্লুইড,ওষুধ কাজ করেনি, ইউরিন আউটপুট ভালো ছিলো না, প্রেসার 60/10 , kidney failure । MMCH এর CCU থেকে NRS আর SSKM এ রেফার করলেও বাড়ির লোক আনতে পারেনি , বেড নেই । কারন,এতবড় হাসপাতালে ক্যাচ না মারলে বেড পাওয়া যায় না ITU,CCU তে। পেশেন্ট নিজেই স্বাস্থ্যকর্মী হলেও এটা কোনো CATCH হতে পারেনা। কারন, catch হতে আমলাতন্ত্রী,মন্ত্রীসান্ত্রী হতে হয় ।
শেষমেশ একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ডাক্তারবাবু দেখেই জানান অবস্থা ভালো না, intubate করা হয়,2 বার dialysis করা হয়। কিন্তু সব বিফলে যায়। আর পরিবার ও পারছিলনা বেসরকারি হাসপাতালের খরচা বহন করতে ।

মাত্র দেড়বছর এই প্রফেশন আশা, অনেক স্বপ্ন নিয়ে। আর কুড়িতেই ঝড়ে গেলো কুঁড়ি। কতটুকুই বা বয়স তার জীবন যার শুরু হলোনা মোটেই! অচিরেই নিভে গেল। ভীষন প্রাণবন্ত,সদা প্রাণোচ্ছল একটি মেয়ে, যে সারাক্ষণ কাজ কাজ কাজ আর কাজ করে মাথা খেত । অথচ কোনো ক্লান্তির ছাপ ছিল না তার সদা হাস্যময় মুখটিতে ।

এই সেদিন ও যে মেয়েটি সারা ওয়ার্ডময় ঘুরে ঘুরে রোগীকে সেলাইন চালিয়েছে,মেডিসিন খাইয়েছে ,ইজেক্শন দিয়েছে, জ্বর মেপেছে,সুগার-প্রেসার চেক করেছে,খাবার খাইয়েছে, কখন কাউকে এক ইশারায় গোল্লা পাকানো চোখ দেখিয়ে চুপ করিয়েছে, কারোর মাথায় হাত রেখে সেরে ওঠার তাকৎ জুগিয়েছে অন্যকে, সে নিজেই আজ চুপ,অচল ,অসাড়। নিজেই আর সেরে উঠতে পারল না ।

সে আর কোনো ইনটার্ন ডাক্তারবাবু কে বকা দেবেনা ” চ্যানেল করার পর গ্লাভস আর স্টিলেড টা কেনো পেশেন্ট এর বেডে রেখেছেন,কেনো discard করেননি প্রপারলি ” বলে ।

সে আর কোনোদিন মাঝরাতে কোনো পেশেন্ট খারাপ হয়ে গেলে অন কল ডাক্তারবাবুকে CALL BOOK লিখে পাঠাবেনা ।

সে আর কোনোদিন ROSTER এ ডিমান্ড অনুযায়ী ছুটি কেন বসল না বলে ইনচার্জ কে জিজ্ঞাসা করবেনা, মন খারাপ করবেনা পুজোয় ছুটি না পেলে।

সে আর কোনো পেশেন্ট এর নাম আর বেড নাম্বার ধরে ” ছুটি নিয়ে যাও” বলে ডাক দেবেনা । সে নিজেই ছুটি নিয়েছে যে চিরতরে।

সুনীতা তোমার অসুম্পূর্ণ লড়াই আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো। এ লড়াই আমরা জিতব। তুমি তোমার সহকর্মী সহযোদ্ধাদের মাঝেই বেঁচে থাকবে ।
তবে, আমি বলবো তুমি আবার ফিরে এসো আমাদের মাঝে, আমাদের সহযোদ্ধা হয়ে ।

ঈশ্বর তোমার আত্মা শান্তি দিক।
আমরা ও তোমার আত্মা শান্তি কামনা করি ।🙏

Previous article“আনলক ইন্ডিয়া”: দেশজুড়ে কোথায় কীসে ছাড়, কীসে নিষেধ দেখুন একনজরে
Next articleকলকাতার বুকে সবুজ ফেরাতে বন দফতরের সঙ্গে বৈঠকে ফিরহাদ, জানুন কী হলো