আনন্দবাজারের সম্পাদকের পদত্যাগ : জল্পনার আড়ালে থানায় একটি চিঠি

আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক পদ থেকে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগ নিয়ে নানা কৌতূহল সংবাদপত্র মহলে। কী সেই কারণ, সে নিয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত। গুঞ্জন আরও বাড়ছে মূলত অনির্বাণ মুখে কুলুপ আঁটায়। কিন্তু সংবাদপত্রটির একটি দায়িত্বপূর্ণ মহলের দাবি, অনির্বাণের পদত্যাগের পিছনে রয়েছে বহুবিধ কারণ রয়েছে। কী সেই কারণ?

প্রথমত…
আনন্দবাজারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বছর ৬২-র অনির্বাণ বেশ কিছুদিন ধরেই বিরক্ত ছিলেন। চার বছর আগে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। প্রথমত এপ্রিল মাসেই জানানো হয় এবছর কোনও ইনক্রিমেন্ট বা প্রমোশন হবে না। কর্মীরা পরিস্থিতি বিচার করে তা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও কর্মীদের বেতন ১৫-৩০% কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু লকডাউনের মে মাস থেকে কর্মী ছাঁটাই শুরু হতেই আতঙ্ক ছড়ায় সর্বত্র। প্রায় ২৫০-৩০০ জনকে ছাঁটাই করা হয়। বন্ধ করা হয় টেলিগ্রাফের উত্তর-পূর্ব ও ঝাড়খন্ড সংস্করণ। এরপর আনন্দবাজারের এক বৈঠকে শোনা যায় সম্পাদকীয় বিভাগের ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব নেওয়া হয়। অনির্বাণ নাকি তার বিরোধিতা করেন। কিন্তু তাঁকে উপেক্ষা করেই ছাঁটাই শুরু হয়। টার্গেট অন্তত ৫০ জন। ঘনিষ্ঠ মহলে অনির্বাণ নাকি বলেছিলেন, এ পাপের বোঝা আর বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারছি না। ফলে প্রত্যেকে বুঝেছিলেন অনির্বাণ পদত্যাগের পথেই যাচ্ছেন।

দ্বিতীয়ত…
পরপর দুটি পুলিশি পদক্ষেপ নিয়ে অনির্বাণ ব্যক্তিগতভাবে বিরক্ত ছিলেন। সংবাদপত্রে বাঙ্গুর হাসপাতাল সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশ নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে আনন্দবাজার হাউসের সমস্যা বাড়ে। স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশেই হেয়ার স্ট্রেট থানায় আনন্দবাজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। আর সেই অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই ২৫মে হেয়ার স্ট্রেট থানায় অনির্বাণকে ডেকে পাঠানো হয়। অনির্বাণ অবশ্য হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসিকে চিঠি দিয়ে জানান, তিনি আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত তিনি সিনিয়র সিটিজেন, ৬২ বছর বয়স, এবং কোভিড পরিস্থিতির কারণে তাঁর চিকিৎসক পাবলিক প্লেসে বেরোতে বারণ করেছেন। এই সংক্রান্ত ডাক্তারি সার্টিফিকেট তিনি থানায় জমা দেন। অনির্বাণের চিঠি পাওয়ার পর অবশ্য থানা থেকে এরপর আর যোগাযোগ করা হয়নি। এর বাইরে আর একটি মামলা নিয়ে অনির্বাণ ব্যতিব্যস্ত ছিলেন বলে খবর, সেটি তাঁর পুত্র সংক্রান্ত বিষয়, যিনি বিদেশে পড়াশোনা করেন। এ নিয়ে সত্যতা অবশ্য জানা যায়নি। গত এক সপ্তাহ ধরে অনির্বাণের গ্রেফতারি নিয়ে নানা রটনা মুখে মুখে ঘুরতে থাকে। প্রথমে রাজ্যপালের ট্যুইট এবং তারপরে সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর ট্যুইট। দুটি ট্যুইটই আনন্দবাজার ম্যানেজমেন্টকে যথেষ্ট বিপদে ফেলে। তারা অনির্বাণের উপর আস্থা হারাচ্ছিলেন বলে খবর।

তৃতীয়ত…
অনির্বাণের সঙ্গে আনন্দবাজারের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। বয়স অনুযায়ী অনির্বাণের অবসরের বয়স হয়ে গিয়েছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অবশ্য এই নিয়মের কড়াকড়ি বিশেষ নেই। চাইলে প্রতিষ্ঠান এক্সটেনশন দিতে পারত অনায়াসেই।

প্রশ্ন হচ্ছে অনির্বাণ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেন নাকি অন্য কোনও বাধ্যবাধকতায় তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন! এটা ঠিক পদত্যাগ করে সরকারি মামলার পাশাপাশি ছাঁটাইয়ের দায়, দুটি থেকেই আপাতত রেহাই পেলেন বর্ষীয়ান প্রাক্তন সম্পাদক। কিন্তু পদত্যাগ করে কি আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব হবে! ক্রমশ তা প্রকাশ্য।

Previous articleকরোনার জেরে রাজ্যে টান পড়তে পারে অক্সিজেনের, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
Next articleদেবজিৎকে সরিয়ে বিজেপির যুব সভাপতি সৌমিত্র খাঁ