“আমরা ৩জন মৃত”: ঠাকুরপুকুরে রহস্যমৃত্যুতে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবেশীরা

ঠাকুরপুকুরে এক পরিবারে তিন সদস্যের রহস্যমৃত্যু। বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বাবা, মা ও ছেলের মৃতদেহ। দেহের পাশে চক দিয়ে লেখা রয়েছে “তিনজনই মৃত”। একটি কাপে লেখা “সাবধান, পাত্রে বিষ রয়েছে” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁরা। পুলিশের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। ঘটনার তদন্তে নেমেছে ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ।

কিন্তু কী কারণে গোটা পরিবার একসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল? স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই বাড়িতে থাকতেন ৮০ বছরের গোবিন্দ কর্মকার, তাঁর স্ত্রী রাণু এবং ছেলে দেবাশিস। ছেলেটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় বৃদ্ধের উপরে ছিল সংসারের ভার। গত রবিবার বাড়ির কাজে বাইরে বেরিয়ে ছিলেন তিনি। সেখানে রাস্তায় পড়ে যান। স্থানীয়রা তাঁকে তুলে পৌঁছে দিলে বাড়ির সামনে আবার পড়ে যান ওই বৃদ্ধ। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান প্রতিবেশীরাই। কারণ, বৃদ্ধের স্ত্রী গত কয়েকবছর ধরে পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় থানায় খবর দেওয়া হয় স্থানীয় থানা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে গিয়ে গোবিন্দ সহ পরিবারের তিনজনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ হাসপাতালে আগে থেকেই চলে যায়।
হাসপাতালে পৌঁছে বৃদ্ধের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ে দেহের তাপমাত্রা বেশি দেখা যাওয়ায় ভর্তি নিতে অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বারবার পুলিশের ফোন করে যোগাযোগ করেন সঙ্গে থাকা প্রতিবেশীরা।
কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
রাতে তিনজনকেই অ্যাম্বুল্যান্স করে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কারণ সেটি কোভিড হাসপাতাল।
কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায় যখন বৃদ্ধের দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক। সেখানে তাঁকে ভর্তি নিতে রাজি হননি চিকিৎসকরা।
সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এনআরএসে।
এনআরএস হাসপাতাল জানিয়ে দেয় সেখানে বেড নেই।
তিনজনকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে ফিরে আসে ঠাকুরপুকুরের বাড়িতে।
পুলিশ তাঁদের বাড়িতে রাখতে চাইলেও প্রতিবেশীরা বাধা দেন। তাঁরা জানান, এই পরিবারের দেখাশোনা করার মত কোনও আত্মীয়-স্বজন নেই। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র বৃদ্ধই ছিলেন কর্মক্ষম ব্যক্তি। এই অবস্থায় এই পরিবারটিকে ফেলে রাখলে তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হবে না। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও তাঁদের ওইভাবে রেখেই পুলিশ চলে যায়।এরপরে সোমবার আর কারও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার, সকালে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয় দরজা খুলে তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। চক দিয়ে মেঝেতে লেখা ছিল “আমরা তিনজনে মৃত”। খাটের পাশে একটি টেবিলে রাখা ছিল একটা কাপ। সেই কাপের গায়ে লেখা ছিল, “সাবধান এতে বিষ আছে”। দেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশ আর একটু তৎপর হলে, হয়তো পরিবারটিকে বাঁচানো যেত। যদিও পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে বৃদ্ধের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়েছিল এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

Previous articleসীমান্ত নিয়ে শাহকে কটাক্ষ রাহুলের, কবিতার ছন্দে পাল্টা বিঁধলেন রাজনাথ
Next articleক্ষতিগ্রস্তদের ভুয়ো তালিকা? কাঠগড়ায় ৪ বিদায়ী কাউন্সিলর