মায়া ক্যালেন্ডারের ভ্রান্তিতে পা না দিয়ে আসুন গ্রহণের রিং অফ ফায়ারে মুগ্ধ হই, অভিজিৎ ঘোষের কলম

অভিজিৎ ঘোষ

মায়া ক্যালেন্ডার বলছে, কাল, ২১জুন পৃথিবী ধ্বংসের দিন। বেশ কিছুদিন থেকে এ নিয়ে আলোচনা। মিডিয়াও লোভনীয় বিষয়টাকে খোরাক করে ছেড়েছে। আর যারা অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস রাখেন, তাঁরা বলছেন, ঘোর কলিকাল এসব তো হওয়ারই ছিল!

কেন বলছেন?

বিশ্বাসটাকে সুদৃঢ় করার জন্য নানা উদাহরণ টানছেন তাঁরা মায়ার ফাঁদের জালে জড়াতে। করোনা, টানা ভূমিকম্প ও দিল্লি বা উত্তর ভারত ও পূর্বাঞ্চলে প্লেট সরে বিরাট ভূকম্পনের সম্ভাবনা, বিশ্বযুদ্ধের আগে ছায়া যুদ্ধ, পৃথিবীর দিকে গ্রহানু ধেয়ে আসা, বিধ্বংসী আমফান, সবই নাকি মায়া ক্যালেন্ডারের পৃথিবী ধ্বংসের আভাস।

মায়া ক্যালেন্ডারে কী রয়েছে?

মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডার কী বলছে? মায়া ক্যালেন্ডার শুরু ৫১২৫ বছর আগে। কন্সপিরেসি থিয়োরিস্টদের ধারণা ছিল সেই ক্যালেন্ডার শেষ হচ্ছে ২১ ডিসেম্বর, ২০১২। মায়া ক্যালেন্ডার শেষ মানে পৃথিবীও শেষ। কিন্তু ৮বছর বাদে মায়ার মায়ায় বিশ্বাসীরা বললেন, গ্রেগ্রিয়ান ক্যলেন্ডারে ১১দিনের সমান মায়া ক্যালেন্ডারের ১ দিন। এই ক্যালেন্ডার ১৭৫২ থেকে শুরু, ২৬৮ বছর পেরিয়েছে। এই ২৬৮ বছরকে গ্রেগ্রিয়ান ক্যালেন্ডারের ১১দিন বা মায়াক্যালেন্ডারের ১ দিন সঙ্গে গুন করলে হয় ২৯৪৮। এই সংখ্যাকে ৮ দিয়ে ভাগ করলে ৮ বছর হয়। এই ৮ বছরের হিসাব গরমিল হয়েছিল বলে দাবি মায়া বিশ্বাসীদের। এই ৮ বছর ২০১২-র সঙ্গে যোগ করলে ২০২০র ২১ জুনই হচ্ছে।

আর বিজ্ঞানীরা কী বলছেন? তাঁরা বলছেন…

১. যারা ন্যূনতম বিজ্ঞান পড়েছেন, তাঁরা এই অবাস্তব কথা বিশ্বাস করবেন না। বিজ্ঞানের সঙ্গে মায়া ক্যালেন্ডারের কোনও সম্পর্ক নেই

২. মায়া ক্যালেন্ডার যদি সত্য হয়, তাহলে ক্যালেন্ডার শুরুর দিন পৃথিবীর জন্ম। অথচ আমরা জানি পৃথিবীর জন্ম কয়েক হাজার কোটি বছর আগে।

৩. মায়া ক্যালেন্ডারকে কোথাও একটা শেষ করতে হতো। অনন্তকালের ক্যালেন্ডার তো লেখা সম্ভব নয়! ফলে কোথাও একটা শেষ করেছে। সেটা ২০২০-র ২১ জুন হয়েছে।

৪. সূর্য গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই করোনা পালাবে বলে যারা বলছেন, তাঁরা ভুল। করোনা ভাইরাসের সঙ্গে সূর্যের আলো, রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি বের হলেও তার সঙ্গে করোনা ভাইরাস আটকানোর কোনও সম্পর্ক নেই

৫. এখন বিজ্ঞানীরা আগের চাইতে অনেকটাই আধুনিক। সে সময় বিজ্ঞানের সামান্যতম অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। তারা কোনও কিছুর কার্যকারণ ছাড়াই ভবিষ্যতবাণী করে ফেলছেন, অথচ এখনকার বিজ্ঞানীরা যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ দিয়ে বলছেন এমন সম্ভাবনা নেই।

তাহলে কোনটা বিশ্বাস করা উচিত?

Previous articleরাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত, সংখ্যাটা চমকে দেওয়ার মতো!
Next articleএকনজরে বাংলার করোনা আপডেট