ভার্চুয়াল পথেই বিরোধী শিবির ছত্রভঙ্গ করতে আজ আসরে মমতা

আজ এক ‘অন্য’ ২১ জুলাই

রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল যে ২১ জুলাইয়ের সঙ্গে পরিচিত, আজ, সে ছবি দেখা যাবেনা৷ যে ২১ জুলাইকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ৫-৭দিন আগেই সেজে উঠতো কলকাতা, আজ তা রোমন্থন করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই৷ আসলে ২১ জুলাইয়ের ঐতিহাসিক সমাবেশই তৃণমূল কংগ্রেসের আসল লোগো, প্রকৃত প্রতীক চিহ্ন৷ একুশের মঞ্চ থেকেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের পরবর্তী বারো মাসের পথনির্দেশ করেন৷ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের লাখো লাখো কর্মী-সমর্থক এই ২১ জুলাইয়েই সুযোগ পেতেন সরাসরি দলনেত্রীর মুখ থেকে নির্দেশ, পরামর্শ শোনার৷

প্রতি বছর আর এ বছর এক নয়। এক অদৃশ্য ভাইরাসের আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে এ শতাব্দীর ‘নরমাল’ জীবনযাত্রা৷ দুনিয়া এখন ‘নিউ নরমাল’-কে সসম্মানে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে৷ ‘নতুন স্বাভাবিকতা’-র সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে না’কি ছিটকে যেতে হবে৷ তাই বদলে গিয়েছে ২১ জুলাই, তৃণমূলের চিরাচরিত ‘শহিদ দিবস’ পালনও৷ সংক্রমণ এড়াতে সজাগ মুখ্যমন্ত্রী বদলে দিয়েছেন ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচিও৷

এ দৃশ্য এবার দেখা যাবেনা

আজ আর ধর্মতলার মোড়ে নয়, একুশের নির্বাচনের আগে শেষ একুশে জুলাইয়ের ‘শহিদ-দিবস’ তৃণমূল পালন করছে ‘ভার্চুয়ালি’৷
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের বৃহত্তম মাইলস্টোন। সেই দিনটি স্মরণ করার কর্মসূচি কোনও পরিস্থিতিতেই হালকাভাবে নেননি মমতা৷ ভার্চুয়াল সভার আয়োজনও তাই জবরদস্তভাবেই হয়েছে।
রাজ্যের সব বুথে শহিদ বেদী বানিয়ে ১৯৯৩-এর ২১ জুলাইয়ের শহিদদের স্মরণ করা হবে৷ আর কয়েক ধাপ কর্মসূচি সেরে, আজ সবার শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখবেন। ভার্চুয়ালি সেই বক্তব্য পৌঁছে যাবে বাংলার কোণায়-কোণায়। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত নেত্রীর ভাষণের সঙ্গে ভার্চুয়ালি জুড়ে যাবেন তৃণমূলের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী। নিজের ফেসবুক পেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “Every year, July 21 brings back the painful memories of 13 lives that were lost to the barbarity of the erstwhile Left Front Government for standing up to protect democracy. It is a day of sorrow but also a day to remember the valour and bravery of the martyrs.
We will commemorate Saheed Diwas live from the AITC Facebook and Youtube accounts at 2pm. Join us and pay your respect to the martyrs.”
এই প্রথম বার শহিদ স্মরণ ভার্চুয়ালি করছে তৃণমূল। এবং এই প্রথমবার ভার্চুয়াল পথেই বিরোধী শিবির ছত্রভঙ্গ করতে আসরে নামছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের এই ভার্চুয়াল সভার সর্বাত্মক সাফল্যের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যজুড়ে হাজারো জায়ান্ট- স্ক্রিণে দেখা এবং শোনা যাবে নেত্রীর বক্তৃতা৷ অতিমারি এমনই এক বেনজির আবহ তৈরি করেছে৷
আজ, রাজ্যের প্রতি বুথে তৈরি হয়েছে শহিদ বেদী। সামাজিক- দূরত্ব বিধি মেনেই সেখানে দুপুর ১টা থেকে ২টোর মধ্যে শোকজ্ঞাপন, মাল্যদান এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। দলীয় বিধায়ক এবং সাংসদদের যতগুলি বুথে সম্ভব থাকতে বলা হয়েছে। ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে, প্রত্যেক বার যেখানে সমাবেশ হয়, সেখানেও শহিদ বেদী তৈরি হয়েছে। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই নিহত ১৩ জনের উদ্দেশে আজ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা-নেত্রীরা৷
ওদিকে নেত্রী বলেছেন, “আমরা দুপুর ২টায় এআইটিসি ফেসবুক এবং ইউটিউব একাউন্ট থেকে শহিদ দিবস সরাসরি স্মরণ করব। আমাদের সাথে যোগ দিন এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করব”।
এ বারের শহিদ দিবস উপলক্ষে বিশেষ গান লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সোমবার সুপ্রিমো লিখেছেন, “আমার লেখা গান “যৌবন জাগো নতুন ভোরে” আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি। লেখাটিতে সুর দিয়েছেন দেবজ্যোতি বসু৷ গেয়েছেন সা রে গা মা পা -য় অংশ নেওয়া ১১ জন শিল্পী। সঙ্গে কোরাসে গলা মিলিয়েছেন ৬টি জেলার আরো অনেকে। আশা করি গানটি আপনাদের ভালো লাগবে”। আজ সকাল থেকেই পাহাড় থেকে সাগরের বুথে বুথে এই গান বাজছে৷
প্রত্যেক বুথে শহিদ-বেদী তৈরি করে শ্রদ্ধা জানাতে এবং দলের পতাকা উত্তোলন করতে বলা হয়েছে। তবে দুপুর ১টা থেকে ২টোর মধ্যে সেই সব বুথভিত্তিক কর্মসূচি সেরে ফেলতে হবে। দুপুর ২টোয় শুরু হবে দলের চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ।
আজকের এই শহিদ দিবসের কর্মসূচি নিজেই সাজিয়েছেন দলনেত্রী৷ আপাতত ঠিক হয়েছে-

◾বেলা সাড়ে ১১-টায় বিড়লা তারামণ্ডলের পাশে ‘একুশে স্মারক’- এ মাল্যদান করবেন ফিরহাদ হাকিম৷

◾ওই একই সময়ে ধর্মতলার শহিদ স্মৃতিবেদিতে মালা দেবেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসি৷

◾বেলা ১২টায় রাজ্যের সব বুথে তোলা হবে দলীয় পতাকা ।

◾বেলা ১টায় রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভাষণ দেবেন স্থানীয় বিধায়ক অথবা জেলার নেতারা।

◾ দুপুর ২ টোয় ভাষণ দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

আজ ২১ জুলাই, এই প্রথমবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ভাষণ দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক সময়ে নির্বাচন হলে, হাতে আর ৮-৯ মাস৷ আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে দিল্লি এবং বঙ্গ- বিজেপি৷ এই পরিস্থিতিতে ধর্মতলার সমাবেশ তৃণমূলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো৷ কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজ তা সম্ভব হয়নি৷ তবে আজ
দলনেত্রীর ভার্চুয়াল ভাষণের দিকেই তাকিয়ে যেমন তৃণমূল, তেমনই বিরোধী শিবিরও৷

এবং আজ আর একটু পরেই সম্ভবত এ রাজ্যেও ভোটের ডাকে কাঠি পড়তে চলেছে৷

Previous articleব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleচোপড়া কাণ্ডে কিশোরীর পরিবারের পাঁচজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের