Sunday, November 9, 2025

বঙ্গ-বিজেপি ভোটে যেতে কতখানি তৈরি ( ২ ) কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

কণাদ দাশগুপ্ত

ভোট-রাজনীতিতে অন্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলার বিস্তর ফারাক আছে৷ এখানে যেমন শুধুই ‘ধর্ম’-কে ইস্যু বানিয়ে ভোটে যাওয়া যায়না, তেমনই রাজ্যের প্রায় ২৮ শতাংশ নাগরিককে ভোট-ময়দানের বাইরে রেখে সাফল্য পাওয়া কষ্টকর৷ কংগ্রেস, বামফ্রন্ট বা তৃণমূল, কেউই এই বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটারদের আস্থা এড়িয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেনি৷

ভোট মানেই অঙ্কের খেলা, অঙ্ক কষে ভোট বৃদ্ধির ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করে, সেখানে প্রভাব বিস্তার করতে না পারলে ‘গুড-লুজার্স’ হয়েই অভিনন্দন কুড়াতে হয়৷ তথাকথিত ‘আদর্শের’ ভূমিকা ভোট রাজনীতিতে খুবই কম৷ তা না হলে সিপিএম ও কংগ্রেস জোট গড়ে একসঙ্গে ভোট চাইতে নামতো না৷ আরও আগে, বিজেপি এবং তৃণমূলও ১৯৯৯ সালে একসঙ্গে ভোটে যেত না৷ এতে তেমন কোনও নীতিহীনতা নেই৷ গোটা দেশের প্রায় সব রাজ্যেই বিচিত্র সব জোট দেখা যায় একটাই কারনে, ভোট পাওয়ার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা৷ এবং এই কারনেই দেশের এক একটি রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি এক এক টাইপের জোট গড়েই ভোটে যাচ্ছে, যাতে এক বা একাধিক শরিকের ভোট বিজেপি নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টে এসে মেশে৷ কিছুটা ভোট এখনও ধরে রাখতে পেরেছে, বাংলার এমন কোনও দলই বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে বা আসন সমঝোতা করে বিধানসভা ভোটে যাবে না, এটা নিশ্চিত৷ ফলে শরিক দলের বাড়তি ভোট পদ্ম-শিবিরে ভিড়ছে না৷

দ্বিতীয়ত,, ২০১১-র সেন্সাস রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যা ৯১.২৭৬.১১৫ এবং এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ২৪.৬৫৪.৮২৫ জন৷ শতাংশের হিসাবে বাংলার মোট জনসংখ্যার
২৭.০১ শতাংশই মুসলিম৷ এটা ২০১১-র হিসাব, এখন এই হিসাব বদলে গিয়েছে, রাজ্যে মুসলিম পপুলেশন প্রায় ২৯-৩০ শতাংশ৷

তাহলে, বঙ্গ-বিজেপির ভোটের অঙ্ক কী বলছে ? প্রথমত, অন্য প্রায় সব রাজ্যে ‘জোট গঠন’ করার যে ফয়দা বিজেপি তুলছে, বাংলায় তা হচ্ছে না৷ ফলে সামান্য যে ৩-৪ শতাংশ ভোট বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিলো, সেটা নেই৷ এবং দ্বিতীয়ত, রাজ্যের কমবেশি ২৯-৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট বিজেপি এড়িয়ে চলছে৷ ভোটের দোরগড়ায় এসেও তেমন কোনও উদ্যোগ নিয়ে রাজ্য বিজেপিকে পথে নামতে দেখা যায়নি৷ ফলে একুশের ভোটে ৭০ শতাংশ হিন্দু ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পদ্মফুলেই ছাপ দেবে, এটা ধরেই নিয়েছে বিজেপি৷ এটা বুঝতে পণ্ডিত হওয়ার দরকার নেই যে, ৭০% অ-মুসলিম বা হিন্দু ভোটের মধ্যে তৃণমূল, বিজেপি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ভোট আছে৷
কোনও ভোটেই সামগ্রিকভাবে ১০০ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়না৷ ওদিকে, ৭০% শতাংশ হিন্দুর সবাই যে ভোটার তেমন হতে পারে না৷ এই ৭০% জনসংখ্যার যারা ভোটার, তাদের মধ্যে তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম এবং অন্য দলের ভোটার আছেই৷ তাহলে শুধু এই ৭০% ভোটের কত শতাংশ ভোট একাই বিজেপি পেয়ে সরকার গড়বে ? অন্য রাজ্যে মুসলিম প্রার্থী না দিয়ে বা মুসলিম ভোটের তোয়াক্কা না করে বিজেপি ভোটে গেলেও, এ রাজ্যে সেই ফরমুলার কপি-পেস্ট কতখানি কার্যকর হবে, তা দলের শীর্ষনেতারা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখছেন৷

রাজ্যে তৃণমূল ঘর গুছিয়ে ভোট ময়দানে নেমে পড়লেও বঙ্গ-বিজেপি এখনও সে পথে হাঁটা শুরুই করতে পারেনি৷ দলের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে চলে এসেছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠছে, ৪ সাংসদ তৃণমূলে যাচ্ছেন, সভাপতি বদল হচ্ছে, রাজ্য থেকে একজন কেন্দ্রীয় কমিটিতে অথবা মন্ত্রিসভায় ঢুকছেন৷ এসবই জল্পনা, কিন্তু বিজেপির মতো সংগঠিত দলে এ ধরনের জল্পনা এমনি এমনি হয়না৷
দিল্লির বৈঠকে কাজের কথা কতখানি হয়েছে, তা ওই দলের নেতারা বলতে পারবেন, কিন্তু ম্যারাথন বৈঠককে কেন্দ্র করে ‘মঞ্চস্থ’ হওয়া একাধিক একাঙ্ক নাটকের কথা রাজ্যবাসী শুনেছেন৷ মোটের উপর, বঙ্গ- বিজেপি এখনও একুশের ভোটে যেতে তৈরি হতেই পারছেনা৷

রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করার কাজ বিজেপি গত ৬ বছর ধরে শুরুই করতে পারেনি৷ রাজ্য কমিটিতে একজনও প্রভাবশালী মুসলিম মুখ নেই৷ দলের সংখ্যালঘু মোর্চার কাজ ঠিক কী, তা দলের নেতা-কর্মীরাও বুঝতে পারছেন না৷ বঙ্গ- বিজেপির সর্বস্তরের নেতারা একবগ্গা হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘মুসলিমদের দল’ বলে প্রচার করে চলেছে৷ নিশ্চয়ই তাঁদের ধারনা, এমন বলা হলে হিন্দুভোটের বড় অংশ গেরুয়া শিবিরে আসবে৷ নেহাতই কষ্টকল্পনা৷ বিজেপি নেতারা মুসলিমদের প্রতি এতখনি উষ্মা প্রকাশ না করে কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিমদের জন্য যে সব প্রকল্প ঘোষণা করেছে, তার প্রচার করলে তা ইতিবাচক হয় এবং কাজের কাজ কিছু হতেও পারে৷ কিন্তু কে বোঝাবে ৷ বঙ্গ-বিজেপির কোন কোন নেতা কেন্দ্রের” ওস্তাদ প্রকল্প”, “মঞ্জিল প্রকল্প” বা
“হুনর হাট প্রকল্প”-র কথা জানেন, তা নিয়েই সন্দেহ আছে৷ মুসলিম এলাকার উন্নয়ণে সত্যিই এ পর্যন্ত কেন্দ্র কিছু গঠনমূলক কাজ করে থাকলে, তা প্রচার করার দায়িত্ব কার ?
মাঝে মধ্যেই শোনা যায়,
RSS অনুমোদিত মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ বা MRM নাকি রাজ্যের দিকে নজর দিয়েছে৷ MRM-এর মার্গদর্শক ইন্দ্রেশ কুমার নাকি খোঁজখবর নিচ্ছেন৷ খোঁজখবর নেওয়া মানে
বাইপাসের ধারে এক পাঁচতারা হোটেলে বসে বঙ্গ-বিজেপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলা৷ একুশের ভোটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বঙ্গ-বিজেপি এখনও বলছে, রাজ্যের মুসলিমদের মধ্যে কীভাবে দলের সমর্থন বাড়ানো সম্ভব তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। কবে আলোচনা শেষ হবে, কবে রাজ্য-কমিটিতে গ্রহণযোগ্য মুসলিম-মুখ আসবে, কবে কাজ শুরু করবে, তা কেউই জানেনা৷

বঙ্গ-বিজেপির নেতাদের গতিবিধিই বলছে, রাজ্যের ২৯-৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট বাদ দিয়েই শাসন ক্ষমতা দখল করা যাবে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত৷ কৌশলগত কারনেও মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরানোর কাজে নামলে নাকি হিন্দুভোট হাতছাড়া হবে৷ অবশ্য রাজ্য- বিজেপি ‘আশাবাদী’, আসাউদ্দিন ওয়াইসি’র ‘মিম’ এ রাজ্যে ঢালাও প্রার্থী দিয়ে মুসলিম ভোটে ভাগ বসালেই কেল্লা ফতে ! বাংলার ভোট-রাজনীতিতে এখনও কি সড়গড় হতে পারেননি বঙ্গ-বিজেপির নেতারা ?

বাংলায় মুসলিম ভোট অবজ্ঞা করে ক্ষমতায় আসা সহজ না কঠিন, তা বোঝা যাবে একুশের বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই৷

Related articles

বেঁচে থাকলে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত! পুরুলিয়ার সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ দেবাংশুর

ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বেঁচে নেই। নইলে বিজেপি রবীন্দ্রনাথকে রোহিঙ্গা ও নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত। শনিবার পুরুলিয়া শহরের...

টাকা পেয়েও কাজে দেরি! ‘বাংলার বাড়ি’ নিয়ে কড়া প্রশাসন, রিপোর্ট চাইল নবান্ন

প্রথম দফায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার পরও বহু উপভোক্তা এখনও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের কাজ শুরু করেননি।...

ঝুলনের চোখে বাংলার সেরা ক্রিকেটার রিচা, মহিলা ক্রিকেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সৌরভ

বাংলার বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র ক্রিকেট তারকা রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন...

সৌরভ ছাড়া অন্য কারও ICC সভাপতি থাকার কথা নয়: বললেন ‘ঠোঁটকাটা’ মমতা

ছিল বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শনিবার ইডেনে সেই অনুষ্ঠানে বোমা ফাটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের...
Exit mobile version