কিছু কড়া প্রশ্ন এবং বিকৃত নাটক
গত দুদিন ধরেই ওরা বলছিল। ঠিক করা ছিল শুক্রবার দেখা হবে।
একাধিক পোর্টাল, ডিজিটাল মিডিয়া। ক্যাম্পেন কলিংয়ের দীপান্বিতা, প্রথম কলকাতার মৃত্যুঞ্জয়, আরও দুএকজন।
কয়েকটি প্রশ্ন করবে এবং আমাকে তার উত্তর দিতে হবে।
দুপুর পর্যন্ত সেইসব পর্ব গেলো।
বেশ কড়া প্রশ্ন। জবাব দিলাম।
একজন সাক্ষাৎকারের আগে বলল, “দাদা, অপ্রিয় প্রশ্ন যদি দুএকটা করি কিছু মনে করবেন না তো?”
বললাম,” একদম না। আমি কি জানি না যে তোমার জায়গায় আমি থাকলে কী প্রশ্ন করতাম? যা ইচ্ছে প্রশ্ন করতে পারো।”
অতঃপর প্রশ্ন হল। উত্তরও গেল। কতটা কী দেখাবে, তাদের ব্যাপার।
তবে, সেই অল্পবয়সী তরুণতুর্কীদের মানসিকতা ভালো লাগল।
এরা সামনে এসে অপ্রিয় প্রশ্ন করছে।
যেটা আমি পক্বকেশ বিশেষজ্ঞের মধ্যে পেলাম না।
দুর্ভাগ্যজনক।
আমাকে কটা দিন আগেই একজন ফোন করে বলেছিলেন সারদা নিয়ে কিছু অপ্রিয় প্রশ্ন করতে চান। আমার বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ তিনি শোনেন, তাই নিয়ে। আমি রাজি কিনা।
আমি সাগ্রহে বলেছি রাজি। এই সাক্ষাৎকার দেব।
বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম, আমার কাছে ফোন এল না। সাক্ষাৎকার হল না। অথচ আমার সেই বিষয়গুলি জড়িয়ে তিনি নিজেই একতরফা গোলাগুলি চালিয়ে ভিডিও আপলোড করলেন।
কত রেগে রেগে বললেন,” কুণালবাবু, আপনি কি উত্তর দেবেন? আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই…।”
সঙ্গে কিছু দর্শকের পোঁ। তালিয়া। তালিয়া। বিপ্লবী।
একবারও বললেন না যে কুণাল ঘোষকে তিনি সারদা নিয়ে সাক্ষাৎকারের অনুরোধ করেছিলেন।
কুণাল ঘোষ তাতে সানন্দে রাজি হয়েছিল।
কিন্তু তাঁর মুরোদ হয়নি কুণাল ঘোষের সামনে প্রশ্ন নিয়ে হাজির হওয়ার।
তার বদলে তিনি একা একা পর্দায় প্রশ্ন করলেন, রাগলেন, আগুন ঝরালেন।
আমি বিস্মিত!!!
তিনি কী বললেন, কতটা ঠিক বা ভুল বললেন, তার উত্তর অন্তত তাঁকে এখন আর দিতে চাই না। যা ইচ্ছে বলে যান।
কিন্তু তাঁর যে অনুষ্ঠান দেখতাম, বিরোধিতা থাকলেও দেখতাম, লোকটার প্রতি সম্মানটাই চলে গেলো।
কেমন যেন সস্তা প্রচারকামুক মনে হল।
উনি নিজে বললেন সারদা নিয়ে অপ্রিয় প্রশ্ন করতে চান।
আমি যদি রাজি না হতাম, যা ইচ্ছে বলতেন।
কিন্তু যেখানে আমি মানুষের মুখোমুখি হতে রাজি, সেখানে সেটা এড়িয়ে সেই তথ্য গোপন করে তিনি একতরফা আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছে বলে গেলেন।
না জেনে বহু লোক বলেন; আমি কিছু মনে করি না।
কিন্তু সাক্ষাৎকার ঠিক হওয়ার পর সেটা এড়িয়ে নিজেকে বিপ্লবী নায়ক সাজাতে তিনি যা করলেন, তা অতি সংকীর্ণ এবং সস্তা কাজ।
আরে, ওঁর প্রশ্নের আমি যদি উত্তর দিতে না পারতাম, মানুষ দেখতেন। বিচার করতেন। আপনি বাংলার মানুষের নাম করে নিজের বার্তা প্রচার করতে গেলেন কেন?
ওঁর বহু কথা, উপস্থাপনায় আমার বিরোধিতা।
কিন্তু আমি দেখতাম।
এবার এইভাবে নিজেকে এতটা লঘু করে ফেললেন কেন, জানি না।
মনে হচ্ছে নিজের কিছু বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার জন্যেই উনি সাক্ষাৎকার থেকে পালিয়ে নিজস্ব বিপ্লবীয়ানার প্রচারে মন দিলেন।
অথচ, আজকেই একাধিক তরুণ সাংবাদিক আমার সামনে বসে দিব্যি কড়া কড়া প্রশ্ন করে গেল। আমি কতটা কী উত্তর দিতে পারলাম, দেখলে বোঝা যাবে।
কিন্তু ওরা তো করল।
পক্বকেশের মত প্রশ্ন করব বলে নিজে উধাও হয়ে একতরফা নিজের বিপ্লবী প্রজেকশনে গেল না।
আমি দেখলাম আমি কড়া প্রশ্ন নিতে রাজি।
কিন্তু মানুষটির উদ্দেশ্য অন্য। শুধু নিজের প্রজেকশন।
এত কথা বললেন, বাতাসে আমার নামে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন; কিন্তু দর্শকদের বললেন না যে কুণাল ঘোষ নিজে জবাব দিতে রাজি ছিল। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেও মাঝপথে পালিয়েছি।
যাক, এই বয়সে একটু একক ইমেজ বিল্ডিং প্রচার চাইছেন।
ভালো।
শুভেচ্ছা রইল।
আর বন্ধুদের বলি, আমার প্রতি কী কী প্রশ্ন আসতে পারে, তার সম্যক ধারণা আমার আছে।
প্রতিটির জবাব তৈরি।
সময় এলেই পাবেন।
একটু ধৈর্য তো ধরুন।
এক একটি পোস্ট, এক একটি মুহূর্ত দেখেই যাঁরা সব বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করেন, তাঁদের বলব, আরে, একটু ধৈর্য ধরবেন তো।
কুণাল ঘোষ সামনে আছে।
থাকবে।
কৈশোর থেকে বহু পরিশ্রমে, সাধনায় সে বাংলা সাংবাদিকতায় পরিচিত মুখ।
কোনো কুৎসিত ঘটনায় অজান্তে বিধ্বস্ত সে।
দেখতে থাকুন। নজর রাখুন।
এত কিছুর পরও ঈশ্বর যখন তাকে আপনাদের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছে, একটু ভরসা রাখবেন তো।