করোনার নিয়মবিধি মেনে শ্রীলঙ্কায় ভোট, ফের ক্ষমতা পেতে পারেন রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কায় শুরু হয়ে গিয়েছে সংসদীয় নির্বাচন। বিশেষজ্ঞদের মতে অঙ্কের হিসেবে এগিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
গত এক বছরে দেশে যে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছিল, এই নির্বাচনের ফলে তা কাটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গোটা দেশে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ নাগরিক এ দিন ভোট দিচ্ছেন। ২২৫ টি সংসদীয় আসনের জন্য লড়াই করছেন ৭০টি দলের সাত হাজার ৪৫২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৩১৩ জন নির্দল প্রার্থীও আছেন। করোনাকালে এই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচন ঘিরে অতিরিক্ত উৎসাহ আছে। ব্যালটে ভোট হলেও প্রতিটি বুথে করোনাকালীন নিয়মবিধি পালন করা হচ্ছে।
এক বছর আগে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে।এসএলপিপি দল থেকে মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। এসএলপিপি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তাদের সরকার গড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন গোটাবায়া। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহিন্দা। গোটাবায়া সাময়িক সময়ের জন্য সংবিধান বাতিল করে দিয়েছিলেন। সে কারণেই মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
আজ, বুধবার শ্রীলঙ্কায় যে নির্বাচন শুরু হয়েছে, তাতে সংবিধান ফের কার্যকর হবে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। এই নির্বাচনে যে দল দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, সে দলই সরকার গঠন করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ভিতর রাজাপাকসের সরকার নিয়ে বহু সমালোচনা আছে। রয়েছে ক্ষোভ বিক্ষোভও। যে ভাবে রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করেছিলেন, তা নিয়েও বিতর্ক আছে। কিন্তু বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় এ বারের নির্বাচনেও রাজাপাকসে জয়ী হবেন বলে তাঁদের ধারণা। সমীক্ষাতেও তিনি এগিয়ে। বস্তুত, নির্বাচনে একদিকে রাজাপাকসের এসএলপিপি, অন্য দিকে বিরোধীরা। কিন্তু বিরোধীদের মধ্যে কোনও ঐক্য গড়ে ওঠেনি। মূল বিরোধী দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গিয়েছে। নতুন দলের নাম এসজেবি। দু’টি দলই আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সংখ্যালঘু তামিল এবং মুসলিম ভোট কোন দিকে যাবে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। গোটাবায়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এই দুই পক্ষের ভোটই গিয়েছিল রাজাপাকসেদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বছর ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় সংখ্যালঘু ভোটের একাংশ মাহিন্দা পেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনাকালে শ্রীলঙ্কারএই নির্বাচন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রথম ভোটে পুলিশের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে। গোটা দেশে প্রায় আট হাজার স্বাস্থ্যকর্মী বিভিন্ন বুথে ছড়িয়ে রয়েছেন । ৬৯ হাজার পুলিশ কর্মী ভোটকেন্দ্র পাহারার কাজে নিয়োজিত আছেন ।
এই মুহূর্তে করোনার কারণে পর্যটন শিল্প সম্পূর্ণ বসে গিয়েছে। তার উপর বিপুল দেনায় ভুগছে সরকার। যার একটা বড় অংশ চিনের ঋণ। একই সঙ্গে করোনাকালে একের পর এক বেসরকারি সংস্থা বন্ধ হচ্ছে। প্রায় তিন লাখ কর্মী এর ফলে কাজ হারিয়েছেন। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে লড়তে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। ফলে সব দিক থেকেই শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।

Previous articleরাম মন্দিরের ভূমিপুজো নিয়ে ভারতকে কটাক্ষ পাকিস্তানের
Next articleলকডাউন উপেক্ষা করে ডানকুনিতে রামপুজো বিজেপির